Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
ধন্দ কারণ নিয়ে
Asansol

খাদান থেকে দুই কিশোরীর দেহ উদ্ধার

তদন্তকারীরা জানান, বুধবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ওই দুই কিশোরী মাঠে শৌচকর্ম করতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল।

ঘটনাস্থল: চলছে দেহ উদ্ধারের কাজ। নিজস্ব চিত্র।

ঘটনাস্থল: চলছে দেহ উদ্ধারের কাজ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২১ ০১:৪৬
Share: Save:

দু’জনের পোশাক পরস্পরের সঙ্গে গিঁট বাঁধা, হাতে হাত পেঁচানো। এমন অবস্থায় দুই কিশোরীর দেহ পরিত্যক্ত জল ভর্তি পাথর খাদান থেকে উদ্ধার করল পুলিশ ও বিপর্যয় ব্যবস্থাপন দফতর। বৃহস্পতিবার সকালে এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় কাল্লা লাগোয়া মাঝিপাড়ায়। আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ জানায়, মৃত নিশা যাদব (১৫) ও সিম্পি যাদব (১৭) নামে দুই কিশোরীই স্থানীয় বাসিন্দা। ঘটনার কারণ কী, রাত পর্যন্ত তা জানাতে পারেনি পুলিশ ও পরিবার।

তদন্তকারীরা জানান, বুধবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ওই দুই কিশোরী মাঠে শৌচকর্ম করতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। রাত হয়ে যাওয়ার পরেও তাদের সন্ধান না মেলায়, দু’টি পরিবারই থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে।

নিশার বাবা পেশায় দুধ ব্যবসায়ী বীরেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘মেয়ে বালিয়ায় দেশের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে। দেড় মাস আগে এখানে এসেছিল। বুধবার মেয়ে বাড়ি থেকে বেরনোর সময়ে আমি বাড়িতে ছিলাম না। স্ত্রীকে বলে ও বাইরে যায়।’’ বীরেন্দ্রবাবুর বাড়ি থেকে একশো মিটার দূরেই বাড়ি দুধ ব্যবসায়ী জনার্দন যাদবের। তাঁরই মেয়ে সিম্পি। জনার্দনবাবু পুলিশকে জানান, বুধবার সন্ধ্যায় নিশা তাঁর মেয়েকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়।

বীরেন্দ্রবাবু, জনার্দনবাবুরা জানান, বৃহস্পতিবার ভোর হতেই পড়শিদের সঙ্গে নিয়ে আশপাশের এলাকা ও জঙ্গলে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। এক সময়ে ওই খাদানের জলে, নিশার পোশাকের অংশ ভাসতে দেখা যায়। পুলিশে যোগাযোগ করেন পরিবারের লোকজন। তার পরেই উদ্ধার হয় দেহ দু’টি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, ওই দুই কিশোরী পরস্পর খুবই ভাল বন্ধু ছিল। নানা সময়ে, বিভিন্ন জায়গায় তাদের এক সঙ্গে ঘোরাফেরা করতেও দেখা যেত।

এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, ওই দুই দুধ বিক্রেতার বাড়ি থেকে অন্তত ৩০০ মিটার দূরে রয়েছে পরিত্যক্ত খাদানটি। চার দিকে ঘন জঙ্গল। পাহাড়ের মতো বিশাল উঁচু মাটি ও পাথরের ঢিবি। ঘটনাটি নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে বাসিন্দা ও তদন্তকারীদের মধ্যে। প্রথমত, স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাতে তো বটেই, সকালেও এলাকার বড় একটা কেউ ওই এলাকায় যান না। ভরসন্ধ্যায় ওই নির্জন এলাকায় দুই কিশোরী কেন গেল, না কি তাদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, উঠেছে সেই প্রশ্নও। দ্বিতীয়ত, পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’জনের বাড়িতেই পাকা শৌচাগার আছে। তবে ওই এলাকার লোকজনের অনেকেরই মাঠে শৌচকর্ম করার অভ্যাস আছে। কিন্তু ওই দুই কিশোরীর পরিবার-সহ এলাকাবাসীর কেউই ওই পরিত্যক্ত খাদানের আশপাশ মাড়ান না। বীরেন্দ্রবাবু, জনার্দনবাবুও বলেন, ‘‘কেন এই ঘটনা ঘটল বুঝতে পারছি না। বাড়িতে কারও সঙ্গে মনোমালিন্য হয়নি। এলাকাতেও আমাদের কোনও শত্রু নেই।’’

আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তা বলেন, ‘‘দেহ দু’টি উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসার পরে, মৃত্যুর কারণ বোঝা যাবে। আপাতত নানা সম্ভাবনার দিক খোলা রেখে, অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে তদন্ত চলছে।’’ পাশাপাশি, স্থানীয় প্রশাসন জানায়, খোলা জায়গায় শৌচকর্ম বন্ধের জন্য সচেতনতা প্রচার চালানো হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Asansol Corpse teenage girls
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE