Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Heavy Rainfall

Flood: জল নামলেও সব হারিয়ে হাহাকার দুর্গতদের

বেশ কিছু ক্ষেত্রে পানীয় জলের সংযোগ নিয়েও সমস্যা দেখা দিয়েছে। রাত পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, জেলায় পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ভাঙা পথে: আসানসোল-দোমোহনি রাস্তায় নামল ধস। কাল্লা সেতু লাগোয়া এলাকায়।

ভাঙা পথে: আসানসোল-দোমোহনি রাস্তায় নামল ধস। কাল্লা সেতু লাগোয়া এলাকায়। ছবি: পাপন চৌধুরী।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৩০
Share: Save:

জল নেমেছে। কিন্তু নাগরিক-যন্ত্রণা তেমন কমেনি। শুক্রবার পশ্চিম বর্ধমানের নানা প্রান্তে এমনই ছবি দেখা গিয়েছে। আসানসোলের রেলপাড় পরিদর্শন করেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী জাভেদ খান এবং মলয় ঘটক। ব্যাপক প্রভাব পড়েছে রাস্তাঘাটে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে পানীয় জলের সংযোগ নিয়েও সমস্যা দেখা দিয়েছে। রাত পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, জেলায় পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ভোগান্তি বাসিন্দাদের

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোলের রেলপাড়ের পাঁচটি ওয়ার্ড সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত। শতাধিক দোকান, দু’শোটিরও বেশি বাড়ি জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা কশাইমহল্লার বাসিন্দা নওশাদ আনোয়ারের সঙ্গে। তিনি বলেন, “জলে সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” “কিছুই বেঁচে নেই”, গাড়ুইয়ের পাড়ে, জলমগ্ন বাড়িতে ঢুকে প্রতিক্রিয়া কামরুদ্দিন শেখের। এ দিকে, বাড়ির ছাদের টালি ভেঙে গিয়েছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা সাহাবুদ্দিন। চাল ও গমের প্রায় চারশোটি বস্তা জলে ভিজে গিয়েছে বলে জানান স্থানীয় রেশন দোকানের মালিক সাকিল আনোয়ার।

এ দিকে, কাঁকসায় জল নামলেও সাতকাহনিয়া, ত‍লবাহারি, সিলামপুরের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে। এলাকার ১৫টি মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে শুক্রবার থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, জানান বিডিও (কাঁকসা) সুদীপ্ত ভট্টাচার্য।

পথে সমস্যা

রেল সূত্রে জানা যায়, চিত্তরঞ্জনে অজয় নদের উপরে থাকা সিধো-কানহো সেতুর ছ’নম্বর স্তম্ভটি বসে গিয়েছে কিছুটা। সেতুর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন রেলকর্তারা। চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কসের জনসংযোগ আধিকারিক চিত্রসেন মণ্ডল জানান, অনির্দিষ্টকালের জন্য সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া, জামুড়িয়ার বাইপাস রাস্তার একাংশ এবং জামুড়িয়া-বীরকুলটি রাস্তায় বীরকুলটির কাছে একটি সেতুর সংযোগকারী রাস্তা ভেঙে যাওয়ার কারণে বিপাকে পড়েছেন বাসিন্দারা।

জল কোথায়’

জলমগ্ন হয়েছিল জেলা। তার মধ্যে দাঁড়িয়েও এ দিন শোনা গিয়েছে পানীয় জলের জন্য আর্তি। রানিগঞ্জের কাঁকরডাঙায় পুরসভার দামালিয়া প্রকল্পের তিনটি পাইপলাইন ভেসে যাওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকায় জল সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়েছে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে, জানান পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার ইন্দ্রজিৎ কোনার। তবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। এ দিকে, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সহকারী বাস্তুকার সুব্রত রায় জানান, দামোদর এবং অজয়ে যথাক্রমে আটটি করে জলপ্রকল্প রয়েছে। বৃহস্পতিবার সব ক’টি প্রকল্পের জলাধারই ডুবে গিয়েছিল। এর ফলে, জামুড়িয়া, পাণ্ডবেশ্বর, অণ্ডালের বিস্তীর্ণ এলাকায় জল-সরবরাহ হচ্ছে না বলে জানা গিয়েছে। দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হচ্ছে বলে জানান সুব্রত।

এ দিকে, আসানসোলের রেলপাড়ে দেখা গিয়েছে, বহু দূর থেকে জল আনছেন বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দা সওকত আলম বলেন, “বহু বার বলার পরেও পুরসভা জলের গাড়ি পাঠায়নি।” পানীয় জলের দাবিতে রেলপাড়ের কসাইমহল্লা ও জাহাঙ্গিরিমহল্লায় বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসীর একাংশ।

প্রশাসনের ব্যবস্থা

এলাকায় পরিদর্শনে এসে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ বলেন, “ক্ষতির হিসাব করা হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী, পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করা হবে।” মন্ত্রী মলয় জানান, বিপর্যয় মোকাবিলা দল ও সেনার চেষ্টায় উদ্ধার কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। তাঁর সংযোজন: “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বার বার এলাকার পরিস্থিতির খোঁজ নিয়েছেন।” পাশাপাশি, কাল্লা-দোমোহনি রোডের সেতু লাগোয়া রাস্তাটি আজ, শনিবারের মধ্যে মেরামত হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পূর্ত দফতরের এগজ়িউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কৌশিক কর্মকার।

রেলপাড়ে জলের গাড়ি না পাঠানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে আসানসোলের পুর-প্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, অতি বর্ষণের কারণে সমস্যা হয়েছে। তবে ওই এলাকায় জলের ট্যাঙ্কার পাঠানো হচ্ছে। পাশাপাশি, রেলপাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন বলে জানা গিয়েছে। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার সুমন মাজি জানান, অতিবর্ষণের জন্য সমস্যা হয়েছে। কয়েক হাজার উপভোক্তা সমস্যায় পড়েছেন। যুদ্ধকালীন তৎপরতা সঙ্গে কাজ চলছে। দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। আসানসোলের পুর-প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দিব্যেন্দু ভগত জানান, জামুড়িয়া বাইপাসে ভেঙে যাওয়া অংশে কালভার্ট তৈরি করে রাস্তাটির সংস্কার করা হবে। পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ তাপস চক্রবর্তী জানান, শনিবার থেকে বীরকুলটির সংযোগকারী রাস্তা সংস্কার করার কাজ শুরু হবে।

এ দিকে, জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সামগ্রিক ভাবে জেলায় লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। ১৫ হাজার বাসিন্দাকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে আসানসোল পুর-এলাকা থেকেই ১৩ হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। এক হাজারের বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। মারা গিয়েছে বেশ কিছু গবাদি পশু। জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) এস অরুণ প্রসাদ বলেন, “শুক্রবার পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Heavy Rainfall flood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy