বড়শুলের গ্রামে ফিরল মৃত সফিক কাজির দেহ। ছবি: জয়ন্ত বিশ্বাস
ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনায় আরও চার জনের মৃত্যুর খবর এল পূর্ব বর্ধমানে। মন্তেশ্বরের সরিফুল শেখ (৩০) ও পাতু শেখ, মঙ্গলকোটের আরমান শেখ (৩৬) এবং পূর্বস্থলীর নিমদলের মঞ্জুর আলি মণ্ডল (৩১) মৃত্যু হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। সরিফুল মন্তেশ্বরের মামুদপুর ১ পঞ্চায়েতের রাইগ্রাম এবং পাতু বামুনপাড়া পঞ্চায়েতের তেঁতুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা। আরমানের বাড়ি মঙ্গলকোটের দেউলিয়া গ্রামে। শুক্রবার সন্ধ্যায় দুর্ঘটনার পর থেকে তাঁদের খোঁজ পাননি পরিজনেরা। রবিবার দুঃসংবাদ পান তাঁরা।
বাবা, মা, স্ত্রী এবং আট বছরের মেয়ে ও ছয় বছরের ছেলেকে নিয়ে সরিফুলের সংসার। বাবা সারাফত শেখ জানান, শ্যালিকার বিয়ে উপলক্ষে সাত দিন ছুটি নিয়ে কেরল থেকে বাড়ি আসেন ছেলে। শুক্রবার ফিরছিলেন। স্ত্রী সন্ধ্যা বিবি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘আরও দু’টো দিন থেকে যাওয়ার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু কথা রাখল না।’’
তেঁতুলিয়া গ্রামের পূর্বপাড়ার পাতু শেখ প্রায় কুড়ি বছর ধরে কেরলে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতেন বলে পরিবার জানায়। ছেলে শাহরুখ এবং আলমগীরও কাজ করেন। দুর্ঘটনার সময়ে তাঁরা কেরলেই ছিলেন। পাতু নানা কাজে কিছু দিনের জন্য বাড়ি এসেছিলেন। স্ত্রী জরিনা বিবি জানান, স্বামী-সন্তানেরা সবাই ভিন্ রাজ্যে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে মানুষটা চলে যাবে ভাবিনি!’’
মঙ্গলকোটের আরমানও কয়েক বছর ধরে কেরলে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। মাস দুয়েক আগে বাড়ি এসে জমে থাকা কিছু কাজ করেন। তাঁর দুই নাবালক ছেলে রয়েছে। আরমানের আত্মীয় রহিম শেখের অভিযোগ, “আমরা দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বার বার ফোন করেও কোনও উত্তর পাইনি। দু’জনকে সঙ্গে নিয়ে পর দিন বালেশ্বর যাই। রেলের তরফে কোনও সাহায্য পাইনি। স্থানীয় সমাজকর্মী ও পুলিশের সহযোগিতায় দেহ শনাক্ত করি। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করতে। ২৫ হাজার টাকা ভাড়া চাইছিল। শেষে ২০ হাজার টাকায় রাজি হয়। কিন্তু হাতে ছিল মাত্র ৭ হাজার টাকা। গ্রামে বন্ধুদের ফোন করে জানাই।’’ স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাসিন্দারা চাঁদা তুলে অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়া মেটান। সেটিতেই আরমানের স্ত্রী মমতাজ বিবি কিছু নথিপত্র নিয়ে ফের বালেশ্বর গিয়েছেন।
পূর্বস্থলীর মঞ্জুর আলি মণ্ডলের খোঁজ মিলছিল না দীর্ঘক্ষণ। রাজমিস্ত্রির কাজে গ্রামের তিন জন রওনা হন। তাঁদের মধ্যে বাপি পণ্ডিতের মৃত্যুর খবর মেলে শনিবার। এক জন আহত হন। মঞ্জুরের বাবা আনজার আলি মণ্ডল জানান, তাঁরা দ্রুত দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে হাসপাতাল-সহ বিভিন্ন জায়গা খুঁজেও ছেলের খোঁজ না পেয়ে রবিবার ভোরে বাড়ি ফেরেন। পরিবারের কয়েক জন মঞ্জুরের খোঁজে ওড়িশা যান। বিডিও সৌমিক বাগচী জানান, ভুবনেশ্বর এমস-এ মঞ্জুরের দেহ মিলেছে। পূর্বস্থলী উত্তরের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় জানান, আজ, সোমবার দেহ আনার চেষ্টা হচ্ছে।
কাটোয়ার কৈথন গ্রামের বাসিন্দা মৃত সাদ্দাম হোসেন শেখের দেহ এ দিন গ্রামে ফিরেছে। তাঁর ভাইপো নজরুল শেখ বলেন, ‘‘দেহ আনতেই ২০ হাজার টাকা অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া লেগেছে। ঘরে কোনও টাকা নেই। তাই বাধ্য হয়ে গয়না বন্ধক রেখে ভাড়া মিটিয়েছি।’’ মহকুমাশাসক (কাটোয়া) অর্চনা পন্ধরিনাথ ওয়াংখেড়ে বলেন, ‘‘দু’জনের দেহ কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ময়না-তদন্ত হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি নজরে রাখছি।’’
বড়শুলের কুমিরকোলার বাসিন্দা সফিক কাজির দেহ রবিবার ভোরে বাড়িতে আনা হয়। বর্ধমান উত্তরের বিধায়ক নিশীথ মালিক, জেলা পরিষদ কর্মাধ্যক্ষ বাগবুল ইসলাম, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অরুণ গোলদারেরা বাড়িতে যান। মৃতের দাদা বাবু কাজির অভিযোগ, ‘‘দুর্ঘটনার জায়গায় স্কুলঘরে সার দিয়ে রাখা দেহের মধ্যে খুঁজতে হচ্ছে পরিজনকে। স্কুলে থাকা দেহগুলির মধ্যে না পেয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরের হাসপাতালে গিয়ে খুঁজি। শেষে এক আধিকারিকের ফোনে ছবি দেখে ভাইকে চিনতে পেরে মর্গে গিয়ে ভাইয়ের দেহ শনাক্ত করি।’’ এ দিন প্রশাসনের আধিকারিকেরা সফিকের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সাহায্য তুলে দেন। মহকুমাশাসক (বর্ধমান উত্তর) তীর্থঙ্কর বিশ্বাস বলেন, ‘‘পরিবারটিকে প্রশাসনের তরফে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy