Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

টানা বিক্ষোভে বন্ধের মুখে খনি

পাঁচ দিন ধরে বন্ধ দামাগড়িয়া খোলামুখ খনির কয়লা উত্তোলন এবং কয়লা পরিবহণ। সার দিয়ে দাঁড়িয়ে খনির গাড়ি ও যন্ত্র। সোমবার। ছবি: পাপন চৌধুরী

পাঁচ দিন ধরে বন্ধ দামাগড়িয়া খোলামুখ খনির কয়লা উত্তোলন এবং কয়লা পরিবহণ। সার দিয়ে দাঁড়িয়ে খনির গাড়ি ও যন্ত্র। সোমবার। ছবি: পাপন চৌধুরী

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩৮
Share: Save:

চাকরির দাবিতে কয়লা উত্তোলন ও পরিবহণ বন্ধ রেখে টানা পাঁচ দিন ধরে বিক্ষোভ। এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিসিসিএলের চাচ ভিক্টোরিয়া এরিয়ার দামাগড়িয়া খোলামুখ খনি বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানালেন খনি কর্তৃপক্ষ। সোমবার প্রায় ৭০ জন খনির কর্মী, আধিকারিকদের অন্যত্র বদলির জন্য বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে।

সোমবার খনি চত্বরে গিয়ে দেখা গিয়েছে, প্রায় তিরিশ জন বিক্ষোভকারী চাকরি চেয়ে সমানে স্লোগান দিচ্ছেন। খনি কর্তৃপক্ষের দাবি, আন্দোলনকারীদের বাধায় কাজে যোগ দিতে পারেননি শ্রমিক, কর্মীরা। সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে মাটি ও কয়লা কাটার যন্ত্রগুলি। ইতিউতি দাঁড়িয়ে আছে বেশ কয়েকটি কয়লাবোঝাই ডাম্পার। আধিকারিকেরাও কার্যত কার্যালয়-বন্দি হয়ে রয়েছেন। খনির এজেন্ট নির্ঝর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমাদের আর কিছু করার নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ খনি থেকে সব কর্মী ও আধিকারিকদের অন্যত্র বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সোমবারই সেই বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। এই অবস্থায় খনি বন্ধ করাই একমাত্র পথ।’’

কিন্তু কেন এই অবস্থা?

বিসিসিএল সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-য় খনি সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়। এখানে ভূগর্ভে প্রায় ১৪৭ মিলিয়ন টন কয়লা রয়েছে। সম্প্রসারণের জন্য লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দাদের কাছ থেকে জমি নেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে প্রায় তিরিশ জন জমিদাতা বিক্ষোভ শুরু করেছেন। তাঁরা জানান, জমি নেওয়ার সময়ে খনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল জমির ন্যায্য মূল্য-সহ দু’একর জমি পিছু একটি চাকরি মিলবে। তাঁদের অভিযোগ, জমির দাম মিলেছে। কিন্তু চাকরি মেলেনি। গত দু’বছর ধরে তাঁরা খনি কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়োগপত্র চাইছেন। কিন্তু লাভ হচ্ছে না। বিক্ষোভকারীদের তরফে বিমান দত্ত, পীযূষ মুখোপাধ্যায়েরা বলেন, ‘‘নিয়োগপত্র হাতে না পেলে বিক্ষোভ উঠবে না। উত্তোলন ও পরিবহণও বন্ধ থাকবে।’’

এই পরিস্থিতিতে বিসিসিএল-র বিপুল ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান খনি কর্তৃপক্ষ। খনির এজেন্ট নির্ঝরবাবু জানান, ফি দিন প্রায় পাঁচ হাজার টন কয়লা উত্তোলন মার খাচ্ছে। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা। তাঁর দাবি, এখানকার সিংহভাগ কয়লা পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের অন্য তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা হয়। ফলে কয়লার অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনও ব্যাহত হবে। খনির ম্যানেজার ধর্মেন্দ্র তিওয়ারি জানান, গত শনিবার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বিসিসিএলর দু’জন ডিরেক্টরের বৈঠক হয়েছে। কর্তৃপক্ষের তরফে আগামী তিন মাসের মধ্যে দাবি মেটানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা কোনও কথা শুনতে রাজি নন। তাঁরা এই মুহূর্তে নিয়োগপত্র চাইছেন। ধর্মেন্দ্রবাবুর অবশ্য বক্তব্য, ‘‘এত তড়িঘড়ি নিয়োগপত্র দেওয়া সম্ভব নয়।’’

নির্ঝরবাবু এমনও জানিয়েছেন, এই খনির ক্ষতি বিসিসিএলের অন্য খনির উৎপাদন বাড়িয়ে পুষিয়ে নেওয়া হবে। ফলে এই খনিটি বন্ধ হলেও আর্থিক কোনও ক্ষতি হবে না। কিন্তু খনি বন্ধ হলে দামাগড়িয়া, বড়িরা-সহ লাগোয়া বেশ কিছু গ্রাম ও বিস্তীর্ণ অঞ্চলের অর্থনীতি ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসীর একটা বড় অংশই।

অন্য বিষয়গুলি:

Damagoria colleary B.C.C.L Coal Mine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy