অন্য দিনের ব্যস্ত ২ নম্বর জাতীয় সড়ক রবিবার ফাঁকা। অণ্ডাল মোড়ে। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘোষণা করা রবিবারের ‘জনতা কার্ফু’-তে পুরোপুরি স্তব্ধ রইল জনজীবন। পথে কার্যত নামেননি জনসাধারণ। তবে শিল্প ক্ষেত্রে মিশ্র প্রভাব দেখা গিয়েছে। যদিও সবারই এক রা, করোনা-প্রতিরেধে এমন ‘কার্ফু’ অত্যন্ত জরুরি।
রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প ক্ষেত্র
দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট (ডিএসপি) সূত্রে জানা যায়, স্থায়ী ও ঠিকাকর্মীদের হাজিরা প্রায় স্বাভাবিক ছিল, ৮০-৮৫ শতাংশ। কারখানার মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বেদবন্ধু রায় বলেন, ‘‘কারখানার সব বিভাগে হাজিরার হার ছিল স্বাভাবিক। উৎপাদনও হয়েছে স্বাভাবিক হারেই।’’ একই পরিস্থিতি ছিল অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট (এএসপি) ও রাজ্য সরকারের সংস্থা দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেডেও (ডিপিএল)। তবে বার্নপুর ইস্কোয় ব্লাস্ট ফার্নেস গরম রাখা ও জরুরি বিভাগ চালু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় কর্মীরা ছাড়া অন্যদের কারখানায় আসতে নিষেধ করা হয়।
এ দিকে, ইসিএল-এর সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় জানান, রবিবার ২০টি খনি খোলা থাকে। সেগুলিতে ৯০ শতাংশ কর্মী-হাজিরা ছিল। তবে বিশেষ ভাবে নজরে রাখা হয়, কর্মীরা যাতে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখেন। জোর দেওয়া হয়েছিল যন্ত্রের সাহায্যে কয়লা উত্তোলনে। খনি-কার্যালয়গুলি এবং ডিসেরগড় সদর কার্যালয় পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে নীলাদ্রিবাবু জানান, ২২টি খোলামুখ খনিতে ঠিকাকর্মীদের অর্ধেকেরও বেশি কর্মী কাজে যোগ দেননি। ফলে, দৈনিক কয়লা উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা (দু’লক্ষ মেট্রিক টন) ছোঁয়া সম্ভব হয়নি।
রবিবার জরুরি বিভাগ ছাড়া উৎপাদন-সহ অন্য ক্ষেত্রের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছিল চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কসে (সিএলডব্লিউ), জানান সংস্থার জনসংযোগ আধিকারিক মন্তার সিংহ।
বেসরকারি শিল্প ক্ষেত্র
দুর্গাপুরের বিভিন্ন বেসরকারি কারখানায় হাজিরা সামান্য কম থাকলেও উৎপাদন স্বাভাবিক ছিল। শ্রমিকেরা জানান, সকালে কাজে যোগ দিতে অসুবিধা হতে পারে ভেবে রাতেই তাঁদের অনেককে কারখানায় আসতে বলা হয়। পাশাপাশি, কিছু কারখানায় রাতের ‘পালি’তে (শিফ্ট) কাজ করা কর্মীদের সকালে ছুটির পরেও বেরোতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। তবে রাতুড়িয়া-অঙ্গদপুর, বামুনাড়া, কমলপুর প্রভৃতি শিল্পতালুকের বিভিন্ন কারখানার আধিকারিকেরা অবশ্য বলেন, ‘‘কাউকে জোর করা হয়নি। কর্মীরা নিজেরাই কাজ করেছেন।’’ কর্মীদের একাংশ জানান, কাজে যোগ না দিলে তাঁদেরই আর্থিক ক্ষতি। তাই ‘জনতা কার্ফু’র দিনে ‘স্বেচ্ছাবন্দি’ থাকার ইচ্ছে থাকলেও তা আর হয়নি। পাশাপাশি, ‘জামুড়িয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্টিজ়’-এর সম্পাদক অজয় খেতান জানান, রানিগঞ্জ, পাণ্ডবেশ্বর, জামুড়িয়া ও অণ্ডাল ব্লকে বেসরকারি শিল্প ক্ষেত্রে হাজিরা ছিল ৬০ শতাংশের মতো। ফলে, উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে।
পরিবহণ ক্ষেত্র
পূর্ব ঘোষণা মতো এ দিন সকাল থেকেই বাস-সহ যাত্রিবাহী প্রায় সবরকম যান চলাচল বন্ধ ছিল জেলায়। আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায় জানান, আসানসোল মহকুমায় চারশোটি মিনিবাস চললেও এ দিন একটিও চলেনি। চলেনি বড় বাসও। আসানসোলের পথে দু’-একটি অটো-টোটো সকালে দেখা গেলেও যাত্রী না থাকায় সেগুলির বেলায় সেগুলির আর দেখা মেলেনি। দুর্গাপুরে ‘অভূতপূর্ব’ ফাঁকা রাস্তা দেখা গিয়েছে বলে দাবি অনেকেরই। দুর্গাপুরের গাঁধীমোড়ে জাতীয় সড়কে সকাল থেকে ট্র্যাফিক সামলানোর দায়িত্বে ছিলেন সিভিক ভলান্টিয়ার অমিত সরকার। তিনি বলেন, ‘‘সকাল থেকে তিন-চারটি ট্রাক, কয়েকটি গাড়ি ও মোটরবাইক চলেছে। সব সুনসান।’’ সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেল, বেসরকারি বাস চলেনি। দুর্গাপুর থেকে দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার কলকাতাগামী বাস ছাড়ে প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর। এ দিন প্রথমে প্রতি ঘণ্টায় একটি করে বাস চালানোর কথা ছিল। তবে যাত্রী না থাকায় বিরতি বাড়ে। এ দিন অটো-টোটোও চলেনি।
অসংগঠিত শিল্প
অসংগঠিত শিল্প ক্ষেত্রেও এ দিন পুরোপুরি বন্ধ করে রাখা হয়। শিল্পাঞ্চল ঘুরে দেখা গিয়েছে, প্রতিটি ইটভাটা, গ্যারাজ, করাতকল-সহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র শিল্প সংস্থায় কোনও কাজ হয়নি। কাজে বেরোননি দিনমজুরেরাও। ‘পশ্চিম বর্ধমান জেলা ডেকরেটর্স সমন্বয় সমিতি’ জানায়, এ দিন থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত কোনও কাজ করা হবে না।
হাটে-বাজারে
জেলার কোনও বাজারই এ দিন খোলেন। আসানসোল, বার্নপুর, বরাকর, নিয়ামতপুর বাজারে একটি দোকানও খোলা ছিল না। ফুটপাতের ধারে আনাজ বা মাছের বাজার বসতেও দেখা যায়নি। তবে তার জন্য আর্থিক ক্ষতি সে ভাবে হয়নি বলে ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি। রানিগঞ্জের মাছের আড়তদার পূর্ণচন্দ্র ধীবর বলেন, ‘‘শনিবারই রবিবারের বাজার করেছেন বেশির ভাগ ক্রেতা। ফলে এ দিন দোকান না খোলায় ক্রেতা, বিক্রেতা, কারও তেমন অসুবিধা হয়নি।’’ সুনসান ছিল দুর্গাপুরের মূল পাইকারি বাজার সেন মার্কেটও। তবে খোলা ছিল মুরগি ও খাসির মাংসের দোকান। এ ছাড়া, মামরা বাজারে একটি দোকানও খোলেনি। সুনসান ছিল বেনাচিতির পুরো নাচন রোডও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy