কেতুগ্রামের রতনপুরের রাস্তায় পুলিশের পাহারা। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
বোমা-গুলির আওয়াজ শুনতেই ‘অভ্যস্ত’ ছিল কেতুগ্রাম ১ ব্লকের বাদশাহী রোডের দু’ধারের গ্রামগুলি। নিয়মিত অশান্তির আবহাওয়াতেও এলাকার বাসিন্দাদের ‘গৃহবন্দি’ করতে পারেনি পুলিশ। তবে সোমবার রাতে বাদশাহী রোডের উপরে কেতুগ্রাম ১ ব্লকের রতনপুর পীরতলা এলাকার এক তরুণীর করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর ছড়াতেই দরজায় খিল এঁটেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বাদশাহী রোডের উপরে রতনপুর পীরতলা মোড়ে পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম, দুই জেলার মানুষেরই ভিড় থাকে। ‘লকডাউন’ পরেও তাঁদের যাতায়াতে খামতি দেখা যায়নি। মঙ্গলবার সকাল থেকে অবশ্য বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে এলাকা। পুরো গ্রামটিকেও বাঁশ দিয়ে ঘিরে ফেলেছে পুলিশ। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গণ্ডিবদ্ধ তিন কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ওই ব্লকের ১২টি গ্রামের সঙ্গে বীরভূমের নানুর থানার বেশ কয়েকটি গ্রামও ঢুকে পড়েছে। পড়শি ব্লক প্রশাসন ও থানাকেও জানানো হয়েছে বিষয়টি।
জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী বলেন, “আমাদের জেলার এলাকাটি ঘিরে রাখা হয়েছে। পাশের জেলায় কোনও রকম আসা-যাওয়ায় চলবে না।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় জানান, স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত দেওয়া রয়েছে। বীরভূম জেলা সেই তথ্য দেখে আশা করা যায়, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজারহাটের একটি হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্সের সহ-চালক ছিলেন আক্রান্ত তরুণী। কলকাতাতেই তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করানো হয়। কিন্তু রিপোর্ট আসার আগেই রবিবার বাড়ি ফিরে আসেন তিনি। সোমবার সন্ধ্যায় জানা যায়, তাঁর রিপোর্ট ‘পজ়িটিভ’। রাতেই ওই তরুণীর বাড়ি যান বিডিও, বিএমওএইচ (কেতুগ্রাম), আইসি (কেতুগ্রাম)। ওই তরুণীকে অ্যাম্বুল্যান্সে কাঁকসার বেসরকারি হাসপাতালে ও তাঁর চার পরিজনকে গাংপুরের কোভিড ১৯ হাসপাতালে পাঠানো হয়। মহকুমা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রান্ত তরুণীর পরোক্ষ সংস্পর্শে এসেছেন এমন ২৩ জনকে মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদের বাড়িতেই নিভৃতবাসে থাকার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
পুলিশ সূত্রের দাবি, বাম আমল থেকে একের পরে এক খুন, রেশন নিয়ে গণ্ডগোল, বোমা-গুলির লড়াইয়ের সাক্ষী বাদশাহী রোড। ওই রাস্তাতেই গুলিতে খুন হন কেতুগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি জাহের শেখ। এ দিন জেলা পর্যায়ের পুলিশ আধিকারিক থেকে কাটোয়া আদালতের এক আইনজীবী দাবি করেন, “গণ্ডগোল-অশান্তি থামাতে পুলিশ বারবার চেষ্টা করেছে। এলাকাবাসীকে গৃহবন্দি করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সফল হয়নি। করোনাভাইরাসের আক্রান্তের খবরের পরে ওই এলাকা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সুনসান হয়ে গিয়েছে।’’
পুলিশ জানিয়েছে, সচেতনতা প্রচারের সঙ্গে বাদশাহী রোডের একটা বড় অংশে পুলিশের টহল চলছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(গ্রামীণ) ধ্রুব দাস বলেন, “গণ্ডিবদ্ধ এলাকার বাসিন্দাদের ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে। ওই নম্বরে ফোন করলে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ করা হবে।’’
মেমারির পাহাড়হাটিতেও করোনা আক্রান্ত মহিলার খোঁজ মিলেছিল সোমবার। তবে কলকাতার ঢাকুরিয়ার একটি হাসপাতালেই ভর্তি আছেন তিনি। ফলে ওই এলাকা গণ্ডিবদ্ধ ঘোষণা করেনি প্রশাসন। এ দিন পুরো এলাকা ছিল সুনসান। বর্ধমান-কালনা রোডের উপরে হলেও লোক যাতায়াতও বিশেষ ছিল না। বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে এলাকা ঘিরে রাখে পুলিশ। প্রায় কুড়িটা দোকানও বন্ধ ছিল। স্থানীয় বাসিন্দা তুহিন রায় দাবি করেন, খেতমজুরেরাও কাজে যেতে ভয় পাচ্ছেন। টানা ২১ দিন যাতায়াত নিষিদ্ধ থাকলে কী ভাবে ধান কাটা হবে, তা চিন্তার। এলাকা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে বাড়ি উত্তম ভুজিয়ার। তাঁরও দাবি, কাছাকাছি তাজপুর, কানপুর,রকুলপুর গ্রামগুলি আতঙ্কে রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy