E-Paper

নির্বিঘ্নে কয়লা পাচারে হাতিয়ার ‘ডিস্কো পেপার’

কয়লা পাচারের জন্য এক ধরনের জাল কাগজ তৈরি করা হত। এর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হতো ১০, ৫০ বা ১০০ টাকার একটি প্রতিলিপি (ফটোকপি)।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২৪ ০৮:৫৮
Share
Save

রুট ছিল নির্দিষ্ট। তবে প্রতিদিন এক রুটে যাতায়াত হত না। অবৈধ সিন্ডিকেটের কয়লা পাচারের জন্য সুবিধা মতো রুট বদল করা হত। যাওয়া-আসার পথে পুলিশকর্মীদের একাংশকে এক ধরনের জাল চালান ও কোড নম্বর দেখিয়ে কয়লার গাড়ি পারাপার করানো হতো। এই প্রক্রিয়া সিন্ডিকেটের ভাষায় বলা হত ‘ডিস্কো পেপার’। এই সাহায্য করার জন্য পুলিশের ওই অংশ অনুপ মাজি ওরফে লালার সিন্ডিকেট থেকে আর্থিক সুবিধা নিত বলে চার্জশিটে উল্লেখ করেছে সিবিআই।

তদন্তকারীদের দাবি, মূলত চারটি রুট ধরে লালার সিন্ডিকেটের কয়লা পাচার হত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রুট আসানসোল-রানিগঞ্জ থেকে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে ডুবুরডিহি চেকপোস্ট পেরিয়ে ধানবাদ, সেখান থেকে ঝাড়খণ্ডের নানা এলাকা ছাড়াও, উত্তরপ্রদেশের বারাণসী, বিহারের ডেহেরি মান্ডি। অপর রুট, রানিগঞ্জ থেকে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া হয়ে চান্ডিল, রাঁচী, রামনগর, হাজারিবাগ হয়ে উত্তরপ্রদেশ। আর একটি রুট, বীরভূম থেকে নলা, দুমকা, ভাগলপুর-সহ আশাপাশের অঞ্চল। চতুর্থ রুট, আসানসোল থেকে রূপনারায়ণপুরে বিহার রোড হয়ে মিহিজাম, জামতাড়া-সহ লাগোয়া এলাকা। তবে এই রুট বেশি ব্যবহার করত না সিন্ডিকেট। এ রাজ্যে বীরভূম, হুগলি, দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা দিয়ে কয়লা পাচার হয়েছে বলে তদন্তকারীদের অভিযোগ।

এই কয়লা পাচারের জন্য এক ধরনের জাল কাগজ তৈরি করা হত। এর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হতো ১০, ৫০ বা ১০০ টাকার একটি প্রতিলিপি (ফটোকপি)। এই প্রক্রিয়াটিকেই বলা হত ‘ডিস্কো পেপার’। তদন্তে নেমে সিবিআই আধিকারিকেরা জানতে পারেন, প্রতি দিন একটি নির্দিষ্ট টাকার ‘সিরিয়াল নম্বর’ হত এই সিন্ডিকেটের ‘কোড নম্বর’। যে টাকার সিরিয়াল নম্বর কোড হিসেবে নির্ধারিত হত, সেই টাকার একটি প্রতিলিপি কয়লা বোঝাই ট্রাক চালকদের দেওয়া হত। রাস্তায় পুলিশকর্মীদের একাংশের কাছেও ওই ‘ডিস্কো পেপার’ ও টাকার সিরিয়াল নম্বরের প্রতিলিপি দেওয়া থাকত। কয়লার ট্রাক চালক তা দেখিয়ে ছাড় পেতেন। তদন্তে উঠে এসেছে, ঝাড়খণ্ডের নিরশা ও মুগমা এলাকায় তৈরি করা হত এই জাল কাগজ।

চোরাই এই সব কয়লা কিনত কারা? তদন্তকারীরা জেনেছেন, মূলত ইটভাটা, রিফ্যাক্ট্রি শিল্প, ছোট ইস্পাত কারখানা, স্পঞ্জ আয়রন কারখানাগুলিই ছিল লালার সিন্ডিকেটের কয়লার মূল ক্রেতা। তদন্তে নেমে পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের প্রায় ২০টি এমন সংস্থায় অভিযান চালায় সিবিআই। আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে জমা দেওয়া প্রথম চার্জশিটে এমন প্রায় ১৫ জন কারখানা মালিকের নাম যোগ করা হয়েছে। তাঁরা এখন জামিনে মুক্ত রয়েছেন। সিবিআই জেনেছে, সরকারি কয়লা বৈধ পথে নিলামে কিনতে হয়। দাম পড়ে টন পিছু প্রায় সাড়ে ৮ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকা। কিন্তু অবৈধ কয়লার ক্ষেত্রে সেই দাম খুব বেশি হলে আড়াই থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। তাই কিছু কারখানার মালিক সেই কয়লার দিকে ঝোঁকেন। তবে ব্যবসা ‘সাদা’ রাখতে তাঁরা প্রয়োজনের তুলনায় কম কয়লা নিলামে কিনতেন।

সিবিআইয়ের তদন্তে উঠে আসা এমন অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্তদের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। ১৪ মে আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পাওয়ার পরেই কোনও কথা না বলে আদালত চত্বর ছেড়ে যান লালা। (শেষ)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

coal Asansol

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।