Advertisement
E-Paper

গ্যাসের বায়োমেট্রিক নিয়ে নানা প্রশ্ন, চিন্তায় ডিলারেরা

ডিলারদের দাবি, গ্যাস সিলিন্ডার বুক করা, তোলা, বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ায় সরবরাহকারীরা প্রশিক্ষিত। বায়োমেট্রিকের ব্যাপারে তাঁদের এত তাড়াতাড়ি প্রশিক্ষণ দেওয়া মুশকিল হবে।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:২৯
Share
Save

উজ্জ্বলা যোজনা-সহ ভর্তুকিযোগ্য রান্নার গ্যাসের (এলপিজি) সব গ্রাহকের আধার যাচাই করতে তাঁদের বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র সরকার। তেল সংস্থাগুলির দাবি, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ করার কথা বলা হয়েছে। এত কম সময়ে বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের তথ্য যাচাই কী ভাবে হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে।

জানানো হয়েছে, সংস্থার কার্যালয়ে গিয়ে বা সিলিন্ডার বাহকেরা গ্রাহকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বায়োমেট্রিক করাবেন। ডিলারদের অনেকেরই দাবি, এমন কাজ করতে গিয়ে গ্রাহকদের যেমন হয়রানি হবে। তেমনি তাঁদেরও নানা সমস্যায় পড়তে হবে। তাঁরা জানান, বায়োমেট্রিক করাতে আঙুলের ছাপ বা মুখের ছবি নেওয়ার জন্য বিশেষ যন্ত্র কিনতে হচ্ছে তাঁদের। এক একটি যন্ত্র পিছু খরচ হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা। চাহিদা বাড়ায় এক সঙ্গে অনেক বায়োমেট্রিক করার যন্ত্র মিলছেও না। ডিলারদের সব থেকে বেশি ভাবাচ্ছে গ্রামে গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে বায়োমেট্রিক করার বিষয়টি।

পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নিমতলা টালিভাটা এলাকার এক গ্যাস ডিলার বাপি মজুমদার জানান, এখনও পুরোপুরি নির্দেশিকা হাতে এসে পৌঁছয়নি। গ্রাহকদের অনেকেই ভিন্‌ রাজ্যে থাকেন। তাঁদের নামে থাকা গ্যাস মা, বাবা বা পরিবারের কেউ ব্যবহার করেন। আবার অনেকে সকালে দূরে কাজে চলে যান। তাঁদেরও বাড়িতে পাওয়া কঠিন। আবার গ্রামাঞ্চলে বহু এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা দুর্বল। সেখানেও বায়োমেট্রিক সংযোগ করাতে সমস্যা হবে, অনুমান তাঁদের। আবার বার বার একই কাজের জন্য গ্রাহকদের বাড়ি গেলে তাঁরাও বিরক্তও হবেন।

ডিলারদের দাবি, গ্যাস সিলিন্ডার বুক করা, তোলা, বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ায় সরবরাহকারীরা প্রশিক্ষিত। বায়োমেট্রিকের ব্যাপারে তাঁদের এত তাড়াতাড়ি প্রশিক্ষণ দেওয়া মুশকিল হবে। অল্পশিক্ষিত অনেকে এ কাজ করেন। তাঁদের কাজে ভুলেরও সম্ভাবনা রয়েছে। আবার এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে নিয়ে যাওয়ার সময়ে যন্ত্র সুরক্ষিত রাখারও ব্যাপার আছে। আবার কার্যালয় থেকে বায়োমেট্রিক করা হলে গ্রাহকদের লম্বা লাইন পড়ে যাবে। তাঁদের পরিষেবা দিতেও প্রচুর লোক দরকার হবে। দ্রুত কাজ না হলে গ্রাহকেরা ক্ষোভ দেখাতে পারেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলেও তাঁদের আশঙ্কা।

কালনা শহরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস সংস্থার ডিলার সুমন সরকার বলেন, ‘‘গ্রামে, শহরে আমাদের কয়েক হাজার গ্রাহক রয়েছেন। গ্রামের ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক করার জন্য সিলিন্ডার সরবরাহকারীরা যাবেন। শহরে কার্যালয় থেকে বায়োমেট্রিক করার কথা ভাবা হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এখনও পর্যন্ত তিনটি যন্ত্র কিনতে পেরেছি ।আরও প্রয়োজন। এই ব্যবস্থা কার্যকর করতে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে চেষ্টার ত্রুটি রাখব না।’’

কালনা শহরের বাসিন্দা গোপাল সরকারের আশঙ্কা, ‘‘এমনিই ব্যাঙ্কে, অফিসে, ডাকঘরে গেলে লাইনে দাঁড়াতে হয় দীর্ঘ সময়। সরকারি কোনও শিবিরেও একই অভিজ্ঞতা হয়। এখানেও জানি না কতক্ষণ দাঁড়াতে হবে।’’ আবার লাইনে দাঁড়ানো নোটবন্দির সময়ের কথা মনে করাচ্ছে অনেককে। পূর্বস্থলীর ১ ব্লকের বাসিন্দা মায়া দাস বলেন, ‘‘ছেলের নামে গ্যাস। ছেলে মাস সাতেক আগে কেরল গিয়েছে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে। উপায় না থাকলে ডিলারের লোকজনেদের সঙ্গে কথা বলে ছেলেকে বাড়ি আসতে বলব।’’

কালনা ২ ব্লকের পূর্বসাহাপুর গ্রামের রেজুফা বিবির আশঙ্কা, ‘‘বায়োমেট্রিক না করালে রান্নার গ্যাসে ভর্তুকির টাকা পাওয়া যাবে না। তবে কর্মসূত্রে সকালে বেরিয়ে যাই। ডিলারের কার্যালয়ে গিয়ে যদি লিঙ্ক না থাকায় কাজ না হয় তাহলে হয়রানি বাড়বে। এ জন্য তো বার বার ছুটি
পাব না!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Biometric Kalna

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}