মোমবাতি জ্বালিয়ে দেশের একতার বার্তা। রবিবার রাতে অণ্ডালের ময়রা কোলিয়ারি এলাকায়। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ
ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত সবে ৯টা। জেলার নানা প্রান্ত থেকে ভেসে এল শঙ্খধ্বনি, কাঁসরের শব্দ। সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রস্তাব মতো নানা বহুতল, বাড়ি, রাস্তা থেকে প্রদীপ, টর্চ, মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট, এমনকি মশালও জ্বাললেন জেলার নানা প্রান্তের বাসিন্দারা। তা দেখে কেউ কেউ বলছেন, এ যেন অকাল ‘দীপাবলি’র মাধ্যমে দেশের একতার বার্তা দেওয়া। কিন্তু পরিবেশকর্মীদের একাংশের মতে, এই গোটা পর্বে ‘চোনা’ হয়ে থাকল শব্দবাজির দাপট। চিন্তা বাড়াল দূষণের আশঙ্কাও।
৯টার আগে থেকেই আসানসোল মূল শহর, কুলটি, বার্নপুর, রানিগঞ্জ, নিয়ামতপুর-সহ আসানসোল মহকুমার নানা প্রান্তে দেখা যায় উৎসবের মেজাজ। আকাশের দখল নিতে শুরু করে ফানুসের বাহার আর আলোর রোশনাই। আগে থেকেই প্রস্তুতি চলা আসানসোল ও দুর্গাপুরের বেশ কিছু বহুতলের ছাদ সাজিয়ে দেওয়া হয় মোমবাতিতে। ততক্ষণে নিভিয়ে ফেলা হয় বহু বাড়ি, বহুতলের আলোও।
বেশ কিছু বহুতলের ব্যালকনি থেকে ‘সার্চলাইট’ ফেলতেও দেখা যায় অনেককে! ঘড়ির কাঁটা ৯টা ছুঁতেই অবশ্য শুরু হয় শব্দবাজির দাপট। উৎসাহে নানা ধ্বনিও দিতে শোনা যায় জনতাকে। একই চিত্র দেখা যায় দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার, বিধাননগর, বেনাচিতি-সহ নানা এলাকাতেও। শোনা যায় উলুধ্বনি, কাঁসর, ঘণ্টার শব্দ। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব ছিল, ন’মিনিট ধরে এই কাজ করা হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অন্তত ১৫-২০ মিনিট ধরে আকাশে হাউই ছোড়া হচ্ছে। অজস্র বাড়ির ছাদ তেকে জ্বালানো হয় তুবড়ি।
কেন এমনটা? দুর্গাপুর ও আসানসোলের দুই বাসিন্দা বলেন, ‘‘এখন দেশের সঙ্কটের সময়। তাই অকাল ‘দীপাবলি’র মধ্য দিয়ে আমরা পরস্পরের পাশে আছি, সেই বার্তা দিয়েছি।’’ তবে পাশাপাশি, পরিবেশকর্মীরা জেলার দূষণ নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আধিকারিকেরা জানান, ‘লকডাউন’-এর ফলে জেলার দূষণের মাত্রা অনেকটাই কমে গিয়েছিল। তাঁদের আশঙ্কা, এ দিনের ঘটনায় আসানসোল, দুর্গাপুর, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া-সহ সর্বত্রই দূষণের মাত্রা বাড়তে পারে। বেনাচিতির প্রবীণ বাসিন্দা শ্যামল রায় বলেন, ‘‘এই ক’দিন শিল্প-কারখানা সব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আকাশ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। এ দিন বাজি আর পটকার দাপটে দূষণ অনেকটাই বেড়ে গেল।’’ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুব্রত রায় বলেন, ‘‘মোমবাতি, প্রদীপ জ্বেলে সারা দেশের মানুষের মধ্যে একাত্মবোধ গড়ে তোলার ডাক দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু অবিবেচক কিছু মানুষজনের জন্য পুরো বিষয়টি বিরক্তিকর ঠেকল।’’
এই পরিস্থিতিতে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোরও। তৃণমূল নেতা উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী একতার বার্তা দিতে চেয়েছিলেন এই সঙ্কটের সময়ে, তা ভাল কথা। কিন্তু একতার বার্তা দিতে গিয়ে যে ভাবে দূষণ ছড়াল, তা অনভিপ্রেত। বিজেপি বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিও করতে চাইছে। দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবাকে এখন আরও গুরুত্ব দেওয়া দরকার।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই অবশ্য বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী দেশের একতার প্রতীক। মানুষ তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের পাশে আছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy