পুলিশের সঙ্গে কথা বলছেন গ্রামের বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র
পানাগড় শিল্পতালুকে বেআইনি ভাবে মাটি কেটে পাচার করা হচ্ছে। এমনই অভিযোগ উঠেছে একটি বেসরকারি কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাসিন্দারা অবিলম্বে কাজ বন্ধ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে বুধবার সকালে পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়িতে বিক্ষোভ দেখান। কারখানা কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেন, নির্দিষ্ট অনুমতি নিয়েই তাঁরা কাজ করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েকদিন ধরে যন্ত্র দিয়ে সেখানে মাটি কাটার কাজ চলছে। এর পর ডাম্পার, ট্রাক্টরে করে মাটি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এর জেরে বিশাল এলাকা জুড়ে পুকুরের মতো গভীর খাল তৈরি হয়েছে। অভিযোগ, বিপাকে পড়তে হচ্ছে পোড়ালপাড়া ও আদিবাসীপাড়ার বাসিন্দাদের। স্থানীয় বাসিন্দা মমতা সিংহঠাকুর, অরুণ বাউড়িদের দাবি, খালে পড়ে দু’টি গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে। দু’টি শিশু খালে পড়ে গিয়েছিল। কোনও রকমে তাঁরা তাদের উদ্ধার করেন। তাঁদের বক্তব্য, “এ ভাবে মাটি কাটার ফলে এলাকা দিয়ে যাতায়াত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অথচ, স্কুল, হাট-বাজারে ওই দিক দিয়ে যাতায়াত করতে হয়।” এলাকাবাসী সুশান্ত মল্লিকের অভিযোগ, “অপরিকল্পিত ভাবে মাটি কাটা হচ্ছে। এর ফলে এলাকার জমির চরিত্র বদলে যাচ্ছে। বিপাকে পড়তে হচ্ছে এলাকার বাসিন্দাদের।”
এ দিন সকালে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ পঞ্চায়েত সদস্য অপর্ণা মল্লিকের বাড়িতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। অপর্ণা তাঁদের আশ্বস্ত করে এলাকায় যান। গ্রামের বাসিন্দারাও সেখানে যান। অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা। খবর পেয়ে কাঁকসা থানার পুলিশও যায়। বাসিন্দারা পুলিশের কাছে অবিলম্বে গার্ডওয়াল দিয়ে খাল ঘেরার ব্যবস্থা এবং যাতায়াতের রাস্তা তৈরি করে দেওয়ার দাবি জানান। পুলিশ এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে যোগাযোগের আশ্বাস দেন। পঞ্চায়েত সদস্য অপর্ণাও শিল্পোন্নয়ন নিগমের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করে রাস্তা ও গার্ডওয়াল নিয়ে কথা বলার আশ্বাস দিলে শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। অপর্ণা বলেন, “কে বা কারা মাটি কাটছে, সে বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সুরাহা করব।” জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি সমীর বিশ্বাস জানান, বিষয়টি তাঁর গোচরে এসেছে। তিনি খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
এ দিকে, যে কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মাটি কাটার অভিযোগ উঠেছে, ওই সংস্থার আধিকারিকদের এলাকায় এ দিন পাওয়া যায়নি। তবে এক কর্মী প্রণবকুমার সরকার দাবি করেন, “প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়েই কাজ হচ্ছে। মাটি কাটার পরে, যে খাল তৈরি হচ্ছে সেখানে বিপদ এড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা আছে।” এর বেশি তিনি কিছু বলতে পারেননি। রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের পানাগড় কার্যালয়ের এক আধিকারিক জানান, অবৈধ ভাবে মাটি কাটার কোনও ঘটনা ঘটেনি। প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়েই কাজ করছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ।
এই ঘটনায় রাজনৈতিক রং লেগেছে। বিজেপি নেতা ইন্দ্রজিৎ ঢালির অভিযোগ, পূর্ত দফতরের বোর্ড লাগিয়ে ডাম্পারে করে এই মাটি পাচার করা হচ্ছে। তাঁর দাবি, “শাসকদলের এক শ্রেণির নেতৃত্ব এর পিছনে না থাকলে, এ ভাবে দেদার মাটি পাচার চলতে পারে না।” কাঁকসা ব্লক তৃণমূল সভাপতি ভবানী ভট্টাচার্য বলেন, “মাটি পাচারের ঘটনা ঘটলে, সে কাজে আমাদের দলের কেউ যুক্ত থাকতে পারেন না।” যে ডাম্পারে করে মাটি সরানো হচ্ছে, সেই ডাম্পারের চালক দাবি করেন, আগে পূর্ত দফতরের রাস্তা নির্মাণের জন্য মাটি আনা-নেওয়ার কাজ হয়েছে। তাই বোর্ড রয়েছে। সেটি সরিয়ে দেওয়া হবে। পূর্ত দফতরের এক আধিকারিক জানান, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy