বর্ধমান স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র
লোকাল ট্রেনের চাকা গড়াতে শুরু করেছে রবিবারই। তবে সোমবার, সপ্তাহের প্রথম দিন ছিল করোনা মোকাবিলার ব্যবস্থাপনার পরীক্ষা। তাতে বেশির ভাগ জায়গাতেই পিছিয়ে পড়েছে রেল, পূর্ব বর্ধমানের নানা স্টেশনের ছবি বলছে সেই কথা। ট্রেন যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, সচেতনতা প্রচারে রেল কর্তৃপক্ষের ন্যূনতম উদ্যোগ চোখে পড়েনি। মাস্ক পরা বা ট্রেনের কামরায় ভিড় নিয়ন্ত্রণ নিয়েও কড়াকড়ি ছিল না।
বর্ধমান স্টেশনের টিকিট কাউন্টার থেকে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সকাল থেকেই অনিয়ন্ত্রিত ভিড় দেখা যায়। ‘লকডাউন’ উঠে যাওয়ার পরে যখন ট্রেন চলা শুরু হয় সেই সময় প্রতিটি কামরায় দু’টি আসনের মাঝে যাতে যাত্রীরা না বসেন, সেই ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিল রেল। এ বার সে সব উধাও! একটি কামরার সব আসন তো বটেই, ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে, দরজার কাছে বসেও যাত্রীরা গন্তব্যস্থলে গিয়েছেন। তার মধ্যে ‘নন-সাবার্বান’ এলাকায় ট্রেনে চাপতে গেলে ন্যূনতম ৩০ টাকা ভাড়া গুনতে হচ্ছে বলেও ক্ষোভ জানান যাত্রীদের একাংশ।
মানকর যাওয়ার জন্য আসানসোলের ট্রেনে চড়েছিলেন সন্দীপ সাহা। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘১০ টাকার বদলে ৩০ টাকা দিয়ে টিকিট কাটতে হল। কিছু না জানিয়ে কেন ভাড়া বাড়ানো হল বুঝতে পারছি না।’’ কুলটির শামিম শেখও বলেন, ‘‘নিয়মিত বর্ধমান শহরে আসি। ২৫ টাকার টিকিট ৫৫ টাকা দিয়ে কিনতে হল।’’ ব্যবসায়ী মহলেও এই নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে জানান, রানিগঞ্জের ব্যবসায়ী মিলন দত্ত। রামপুরহাট লাইন, কাটোয়া-আমোদপুর, কাটোয়া-আজিমগঞ্জ লাইনেও টিকিটের ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী বলেন, “রেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে নন সাবার্বান এলাকায় স্পেশাল ট্রেন চালাতে হচ্ছে। সে কারণে মেল বা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট ভাড়া ধার্য করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে উচ্চ মহলের কাছে বিস্তারিত জানতে চেয়েছি।’’
এ দিন বর্ধমান স্টেশনের নানা ট্রেনে ঠাসাঠাসি করে বসতে দেখা যায় যাত্রীদের। মাস্কও ছিল না অনেকের। শিশুদের নিয়ে যাতায়াতেও সচেতনতা দেখা যায়নি। প্রশ্ন করা হলে অনেকেই দাবি করেন, পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুদের তো মাস্ক পরায় নিষেধ রয়েছে! বড়দেরও মাস্ক থুতনিতে রেখে জানলার ধারে বসতে দেখা যায়। কাটোয়া, দাঁইহাটেও সকাল থেকেই স্টেশন, প্ল্যাটফর্মে ভিড় ছিল। বেলা গড়ালে ভিড় বাড়ে আরও। টিকিট কাউন্টারের কাছে, ট্রেনের কামরায় সচেতনতা প্রচারও করা হয়। তবে তাতে বেশির ভাগ যাত্রীই কান দেননি। জানা যায়, ট্রেন ছাড়ার সময়ে তিন জনের সিটে দু’পাশে দু’জন বসে যাত্রা শুরু হলেও পাটুলি ও পূর্বস্থলী যেতে না যেতেই ভিড় বেড়ে যায়। নবদ্বীপের পর থেকে কার্যত গাদাগাদি করে যেতে হয়, অভিযোগ যাত্রীদের। নিত্যযাত্রী অভিজিৎ সরকার বলেন, “লোকাল ট্রেন চলাচল শুরু করলে যে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না, এটা জানাই ছিল। বেশির ভাগ যাত্রীই মাস্ক ও অন্য স্বাস্থ্যবিধি মানতে নারাজ। ভয় লাগছে সংক্রমণ বেড়ে যাবে কি না!’’ নিমাই দত্ত নামে এক হকারও বলেন, “পেটের টানে ট্রেনে ব্যবসা করা ছাড়া উপায় নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করছি। কিন্তু অনেক যাত্রী মাস্ক পরছেন না।’’
৮টা-সাড়ে ৮টা থেকে অম্বিকা কালনা স্টেশনে টিকিট কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন পড়ে। মাস্ক না পরা, গাদাগাদি করে সিটে বসার ছবি দেখা যায় এখানেও। সকাল ৯টা নাগাদ হুগলির ত্রিবেণী এবং বাঁশবেড়িয়ার মাঝে ইসলামপাড়ার কাছে রেল অবরোধ শুরু হয়। ঘণ্টা দুয়েকের বেশি সময় ধরা চলা এই অবরোধের জেরে নবদ্বীপ, ধাত্রীগ্রাম, অম্বিকা কালনা-সহ বেশ কয়েকটি স্টেশনে দাঁড়িয়ে যায় লোকাল ট্রেন। এক একটি স্টেশনে দীর্ঘসময় ট্রেন দাঁড়ানোয় ভিড় বাড়ে আরও। অম্বিকা কালনা স্টেশনে ভিড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন উজ্জ্বল ঘোষ নামে দাঁইহাট এলাকার এক যাত্রী। তাঁকে ভর্তি করা হয় কালনা মহকুমা হাসপাতালে। অবরোধের কারণে সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতেও পারেননি অনেকে। সুব্রত হালদার নামে এক যুবক বলেন, ‘‘হোমগার্ড পদে ডানকুনিতে কাজ করি। ট্রেনেই যাতায়াত করি। দীর্ঘক্ষণ কালনায় ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকায় সময় নষ্ট হল।’’
একলব্যবাবুর দাবি, “কেউ ট্রেনে উঠলে তো নামিয়ে দেওয়া যায় না। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। সাধারণ মানুষকেও বুঝতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy