বাদ্যযন্ত্র মেরামতি। নিজস্ব চিত্র।
অনেকেই ভেবেছিলেন, এ বছর হয়তো অবস্থা জটিল হবে না। কিন্তু সব পরিকল্পনা ওলটপালট করে দিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করে দিয়েছে অতিমারি। সমস্যায় পড়েছেন নানা পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষজন। বাদ যাননি বাদ্যযন্ত্র প্রস্তুতকারকেরাও। পর পর দু’বছর ব্যবসা মার যাওয়ায় ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত শিল্পীরা।
কাঁকসা ব্লকে বেশ কয়েকটি পরিবার রয়েছে যাঁরা চামড়ার বাদ্যযন্ত্র তৈরির কাজের সঙ্গে যুক্ত। খোল, ঢাক-ঢোল-বহু চামড়ার বাদ্যযন্ত্র তাঁরা তৈরি করে থাকেন। বাদ্যযন্ত্র প্রস্তুতকারকেরা জানিয়েছন, গ্রামবাংলায় চৈত্র মাস থেকে গাজন, চব্বিশ প্রহর, মনসাপুজোর মতো নানা অনুষ্ঠান হয়। চলে আষাঢ় মাস পর্যন্ত। কাঁকসার বহু গ্রামেই গাজনের নামডাক রয়েছে। যেমন, রক্ষিতপুর, গোপালপুর। আবার অনেক গ্রামে গাজন না থাকলেও, চব্বিশ প্রহর নামসংকীর্তন হয়ে থাকে। বৈশাখ মাস থেকে সুন্দিয়ারা, ত্রিলোকচন্দ্রপুর, দোমড়া, তেলিপাড়ার মতো গ্রামগুলিতে চব্বিশপ্র হরের চল রয়েছে। এই সব অনুষ্ঠানের উপরে নির্ভরশীল খোল, ঢাক-ঢোল প্রস্তুতকারকেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, প্রতি বছর এই মরসুমে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার কাজ করেন। কিন্তু গত বছর থেকেই করোনার জেরে ব্যবসা কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে দাবি তাঁদের।
দোমড়ার প্রশান্ত রুইদাস জানান, কাঁকসা ছাড়াও, দুর্গাপুরের বেশ কিছু গ্রাম, আউশগ্রাম থেকে তাঁদের কাছে মানুষজন আসেন নানা বাদ্যযন্ত্র তৈরি করতে। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘গত বছর বেশির ভাগ গ্রামেই সব অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে। আশা ছিল, এ বার হয়তো এমনটা হবে না। কিন্তু মরসুম শুরু হওয়ার আগেই সব বন্ধ হয়ে গেল!’’ প্রশান্তবাবুর বাবা বদন রুইদাস দীর্ঘদিন ধরেই এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। তিনি বলেন, ‘‘গত বছর এই সময়ে একটি জিনিসও বিক্রি হয়নি। এ বছরও একই অবস্থা। এখন খেতমজুর হিসেবে খেটে, একশো দিনের কাজ করে সংসার চালাতে হচ্ছে। কত দিন এ ভাবে চলবে বুঝতে পারছি না!’’
বাদ্যযন্ত্র প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, নতুন খোল বিক্রির পাশাপাশি, পুরনো খোলও অনেকে সারাই করান। কাঁকসার আর এক শিল্পী গৌর রুইদাস জানান, একটি নতুন খোল বিক্রি হয় সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকায়। এক-এক মরসুমে ২০টিরও বেশি খোল বিক্রি হয়। কিন্তু দু’টি মরসুমে একটিও বিক্রি হয়নি। এলাকার শিল্পীরা জানিয়েছেন, এক বছর পুঁজি ভেঙে সংসার চলেছে। এখন অন্য পেশা খুঁজতে হচ্ছে তাঁদের। এই শিল্পীদের সমস্যার বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বিডিও (কাঁকসা) সুদীপ্ত ভট্টাচার্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy