তৃণমূল পরিচালিত দাঁইহাট পুরসভার পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে ১১ জন পুর-প্রতিনিধির অনাস্থা আনা এবং দলীয় নির্দেশে তা প্রত্যাহার নিয়ে চর্চা চলছে শহরের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সেলুন, সর্বত্র। অনাস্থা প্রত্যাহারকারী তৃণমূলের প্রতিনিধিরা রাস্তায় না বেরোনোকে ‘লজ্জায় মুখ লুকানোর’ চেষ্টা বলে কটাক্ষও করতে শোনা যায় কাউকে কাউকে। তবে সব কিছু ছাপিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন, রাজনৈতিক অন্তর্কলহের ফল আর কত দিন ভুগবেন নাগরিকেরা।
আগামী মঙ্গলবার পুরবোর্ডের বৈঠক ডেকেছেন পুরপ্রধান প্রদীপ রায়। ‘বিদ্রোহী’ পুরপ্রতিনিধিরা সেই বৈঠকে হাজির থাকবেন কি না, তা নিয়েও জল্পনা চলছে। উপ-পুরপ্রধান অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দলের নির্দেশে আমরা অনাস্থা প্রত্যাহার করেছি। এখন সব কিছু ঠিক থাকলে বোর্ডের বৈঠকে যেতে আমাদের কোনও সমস্যা নেই।” পুরপ্রধানের প্রতিক্রিয়া, “ওঁরা ভুল বুঝতে পেরেছেন বলেই দলের নির্দেশে অনাস্থা প্রত্যাহার করেছেন। আগামী মঙ্গলবার পুরবোর্ডের বৈঠক ডাকা হয়েছে। চিঠি পাঠানোর পাশাপাশি আমি মোবাইলেও বলেছি। আশা করি প্রত্যেকেই আসবেন।” অনাস্থায় সই করা পুরপ্রতিনিধিদের বেশির ভাগেরই মোবাইল শনিবার বন্ধ ছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাসিন্দার মন্তব্য, ‘‘লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে। তাই হয়তো পথে বেরোতে কয়েক দিন সময় লাগবে।’’
শনিবার বেলায় ভাগীরথীর পাড়ে কয়েক জন বাসিন্দার আলোচনার বিষয় হিসেবে শোনা যায় ‘পুর-কোন্দল’। এক জনের দাবি, ‘‘অনাস্থার খবর চাউর হতেই হস্তক্ষেপ করেছিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই ‘বিদ্রোহী’ পুর-প্রতিনিধিরা রণে ভঙ্গ দিয়ে ঘরে ঢুকে পড়েছেন।’’ আর এক জনকে বলতে শোনা যায়, ‘‘অনাস্থা আনা ও প্রত্যাহারের নেপথ্যে রয়েছেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার ঘনিষ্ঠজন।’’ গঙ্গা রাস্তা মোড়ের বাসিন্দা এক ব্যবসায়ীর দাবি, “দেখে মনে হতে পারে, তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল মিটেছে। কিন্তু, আদৌও তা নয়। বিদ্রোহী পুর সদস্যদের প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। হুঙ্কার ছেড়ে পিছিয়ে এসে লজ্জায় পড়েছেন ওঁরা। বিদ্রোহীরা পুরবোর্ডের বৈঠকে হাজির হন কি না, সেটাই দেখার।”
দাঁইহাট পুর মার্কেটে চায়ের দোকানেও চর্চায় বিষয় ছিল পুরসভায় অচলাবস্থা। কয়েক জন বলেন, “বোঝাই যাচ্ছিল, এক নেতার মদতে অনাস্থা আনা হয়েছে। তাঁর হস্তক্ষেপেই তা প্রত্যাহার করা হবে। তৃণমূলের নাটক শহরের বাসিন্দারা ধরে ফেলেছেন। এ বার ওরা উন্নয়নের কাজে মন দিন, এটাই আমরা চাই।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)