করোনা-সচেতনতার বার্তা নিয়ে কাটোয়ার উদ্দেশে পাড়ি। নিজস্ব চিত্র
নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে মাস তিনেক আগে দিল্লি গিয়েছিলেন পাঁচ জন। মাসখানেক সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু ‘লকডাউন’ শুরু হতেই বন্ধ হয়ে যায় কাজ। কোনও রকমে মাস দেড়েক সেখানে কাটানোর পরে, তিনটি সাইকেল জোগাড় করে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন কাটোয়ার দু’জন ও মুর্শিদাবাদেরও তিন জন শ্রমিক। তবে শুধু বাড়ি ফেরা নয়, আসার পথে সাইকেলে প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে করোনা-সচেতনতার বার্তাও দিচ্ছেন তাঁরা।
বুধবার বিকেলে দিল্লি থেকে রওনা হয়েছেন কেতুগ্রামের নিরোলের বাসিন্দা নবনারায়ণ মণ্ডল, গোন্নাসেরান্দির অপূর্ব মণ্ডল, মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের রফিকুল শেখ ও সফিকুল শেখ এবং বড়ঞার আলামন শেখ। অপূর্ববাবুর বয়স বছর ষাটেক। বাকিরা ২৩-২৭ বছর বয়সী। ফোনে নবনারায়ণ জানান, শ্বশুর অপূর্ববাবু ও পূর্ব পরিচিত অন্য তিন জনকে নিয়ে এক ঠিকাদার সংস্থার অধীনে সেতু তৈরির কাজ করতে গিয়েছিলেন নয়াদিল্লিতে। ছোট একটি ঘরে এক সঙ্গে থাকতেন তাঁরা। এরই মধ্যে ‘লকডাউন’ শুরু হয়ে যাওয়ায় ‘ঘরবন্দি’ হয়ে পড়েন। সঙ্গে যা টাকা ছিল তা শেষ হয়ে যায় সপ্তাহখানেকের মধ্যেই। তার পরে মাঝে-মধ্যে অর্ধাহারেও কাটাতে হচ্ছিল বলে তাঁদের দাবি।
অপূর্ববাবুদের দাবি, শ্রমিকদের বাড়ি ফেরাতে ট্রেন চালু হলেও সেই ট্রেনে জায়গা পাওয়ার জন্য তাঁরা সময়ের মধ্যে আবেদন করতে পারেননি। তাই সাইকেলে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। গ্রাম থেকে বন্ধুরা তাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠালে ১৪ হাজার টাকা দিয়ে কিনে নেন তিনটি সাইকেল। তাতেই রওনা দিয়েছেন পাঁচ জন। পালা করে চালাচ্ছেন সাইকেল। তাঁরা জানান, বুধবার রাত ১০টা নাগাদ নয়ডা পৌঁছে ঘণ্টা দু’য়েক বিশ্রাম নেন। তার পরে সারা রাত সাইকেল চালিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে পৌঁছন আগ্রায়। সেখানে আবার খানিকক্ষণ বিরতি নিয়ে ফের চলা শুরু করেছেন।
দুই ভাই রফিকুল ও সফিকুল জানান, তাঁদের কাছে শ’চারেক টাকা রয়েছে। সঙ্গে জলের বোতল ও জামাকাপড়ের ব্যাগ রয়েছে। পথের পার্শবর্তী নানা গ্রামের মানুষজন খাবার দিয়ে সহযোগিতা করছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘সাইকেলের প্যাডেল ভেঙে গিয়েছিল। আগ্রার কাছে বিনা পয়সায় এক মিস্ত্রি তা ঠিক করে দিয়েছেন। আশা করছি, কয়েকদিনের মধ্যেই প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার পথ পেরিয়ে বাড়ি পৌঁছতে পারব।’’
সাইকেলের সামনে সচেতনতার বার্তা দেওয়া প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়েছেন রফিকুলেরা। তাতে করোনা থেকে রেহাই পেতে বাড়িতে থাকার আর্জি জানাচ্ছেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত প্রায় চারশো কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছেন বলেও তাঁদের দাবি। কেতুগ্রামের নিরোলের বাড়িতে বসে নবনারায়ণের মা মাধবী মণ্ডল বলেন, ‘‘ওরা বাড়ি ফেরার পথে করোনা নিয়ে প্রচার করছে জেনে ভাল লাগছে। দিন পনেরো আগে আমার ছোট ছেলেও অসম থেকে সাইকেলে ফিরেছে। আশা করি, ওরাও নির্বিঘ্নে এসে পৌঁছবে।’’
মহকুমাশাসক (কাটোয়া) প্রশান্তরাজ শুক্ল বলেন, ‘‘ওই শ্রমিকেরা সুস্থ ভাবে ফিরে আসুন, এই কামনা করি। তবে বাড়িতে ঢোকার আগে কাটোয়া হাসপাতালে এসে যেন স্বাস্থ্যপরীক্ষা করান এবং সরকারি নির্দেশ মেনে চলেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy