আইএনটিটিইউসি-র একাংশের বিরুদ্ধে দুর্গাপুরে বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় তোলাবাজি, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের নানা অভিযোগ রয়েছে। আগেও এ বিষয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূল নেত্রী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সূত্রের খবর, সোমবার নবান্ন থেকে ফের বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন তিনি। দুর্গাপুরে আইএনটিটিইউসি সভাপতি বদলেরও নির্দেশ দেন তিনি। এর পরেই বিষয়টি নিয়ে আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে চর্চা শুরু হয়েছে।
ফেব্রুয়ারিতে ‘বিশ্ববঙ্গ’ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে শিল্প সংক্রান্ত ‘সিনার্জি’ কমিটি গঠনের ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার নবান্ন সভাঘরে সেই কমিটির প্রথম বৈঠক করেন তিনি। তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, সেখানে নেত্রী স্পষ্ট জানান, আইএনটিটিইউসি-র নাম করে টাকা চেয়ে ‘জুলুমবাজি’ চলবে না। তাঁর কথায়, “ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে বলব, অযথা বাড়াবাড়ি করবেন না। দরকারি কিছু বিষয় হলে সরাসরি কথা বলে বিষয়টা মেটানোর চেষ্টা করতে হবে। স্থানীয় কোনও নেতা যদি টাকা চান, তা হলে প্রশাসনকে জানালেই হবে। প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।” মন্ত্রী মলয় ঘটক ও প্রদীপ মজুমদারকে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, “দুর্গাপুরের আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি আমি ‘চেঞ্জ’ করব। গ্রাফাইটের (সগড়ভাঙার বেসরকারি কারখানা) সভাপতি আমি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে (আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি) আপাতত করতে বলেছি।”
মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশের পরে এ বার আসানসোল ও দুর্গাপুরের জন্য আইএনটিটিইউসি-র আলাদা সাংগঠনিক জেলা চালু করার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেল বলে মত রাজনৈতিক মহলের। বর্তমানে সংগঠনের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি হিসাবে রয়েছেন আসানসোল পুরসভার অন্যতম ডেপুটি মেয়র অভিজিৎ ঘটক। দুর্গাপুরের বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় গত কয়েক বছরে অর্থের বিনিময়ে বহিরাগতদের নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে আইএনটিটিইউসির নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে। তৃণমূল ও আইএনটিটিইউসি-র অন্য অংশ প্রকাশ্যেই তা নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। দু’পক্ষের মধ্যে অশান্তির ঘটনাও ঘটেছে। বিশেষ করে সগড়ভাঙার বেসরকারি গ্রাফাইট কারখানায় মাঝে মাঝেই বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীদের অনেকে সংবাদমাধ্যমের সামনে বার বার দাবি করেছেন, জেলা সভাপতিকে সব জানানোর পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে দুর্গাপুর মহকুমার ভার আপাতত অভিজিতের হাত থেকে নিয়ে নেওয়া হল বলে মনে করছেন দলীয় নেতৃত্বের অনেকে। গ্রাফাইট কারখানায় আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি হলেন অভিজিৎ। তাঁর জায়গায় ঋতব্রতকে আনার কথা ঘোষণা করেছেন নেত্রী।
সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন পরিস্থিতিতে অভিজিৎ শুধু আসানসোল মহকুমার দায়িত্বে থাকবেন। দুর্গাপুরের জন্য নতুন সভাপতি নিযুক্ত করা হবে। দুর্গাপুরের সব কারখানার বর্তমান আইএনটিটিইউসি-র কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশিকা শীঘ্রই জারি করা হবে। অভিজিৎ অবশ্য বলেন, “সাংগঠনিক বিষয়ে এখনও নতুন কোনও নির্দেশিকা আসেনি।” তবে ঋতব্রত বলেন, “সাংগঠনিক কাঠামো ও পদাধিকারীদের রদবদলের বিষয়টি দ্রুত পরিষ্কার হয়ে যাবে।” তিনি জানান, নিয়োগে ‘অনিয়ম’ রুখতে রাজ্য শ্রম দফতরের উদ্যোগে ‘কর্মসংবাদ’ পোর্টাল চালু করা হয়েছে। কারখানার দরকার পড়লে সেখান থেকে লোক নিয়োগ করতে পারবে।
বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক তথা দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের কটাক্ষ, “যিনি যাই বহুল, তোলাবাজি, কাটমানি বন্ধ করা তৃণমূলের কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। কারণ, দলটাই দাঁড়িয়ে আছে দুর্নীতির উপর।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)