টোটোচালক রূপালি মাহাতো। ছবি: বিকাশ মশান
বাবা ছিলেন টোটোচালক। হঠাৎ বাবার মৃত্যুতে সংসার হাল ধরতে এগিয়ে আসেন মেয়ে। বাবার টোটো নিয়েই পথে বেরিয়ে পড়েছেন পলাশডিহার প্রথম বর্ষের কলেজ ছাত্রী রূপালি মাহাতো।
পলাশডিহার টোটো চালক রঞ্জিৎ মাহাতোর মাটির বাড়িতে রয়েছেন মেয়ে রূপালি ও চোখের গুরুতর সমস্যায় অসুস্থ স্ত্রী উপাসি। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি রঞ্জিৎবাবুর মৃত্যুতে আতান্তরে পড়ে পরিবারটি। রূপালি বলেন, ‘‘বাবার মৃত্যুর কয়েকমাস পরেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা ছিল। ফলে, খুবই সমস্যা তৈরি হয়। মায়ের চিকিৎসা আর বাড়ির খরচ জোগাতে পরীক্ষার আগেই বাবার টোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়ি।’’
পাশে দাঁড়ান রঞ্জিৎবাবুর সঙ্গী অন্য টোটো চালকেরা। বাড়ির কাছেই মাঠেই রূপালি পান টোটো চালানোর পাঠ। এর পরে, এক দিন রাস্তায় টোটো নেমে পড়েন তিনি। দিনে টোটো চালানো, রাতে পড়াশোনা— এই ছিল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রূপালির রুটিন। উচ্চ মাধ্যমিকে কলা বিভাগে ৫৫ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করে স্নাতক স্তরে রূপালি ভর্তি হন দুর্গাপুরের মাইকেল মধুসূদন মেমোরিয়াল কলেজে।
সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া টোটো স্ট্যান্ডের চালক রূপালি বলেন, ‘‘টোটো চালিয়ে ৫০ থেকে দু’শো টাকার মতো রোজগার করি। টিউশন পড়তে যাওয়া বা মা’কে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাওয়া—সবেই ভরসা টোটো।’’ তবে লকডাউনে টোটো বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েন তিনি। মাসখানেক আগে ফের টোটো নিয়ে পথে নামেন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় টোটো-র মেরামতের জন্য আর্থিক সাহায্য় করেছেন পরিচিতেরা।
তবে এই পেশায় সে ভাবে কোনও দিন ‘বাধা’র সম্মুখীন হতে হয়নি বলে জানান রূপালি। সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া টোটো স্ট্যান্ডের চালক সুধাময় পাল বলেন, ‘‘আমরা সবাই রূপালির বাবার পরিচিত। সেই সূত্রেই ও আমাদের আপনজন। চেষ্টা করি, যাতে রূপলি ঠিকমতো ভাড়া পায়।’’
মেয়ের জন্য গর্বিত মা উপাসিও। তিনি বলেন, ‘‘রূপালি আমার লক্ষ্মী। ও না থাকলে মা-মেয়ে ভেসে যেতাম।’’ দুর্গাপুর পুরসভার ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মানস রায় বলেন, ‘‘লকডাউন-পর্ব থেকেই পরিবারটির পাশে থাকার চেষ্টা করছি। রূপালি এগিয়ে যাক, এটাই চাই আমরা।’’
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy