প্রতীকী ছবি।
করোনা-আবহের মধ্যেই নলকূপের জল নিয়ে নতুন চিন্তা তৈরি হল পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের। কাটোয়া ১ ব্লকে একটি ও কাটোয়া ২ ব্লকে পাঁচটি নলকূপে নতুন করে আর্সেনিকের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর (পিএইচই)। জেলার বেশিরভাগ নলকূপের জল খাওয়ার ‘উপযুক্ত’ নয়, ওই দফতরের সমীক্ষা রিপোর্টে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মাধ্যক্ষ বাগবুল ইসলাম বলেন, ‘‘লকডাউনের মধ্যেও দফতরের কর্মীরা সমীক্ষা রিপোর্ট তৈরি করেছেন। সেখানে এই বিষয়গুলি উঠে এসেছে। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বৈঠকে বিশদে আলোচনা হয়েছে।’’ জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ‘মিশন নির্মল বাংলা’ প্রকল্প থেকে নলকূপের চাতালগুলি সংস্কার করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে মাটির তলায় জল পাঠানোরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, জেলায় ২,০৬৫টি নলকূপের জলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫১৪টি নলকূপের চাতাল ভাঙা রয়েছে।
পিএইচই-র এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সোমনাথ কুণ্ডু বলেন, ‘‘এখন নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সে জন্য নমুনা সংগ্রহ বাড়ছে। রিপোর্টে তার প্রতিফলন ঘটছে।’’ দফতর সূত্রে জানা যায়, মে মাস জুড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় নলকূপের জল পরীক্ষা করা হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, যত নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল, তার মধ্যে ৫৫৮টি নলকূপে ব্যাকটিরিয়ার সন্ধান মিলেছে। ওই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, খণ্ডঘোষ ব্লকে ১৩৫টি নলকূপের নমুনা নেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে ৯১টিতে ক্ষতিকারক ব্যাকটিরিয়া মিলেছে। কাটোয়া ১ ব্লকে ক্ষতিকারক ব্যাকটিরিয়া মিলেছে ৬২টি নলকূপে। কাটোয়া ২ ব্লকে ৬০টি নলকূপের নমুনা সংগ্রহ হয়েছিল। তার মধ্যে ৫০ শতাংশে ক্ষতিকারক ব্যাকটিরিয়া পাওয়া গিয়েছে।
নলকূপের সমীক্ষায়
• সংগৃহীত নমুনা: ২,০৬৫টি।
• খুব কম ঝুঁকিপূর্ণ: ১,০৩৬টি।
• ঝুঁকিপূর্ণ: ৫৫৪টি।
• বেশি ঝুঁকিপূর্ণ: ৪৪০টি।
• খুব বেশি ঝুঁকিপূর্ণ: ৩৫টি।
(সূত্র: জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর)
দফতরের ‘জনস্বাস্থ্য রিপোর্ট’ (স্যানিটারি সার্ভে) অনুযায়ী, কাটোয়া ১, পূর্বস্থলী ২, মেমারি ১, কেতুগ্রাম ১, কেতুগ্রাম ২, জামালপুর ব্লকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে এমন ৫০ শতাংশ নলকূপের জল পান করা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’। খণ্ডঘোষ, আউশগ্রাম ২, রায়না ২, গলসি ১, পূর্বস্থলী ১, মেমারি ২ ব্লকে নুমনা সংগ্রহের অন্তত ৭০ শতাংশ নলকূপের জল পান ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে জানানো হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, যে ২,০৬৫টি নলকূপ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, তার মধ্যে ‘খুবই কম ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে ১,০৩৬টি নলকূপকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে ৫৫৪টি, ‘বেশি ঝুঁকিপূর্ণ’ ৪৪০টি ও ‘খুব বেশি ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে ৩৫টি নলকূপকে চিহ্নিত করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে জানা যায়, ‘স্যানিটারি সার্ভে’তে নলকূপের কাছে নর্দমা আছে কি না, আশপাশে খোলা জায়গায় শৌচকর্ম হচ্ছে কি না, কমিউনিটি শৌচাগার থাকলে তার পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা, নলকূপের কাছে জল জমছে কি না, চাতালের অবস্থা, এ সব নিয়ে ১০টি প্রশ্ন থাকে। তার মধ্যে চারটির উত্তর ‘ইতিবাচক’ হলেই ওই নলকূপের জল পান ঝুঁকিপূর্ণ বলে ধরে হয়। উত্তরে ‘হ্যাঁ’ যত বাড়ে, ঝুঁকি তত বেশি বলে ধরা হয়।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অশোক দত্ত থেকে শহরের চিকিৎসক শুভময় চট্টোপাধ্যায়দের দাবি, ‘‘ওই সব নলকূপের জল পান করলে পেটের রোগ দেখা দেবে। শিশুদের তো বটেই, বড়দের মধ্যেও জলবাহিত রোগের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’’ জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ বলেন, ‘‘রিপোর্ট অনুযায়ী, যে সব এলাকার জল পানের উপযুক্ত নয়, সেগুলি শোধন করা-সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy