Advertisement
১৯ জানুয়ারি ২০২৫
তৃণমূলের মদত রয়েছে, অভিযোগ বিজেপির

পরপর কার্যালয় খুলছে সিপিএম

প্রশ্ন উঠছে, শাসকদলের নজর বিজেপির দিকে বলেই কি দীর্ঘ কয়েক বছর বন্ধ থাকা দফতর খোলা সম্ভব হচ্ছে, না কি পার্টি অফিস খুলতে তৃণমূলই মদত দিচ্ছে।

কান্দরায় খুলেছে সিপিএমের কার্যালয়। নিজস্ব চিত্র

কান্দরায় খুলেছে সিপিএমের কার্যালয়। নিজস্ব চিত্র

সৌমেন দত্ত ও প্রণব দেবনাথ
শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:১৩
Share: Save:

লোকসভা ভোটের পর থেকে ‘টক্কর’ বেড়েছে তৃণমূল বিজেপির। তার ফাঁক গলে জেলা জুড়ে বছরের পর বন্ধ থাকা একাধিক পার্টি অফিসের তালা খুলছে সিপিএম।

একসময় ‘হাতছাড়া’ বহু এলাকায় দলের কার্যালয়ের টেবিল, বেঞ্চের ধুলো ঝেড়ে বসতে দেখা যাচ্ছে সিপিএম কর্মীদের। নিয়মিত বৈঠকও করছেন তাঁরা। গত চার-পাঁচ মাসে রায়না, খণ্ডঘোষ, ভাতার, মেমারি, কেতুগ্রাম মিলে জেলায় ছোট-বড় মিলে ৫০টিরও বেশি কার্যালয় খোলা গিয়েছে, দাবি দলের একাংশের।

২০১১ সালের পর থেকে এই সব এলাকায় দলীয় দফতর খুলতে গেলে তৃণমূলের বাধা, সন্ত্রাসের অভিযোগ করতেন দলের কর্মীরা। প্রশ্ন উঠছে, শাসকদলের নজর বিজেপির দিকে বলেই কি দীর্ঘ কয়েক বছর বন্ধ থাকা দফতর খোলা সম্ভব হচ্ছে, না কি পার্টি অফিস খুলতে তৃণমূলই মদত দিচ্ছে। যদিও প্রশ্নগুলি পত্রপাঠ নস্যাৎ করে দিয়ে সিপিএমের পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকের দাবি, ‘‘নিজেদের মুরোদেই পার্টি অফিসগুলি খুলেছি। যেখানে আমরা পার্টি অফিসগুলি নিয়মিত খোলা রাখতে পারব, সেখানেই খোলা হয়েছে।’’

কেতুগ্রামের কান্দরায় সিপিএমের বন্ধ পার্টি অফিস খুলেছে সম্প্রতি। সেখানকার বাসিন্দাদের দাবি, ২০০৯ সাল থেকে দফায় দফায় দলের লোকাল কমিটির দফতরে তালা পড়েছিল। ২০১১ সালের পর থেকে সেই তালা কার্যত খোলেনি। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিশাল মিছিল করে তালা খোলা হলেও, পরের দিনই তা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে কান্দরা এলাকায় বিজেপির ভাল ফল হয়েছে। ২০টি বুথের মধ্যে ৫টি বুথে বিজেপি জিতেছে। ভোট পেয়েছে প্রায় ৪২ শতাংশ। সিপিএমের ভোট দাঁড়িয়েছে ৬.১ শতাংশ। তার পরেই বদলেছে ছবিটা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ জুলাই কান্দরা ও কেতুগ্রাম ২ ব্লকে বিক্ষোভ সমাবেশ ছিল বিজেপির। এই দিনই খোলে সিপিএমের কার্যালয়। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলের বাধায় দলের সমাবেশ করা যায়নি, কিন্তু সিপিএমের কর্মসূচি নির্বিঘ্নে হয়েছে। বিজেপির জেলা সাংগঠনিক সভাপতি (কাটোয়া) কৃষ্ণ ঘোষের দাবি, “এই ঘটনা প্রমাণ করছে সিপিএমের পার্টি অফিস খোলার পিছনে তৃণমূলের কতটা মদত রয়েছে। মদত না থাকলে জেলা জুড়ে একের পর এক পার্টি অফিস খুলতে পারত না সিপিএম।’’

বিজেপির উত্থানে তাঁদের যে সুবিধা হয়েছে মানছেন সিপিএমের কেতুগ্রাম ১ এরিয়া কমিটির সদস্য ফারুক মির্জা। তাঁর দাবি, ‘‘২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের সময় ভয়ে ভয়ে সাত দিনের জন্য কোনও রকমে অফিস খুলেছিলাম। তার পরে এত দিন টানা বন্ধ ছিল। কৌশলগত কারণেই তৃণমূল হয়তো আমাদের দলীয় দফতর খুলতে বাধা দেয়নি। এখন নিয়মিত ওই কার্যালয় খোলা হচ্ছে।’’ কেতুগ্রাম ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি তরুণ মুখোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, ‘‘কর্মী না থাকায় সিপিএম পার্টি অফিসটি বন্ধ করে দিয়েছিল। এখন আবার খুলছে। আমরা চাই সবাই নিজের মতো করে চলুক। বিজেপির এখানে কোনও অস্তিত্বই নেই।’’

কান্দরা ছাড়াও বর্ধমান শহরের সাতটি, রায়না-খণ্ডঘোষের ১০টি, মেমারি-জামালপুর ও ভাতার মিলিয়ে ন’টি, বর্ধমান গ্রামীণ ও গলসি এলাকায় পাঁচটি দলীয় দফতর খুলেছে সিপিএম। দলের নেতারা একান্তে মেনে নিচ্ছেন, লোকসভা ভোটের ফলের পরে অনেক জায়গাতেই তৃণমূল বিভিন্ন জনের মাধ্যমে দফতর খোলার বার্তা দিচ্ছে। পুলিশও সাহায্য করছে। অচিন্ত্যবাবু বলেন, “পরিবেশ ও পরিস্থিতির চাপে তৃণমূল নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে। আমাদের ভোট কমলেও কর্মী সমর্থকদের জোর কমেনি। তাঁরাই নিজেদের জোরে দফতরগুলি খুলেছেন।’’

তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথের দাবি, “আমরা কোনও দিন দলীয় দফতর খোলায় বাধা দিইনি। মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল বলে দফতরে তালা ঝুলেছিল। আবার মানুষের কাছে যেতে চাওয়ায় সেই তালা খুলতে পারছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

CPM TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy