Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Terracotta Temple

মন্দিরের টেরাকোটার কাজে নোনা, ভাবাচ্ছে নিকাশি

মন্দির ঘুরে দেখা গিয়েছে, দেওয়ালের নীচ থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত নোনা ধরে গিয়েছে বহু জায়গায়। খসে পড়েছে বহু টেরাকোটার কাজ। নষ্ট হয়ে যাওয়ার মডেলের জায়গা মেরামত করা হলেও আগের রূপ ফেরেনি।

An image of art work

কালনার লালজি মন্দিরের দেওয়ালে নোনা ধরেছে। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল। 

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৩৯
Share: Save:

ডাকটিকিটে স্থান পাওয়া কালনার লালজি মন্দিরের টেরাকোটার কারুকাজে নোনা ধরেছে। মন্দিরের গায়ের একটা বড় অংশ জুড়ে নোনা ধরার বিষয়টি নজরে এসেছে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের। কেন্দ্রীয় এই সংস্থার বিশেষজ্ঞরা মন্দিরটি পরিদর্শন করেছেন। তাঁদের মত, অতিবৃষ্টিতে মন্দির চত্বরে জমা জল থেকে ঘটছে বিপত্তি। জানা গিয়েছে, নীচে দীর্ঘসময় জল জমে থাকার কারণে পুরনো মন্দিরটির উপরের অংশ স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যাচ্ছে। যা থেকে নোনা ধরছে মন্দিরের গায়ে থাকা টেরাকোটার কারুকাজে এবং নানা নকশার প্যানেলে।

১৭৩৯ সালে তৈরি হয় এই মন্দিরটি। পঞ্চবিংশতি রত্ন মন্দিরটি সমশ্রেণিভুক্ত মন্দিরগুলির মধ্যে প্রাচীনতম। আড়াইশো বছর পেরিয়ে যাওয়া মন্দিরটির দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের কলকাতা মণ্ডল। কালনা শহরের রাজবাড়ি কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে মন্দিরটি।বিশালাকার মন্দিরটির সামনে রয়েছে কারুকার্য শোভিত নাটমণ্ডপ। জনশ্রুতি, বর্ধমান রাজ পরিবারের রানি ব্রজকিশোরী দেবী তাঁর রাধার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন শ্যামরাইয়ের। জামাই লালজির জন্য এই মন্দির তিনি নির্মাণ করান। বাংলায় যে ছ’টি ২৫ চূড়া মন্দির রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম এটি। মন্দিরটিতে প্রতিদিনই পুজোপাঠ হয়। শীত পড়লেই দেশি, বিদেশি পর্যটকদের ঢল নামে। বেশির ভাগ পর্যটকই মন্দিরের গায়ে থাকা টেরাকোটার কারুকাজ খুব কাছ থেকে তার ছবিও তুলে নিয়ে যান। বছর দু’য়েক আগে এই মন্দিরটি ডাকটিকেটেও জায়গা করে নেয়।

মন্দির ঘুরে দেখা গিয়েছে, দেওয়ালের নীচ থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত নোনা ধরে গিয়েছে বহু জায়গায়। খসে পড়েছে বহু টেরাকোটার কাজ। নষ্ট হয়ে যাওয়ার মডেলের জায়গা মেরামত করা হলেও আগের রূপ ফেরেনি। মন্দিরটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা এক কর্তার কথায়, ‘‘ মন্দিরে কেন নোনা ধরেছে, তা অনুসন্ধান করা হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ করার চেষ্টা চলছে।’’

বিশেষজ্ঞদের দাবি, প্রায় দু’দশক ধরে মন্দিরটির নীচের অংশে জল জমে। বর্ষা কালে জল জমে থাকে বেশ কিছু দিন ধরে। মন্দিরের পাশে একটি পুকুরও রয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, অতিবৃষ্টি হলে মন্দিরের ভিতর থেকে নালার মাধ্যমে জল বাইরে বার হয় না। উল্টে পুকুর থেকে জল ঢুকে যায়। ২০১১ সালে মন্দিরে চত্বরে জমা জল বাইরে বার করে এনে নিকাশি নালার মাধ্যমে ভাগীরথীতে ফেলার একটি পরিকল্পনা নেয় কেন্দ্রীয় সংস্থাটি। পুরসভাকে প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা দেওয়া হয় নিকাশির হাল ফেরাতে। কিন্তু নালাটি তৈরি হলেও বন্ধ হয়নি জল জমা। ফলে নোনা ধরছে মন্দিরের দেওয়ালে।

মঙ্গলবার লালজি মন্দির নিয়ে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ একটি বৈঠক করে। ছিলেন সুপারিন্টেন্ডিং আর্কিওলজিস্ট রাজেন্দ্র যাদব, ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডিং আর্কিওলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার অর্ণব দাস, ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডিং আর্কিওলজিক্যাল কেমিস্ট দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, সার্ভেয়ার তাপস সাহানা, সিনিয়র কনজারভেশন অ্যাসিস্ট্যান্ট অমিত মালো, পুরপ্রধান আনন্দ দত্ত, পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার আশুতোষ পালেরা। মন্দিরটি পরিদর্শনও করা হয়। পুরপ্রধানের নির্দেশে মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত নিকাশি নালার কয়েকটি জায়গায় ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে দেখা যায় আবর্জনা জমে রয়েছে। সিনিয়র কনজারভেশন অ্যাসিস্ট্যান্ট বলেন, ‘‘লালজির মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত নালাটি যাতে নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় তার জন্য পুরসভাকে জানানো হয়েছে। মন্দিরের নিকাশি নিয়ে আরও কিছু পরিকল্পনা থাকলে জানাতে বলা হয়েছে।’’ মন্দিরের গায়ে নোনা দূর করার জন্য কোন ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হবে তা দেখছেন সংস্থার কেমিস্ট। তাঁর পরামর্শ মেনে কাজ হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Terracotta Temple Kalna Damp Craft
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy