Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

ট্রেন না থামা নিয়ে বিতর্ক, যাত্রী-ক্ষোভ

রেল সূত্রের দাবি, এ ধরনের ট্রেনগুলি ছাড়ার পরে যে রাজ্যে সেটি যাচ্ছে, সেই রাজ্য সরকারের পরামর্শ মতো সর্বোচ্চ তিনটি স্টেশনে ট্রেন থামতে পারে।

আসানসোল স্টেশনে ক্ষুব্ধ যাত্রীদের বোঝাচ্ছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

আসানসোল স্টেশনে ক্ষুব্ধ যাত্রীদের বোঝাচ্ছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২০ ০০:৪৬
Share: Save:

দিল্লি-হাওড়াগামী ও বেঙ্গালুরু-নিউ জলপাইগুড়িগামী (এনজেপি) দু’টি বিশেষ ট্রেন বৃহস্পতিবার পশ্চিম বর্ধমান দিয়ে গিয়েছে। হাওড়াগামী ট্রেনের যাত্রীরা রেলের ব্যবস্থার প্রশংসা করলেও, অন্য ট্রেনের যাত্রীরা চূড়ান্ত অব্যবস্থার অভিযোগ করেছেন। এনজেপিগামী ট্রেনটি পুরুলিয়ায় না থামা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

পূর্ব রেলের মুখ্য জন-সংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বিষয়টি প্রসঙ্গে বলেন, “এনজেপিগামী ট্রেনটি থেকে কয়েকজন যাত্রী আসানসোল স্টেশনে নেমে পড়েন। নেমে পড়ার পরে, রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তারা যাত্রীদের বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করে।” যাত্রীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেননি রেল-কর্তারা।

রেল সূত্রের দাবি, এ ধরনের ট্রেনগুলি ছাড়ার পরে যে রাজ্যে সেটি যাচ্ছে, সেই রাজ্য সরকারের পরামর্শ মতো সর্বোচ্চ তিনটি স্টেশনে ট্রেন থামতে পারে। এনজেপিগামী ট্রেনটি প্রাথমিক ভাবে পুরুলিয়া পর্যন্ত আসার কথা থাকলেও, পরে তা পরিবর্তন হয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ট্রেনটির যাত্রী নামানোর জন্য পুরুলিয়া, আসানসোল, দুর্গাপুরে থামার কথা ছিল না। তবে আসানসোলে গার্ড বদল এবং দুর্গাপুরে ইঞ্জিনের অভিমুখ পরিবর্তনের জন্য সেটি থামে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেল-কর্তাদের একাংশের দাবি, ‘‘কোথাও একটা সমন্বয়ের অভাব হচ্ছে।’’

কিন্তু এ দিন আসানসোলে ৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মে এনজেপিগামী ট্রেনটি থামলে, যাত্রীদের একাংশ বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পুরুলিয়ার কয়েকজন যাত্রী অভিযোগ করেন, ট্রেনটি পুরুলিয়া স্টেশনে দাঁড়ানোর কথা থাকলেও, সেখানে থামেনি। পাশাপাশি, ভেল্লোর থেকে চিকিৎসা করিয়ে ফেরা শিলিগুড়ির বাসিন্দা সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক যাত্রীর অভিযোগ, “৯২০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ট্রেনে চেপেছি। শৌচাগার ও ট্রেনের কামরা আবর্জনায় ভর্তি। দূরত্ববিধি মানা হয়নি।”

শিলিগুড়ির বাসিন্দা প্রসূন দত্তের ক্ষোভ, “প্রায় ৬০ ঘণ্টা যাত্রা করে বিস্কুট আর কলা ছাড়া, আর কিছু জোটেনি। কামরায় ৮০ জন যাত্রী। অথচ, ৫০টি জলের বোতল দিয়ে ভাগ করে খেতে বলা হয়।”

বিক্ষোভ দেখে আরপিএফ-এর সিনিয়র সিকিওরিটি কমিশনার চন্দ্রমোহন মিশ্র এলে, তাঁর কাছেও ক্ষোভের কথা জানান যাত্রীরা। প্রায় ২০ মিনিট বিক্ষোভ চলার পরে, আরপিএফ আধিকারিকেরা বুঝিয়ে-সুঝিয়ে যাত্রীদের ট্রেনে চাপান।

ইতিমধ্যে ট্রেনটি দুর্গাপুরে থামলে সেখানেও বিভিন্ন জেলার যাত্রীরা স্টেশনে নেমে পড়ে সরব হন। পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটের শেখ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘পুরুলিয়া পর্যন্ত টিকিট ছিল। অথচ পুরুলিয়ায় ট্রেন দাঁড়াল না। এখন শুনছি, ট্রেন এনজেপি যাবে। অটিজ়ম আক্রান্ত ছেলেকে আর ট্রেনে রাখা যাচ্ছে না।’’ মল্লিকা কাঁড়ার নামে এক যাত্রীর অভিযোগ, “৯২০ টাকা দিয়ে পুরুলিয়া পর্যন্ত টিকিট দেওয়া হয়েছে। প্রতিবন্ধীকেও ছাড় দেওয়া হয়নি।’’

এই যাত্রীরা প্রত্যেকেই বাড়ি ফেরার দাবিতে অনড় থাকেন। দুর্গাপুরে ট্রেন থামার খবর না থাকলেও পরিস্থিতির কথা শুনে স্টেশনে আসেন মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) অনির্বাণ কোলে, এসিপি (কাঁকসা) শাশ্বতী শ্বেতা সামন্ত-সহ রাজ্য সরকারের নানা দফতরের আধিকারিক, কর্মীরা। যাত্রীদের টিফিন ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়। স্টেশনেই হয় স্বাস্থ্যপরীক্ষা।

মহকুমা প্রশাসন (দুর্গাপুর) জানায়, ট্রেন থেকে নেমে পড়া পশ্চিম ও পূর্ব বর্ধমান, নদিয়া, কলকাতা, পূর্ব মেদিনীপুর, হুগলি, ঝাড়গ্রাম, মুর্শিদাবাদ, হাওড়া, বাঁকুড়া, বীরভূম ও উত্তর ২৪ পরগনার মোট ৫৭ জন যাত্রীকে বাসে ও গাড়িতে করে বাড়ি পাঠানো হয়। পশ্চিম বর্ধমানের যাত্রীদের দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে লালারসের নমুনা সংগ্রহ করার পরে, বাড়ি পাঠানো হয়। মহকুমাশাসক জানান, পরীক্ষার রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত তাঁরা ‘হোম কোয়েরান্টিন’-এ থাকবেন।

তবে রেলের আসানসোল ডিভিশনের জন-সংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী বলেন, “ট্রেনের ভিতরে পরিষেবা দেওয়ার কথা আমাদের। দু’-একটি বিক্ষিপ্ত অভিযোগ এলেও, সব কিছুরই সুবন্দোবস্ত ছিল। আসানসোল স্টেশন থেকে যাত্রীদের ১,৫০০ প্যাকেট খাবার, পর্যাপ্ত জলের বোতল দেওয়া হয়।”

এ দিকে, সকাল সওয়া ১০টা নাগাদ আসানসোলের ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে এসে থামে দিল্লি থেকে হাওড়াগামী বিশেষ ট্রেনটি। সেখানে মোট ১২ জন যাত্রী নামেন। উপস্থিত ছিলেন রেলকর্তা ও আরপিএফের আধিকারিকেরা। পরিচ্ছন্নতা, করোনা-সতর্কতা মানা-সহ সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার জন্য রেলকে ধন্যবাদ জানান আলপনা অধিকারী, রাজকুমার ঘোষ-সহ অন্য যাত্রীরা। ওই ট্রেনে আসানসোল থেকে কুড়ি জন হাওড়ার উদ্দেশে রওনা হন। প্রত্যেকের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy