তালিত রেলগেটে। নিজস্ব চিত্র
রেলগেট বন্ধ। তার তলা দিয়ে পরপর পার হয়ে চলেছেন শিশু কোলে মহিলা, বয়স্ক থেকে ছাত্রছাত্রীরা। বর্ধমান শহরের কাছে তালিত রেলগেটের এই ছবি বড় চেনা। রবিবার রাতে উত্তর ২৪ পরগণার খড়দহে বন্ধ লেভেল ক্রসিংয়ে দূরপাল্লা ট্রেনের সঙ্গে গাড়ির সংঘর্ষের পরেও তালিতের যে হুঁশ ফেরেনি, দেখা গেল সোমবার।
দিনের বেশির ভাগ সময় রেলগেটটি বন্ধ থাকে। প্রায় সময়েই দু’টি রেলগেটের মাঝে আটকে পড়ে গাড়ি, টোটো। বেশ কয়েকবার দুর্ঘটনা ঘটেছে। এমনকি রেলগেট বন্ধ থাকার পরেও যান চলাচল করার জন্য ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়েছে, এমনও দেখা গিয়েছে তালিতে। এ দিন বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, এক দল স্কুল ছাত্রী রেলগেটের নীচ দিয়ে পারাপার করছন। ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন মোটরবাইক আরোহী, সাইকেল নিয়ে মহিলারাও। কয়েক জন নাবালককেও সাইকেল নিয়ে রেলগেটের নীচে দিয়ে যাতায়াত করতে দেখা গিয়েছে। রেলগেট বন্ধ, ট্রেনের আসার শব্দ শোনা যাচ্ছে, তার পরেও ঝুঁকি নেওয়া কেন? এত তাড়া কিসের?
এক ছাত্রী বলে, “একবার রেলগেট পড়লে আধ ঘণ্টার আগে উঠবে না। রেলগেটের দু’দিকে রাস্তায় দেখুন কত গাড়ি। রেলগেট উঠে গেলে গাড়ির চাপে আমরা হেঁটে পারাপার করতেই পারব না। আরও অন্তত আধঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। ততক্ষণে আর এক বার গেট পড়ে যাবে।” স্থানীয় মহিলা নূরন্নেসা বিবিও বলেন, “এ ভাবেই দিনের পর দিন যাতায়াত করছি। ট্রেনের চেয়েও রেলগেট উঠে যাওয়ার পরে গাড়ির চাপে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে।”
কলকাতা থেকে শান্তিনিকেতন যাওয়ার অন্যতম রাস্তা বর্ধমান-সিউড়ি (জাতীয় সড়ক ২বি) রোডের উপরেই তালিত রেলগেট। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, দিনের বেশির ভাগ সময়েই লেভেল ক্রসিং বন্ধ থাকে। অফিসের সময়ে গাড়ির চাপে যাতায়াত করা যায় না। আর বিকেলের পরে লেভেল ক্রসিং খোলা পাওয়াটাই ভাগ্যের ব্যাপার! তালিতের উপর দিয়ে বর্ধমান-আসানসোল লাইনে রাজধানী, শতাব্দী, বন্দে ভারতের মতো গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন যাতায়াত করে। প্রচুর দূরপাল্লার বা লোকাল ট্রেনও রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, ওই রাস্তায় একবার রেলগেট পড়লেই যানজট হয়। জট কাটাতে কখনও কখনও চার-পাঁচ ঘণ্টা লেগে যায়।
স্থানীয় ও রেল সূত্রে জানা যায়, মাঝেমধ্যেই ট্রাক বা গাড়ির ধাক্কায় লেভেল ক্রসিংয়ের ‘হাইট বার’ ভেঙে পড়ে। গেটেও ভেঙেছে। স্থানীয় বাসিন্দা সাবির আলি জানান, বন্ধ লেভেল ক্রসিং পারাপারের সময় লাইনের উপরে ট্র্যাক্টর বিকল হয়ে গিয়েছে। দূরে ট্রেন দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে, এমনও ঘটেছে। তালিতের বাসিন্দা, বাঘার (২) পঞ্চায়েতের প্রধান রহমত আলি শেখ বলেন, “রেল কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় পঞ্চায়েত, প্রশাসন নিয়মিত প্রচার করে। কিন্তু সব সময় রেলগেট পড়ে থাকায় বিপদ জেনেও পারাপার করে সবাই। রেলগেট খোলার পরে গাড়ি চালকদের মধ্যে নিয়মিত অশান্তি আর এক মাথাব্যথা।’’
রেল সূত্রে জানা যায়, তালিতে রেল ওভারব্রিজ (আরওবি) তৈরির পরিকল্পনা ২০১৬ সালেই হয়েছে। ২০২১ সালের জুন মাসে উড়ালপুল তৈরির জন্য দরপত্র ডাকা হয়। বাজেট ছিল ১৪৫ কোটি টাকা। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ২৬১ কোটি টাকা। প্রকল্পের ৬৪% জমি রেলের হাতে তুলে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। বাকি জমি দেওয়ার প্রক্রিয়াও শেষ পর্যায়ে। বরাত পাওয়া সংস্থা শিবির করে প্রয়োজনীয় কাজ শুরু করে দিয়েছে। সাংসদ কীর্তি আজাদ রেল ও জেলা প্রশাসনকে নিয়ে বৈঠক করে দ্রুত কাজ শুরু করার কথা বলেছেন। রেলের দাবি, এ বছরের মধ্যে কাজের অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাবে। তবে উড়ালপুর তৈরি না হওয়া পর্যন্ত ঝুঁকির যাতায়াতই ভরসা, বিলক্ষণ জানেন স্থানীয়রা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy