প্রতীকী ছবি
দুপুর ১২টা, শুক্রবার। আসানসোলের রাহালেন দুর্গামন্দির লাগোয়া একটি পাইকারি ওষুধের দোকানে ক্রেতার থিকথিকে ভিড়। প্রায় সবারই চাহিদা, ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার’। দোকানদার জানালেন, তা নেই। আসানসোলের পাশাপাশি, দুর্গাপুর, জামুড়িয়া-সহ জেলার নানা প্রান্তেই এই ছবি।
জেলার অন্যতম বড় পাইকারি ওষুধের বাজার রাহালেনে। সেখানে ভিন্-রাজ্য, ভিন্-জেলার ক্রেতারা আসেন। কিন্তু সৌমেন রায়-সহ একাধিক ওষুধ ব্যবসায়ী জানান, করোনাভাইরাস পরবর্তী পরিস্থিতিতে গত এক সপ্তাহ ধরে বাজারে নেই স্যানিটাইজ়ার। চিত্তরঞ্জনের বাসিন্দা গুরমিত সিংহের আক্ষেপ, ‘‘কোথাও ওষুধ না মিললেও এখানে সব পাওয়া যায়। কিন্তু রাহালেনের দোকানেও স্যানিটাইজ়ার পাইনি। শেষমেশ আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল কিনেছি।’’ ক্রেতাদের একাংশের আবার অভিযোগ, এই বাজারে ‘স্যানিটাইজ়ার’ নিয়ে কালোবাজারি শুরু হয়েছে।
স্যানিটাইজ়ার-আকালের প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতরগুলিতেও। বুধবার পর্যন্তও সমস্ত প্রশাসনিক দফতরে ঢোকার আগে প্রত্যেককে কয়েক ফোঁটা হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার দেওয়া হচ্ছিল। শুক্রবার সেই জায়গায় মিলছে ‘হ্যান্ড ওয়াশ’।
আসানসোলের মতোই ‘স্যানিটাইজ়ার’-এর আকাল দুর্গাপুর, অণ্ডাল শহর, উখড়া বাজার, পাণ্ডবেশ্বরেও। দোকানে ‘অর্ডার’ দিয়েও গত চার-পাঁচ দিন ‘স্যানিটাইজ়ার’ মিলছে না বলে জানান দুর্গাপুরবাসী। তবে তাঁদের দাবি, দু’-একটি দোকান পরিচিত ক্রেতাদের একটু বেশি দাম দিয়ে ‘গোপনে’ ‘স্যানিটাইজ়ার’ বিক্রি করছে। বেনাচিতির একটি স্টেশনারি ও মুদিখানার দোকানের মালিককে দেখা গেল, টেবিলের তলা দিয়ে এক পরিচিত ক্রেতাকে ‘স্যানিটাইজ়ার’ দিতে। দাম বেশি নেননি দাবি করে দোকানদার বলেন, ‘‘চরম আকাল। এই গোপনীয়তার কারণ, আরও ক্রেতা এলে দিতে পারব না।’’ বেনাচিতির একটি দোকানে ‘স্যানিটাইজ়ার’ কিনতে এসেছিলেন স্কুল শিক্ষিকা শাশ্বতী দত্ত। ওষুধের দোকান মালিক প্রলয়চাঁদ দত্ত তাঁকে জানান, পাড়ার ভিতরের কোনও দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখা যেতে পারে।
পাণ্ডবেশ্বর গ্রামের দীপক পাল জানান, গত দশ দিন ‘স্যানিটাইজ়ার’ মিলছে না। জোগানের অভাবেই এই পরিস্থিতি, দাবি ‘পাণ্ডবেশ্বর চেম্বার অব কমার্স’-এর সম্পাদক শ্যামাপদ ভট্টাচার্যের। উখড়াতে তা মিলছে না এক সপ্তাহ ধরে, জানান ‘উখড়া চেম্বার অব কমার্স’-এর কার্যকরী সভাপতি মহাদেব দত্ত। একই হাল জামুড়িয়াতেও। রানিগঞ্জে ‘স্যানিটাইজ়ার’ মিললেও তা নির্দিষ্ট দামের তুলনায় কুড়ি টাকা বেশি দরে কিনতে হচ্ছে বলে দাবি ‘রানিগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস’-এর সভাপতি সন্দীপ ভালোটিয়ার।
তবে কালোবাজারির অভিযোগ প্রসঙ্গে বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অমিত রায় বলেন, ‘‘প্রত্যেক দোকানদারকে কড়া ভাষায় জানানো হয়েছে চড়া দামে স্যানিটাইজ়ার বিক্রি করলে আইনি পদক্ষেপ করা হবে।’’ আকাল মেটানোর প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) শুভেন্দু বসু বলেন, ‘‘স্থানীয় ভাবে কিছু সংস্থাকে দিয়ে স্যানিটাইজ়ার তৈরি করানো যায় কি না, সে বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।’’ জেলা প্রশাসন জানায়, ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার’ ও ‘মাস্ক’ বানানোর জন্য বিভিন্ন স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাসের পরামর্শ, ‘‘স্যানিটাইজ়ার না পেলে ক্ষতি নেই। অ্যালকোহল বা সাবান দিয়ে ঘনঘন হাত ধুলেই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy