Advertisement
E-Paper

ঝুপড়ি থেকে কয়লা রাজ্যের বেতাজ বাদশা

পশ্চিম বর্ধমানের কয়লা-ক্ষেত্রের সঙ্গে পরিচিতেরা জানাচ্ছে, এর পরে পুরোটাই রাজুর উত্থানের কাহিনি।

Dead Body of Raju Jha

রাজুর দেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দুর্গাপুরের শ্মশানে। ছবি: বিকাশ মশান

সুব্রত সীট

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:০৯
Share
Save

উত্থান উল্কার গতিতে। তেমনই পতনও হল আচমকা। রাজেশ ওরফে রাজু ঝা খুনের পরে তাঁর জীবন ঘেঁটে এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের একাংশ। তাঁদের মতে, এই উত্থান এবং হয়তো পতনও, দুই-ই মূলত কয়লা কারবার বা অন্য কোনও বেআইনি কারবারেরসূত্রেই ঘটে থাকতে পারে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাজুর উত্থান রানিগঞ্জের পঞ্জাবি মোড় লাগোয়া এক ঝুপড়ি থেকে। হাইস্কুলে পড়তে পড়তেই কিশোর রাজু একটি বেসরকারি পরিবহণ সংস্থায় ট্রাকের খালাসি হিসাবে কাজ করতে শুরু করে। সংস্থার মালিক বেআইনি কয়লার কারবারে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ। রাজু খালাসির কাজ করার সময়েই কয়লার বেআইনি কারবারের অলিগলির খোঁজ করতে শুরু করেন। ধীরে-ধীরে মালিকের বেআইনি কয়লা কারবারের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই হাতিয়ে নেন রাজু। তাঁর মৃত্যুর পরে পুরো কারবারই চলে আসে তাঁর হাতে।

পশ্চিম বর্ধমানের কয়লা-ক্ষেত্রের সঙ্গে পরিচিতেরা জানাচ্ছে, এর পরে পুরোটাই রাজুর উত্থানের কাহিনি। রাজু ২০১০-এর আগে প্রায় এক দশক ধরে খনি অঞ্চলে বেআইনি কয়লার কারবারের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০০৬-এ রাজুর কারবারের ‘স্বর্ণযুগ’। রানিগঞ্জ থেকে ডানকুনির আগে পর্যন্ত তাঁর কয়লার ‘প্যাড’ (অবৈধ কারবারের রসিদ) চলত। এর পরেই তিনি ধীরে-ধীরে বিভিন্ন ব্যবসা শুরু করেন। কলকাতাগামী দূরপাল্লার বিলাসবহুল বাস পরিষেবা, সিটি সেন্টারে বকলমে হোটেল, রেস্তরাঁ, পার্কিং প্লাজ়া, শাড়ির দোকান, স্টিল টাউনশিপে একটি গেস্ট হাউস ‘লিজ়’, বিধাননগরে রেস্তরাঁ, বাণিজ্যিক ভবন, মলানদিঘিতে পেট্রল পাম্প, কুলডিহার কাছে ট্রাক টার্মিনাস গড়ে ওঠে। পরের দিকে বাস পরিষেবা, শাড়ির দোকান-সহ কয়েকটি ব্যবসা থেকে সরে আসেন তিনি। এ ছাড়া, বাঁশকোপার কাছে একটি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল গড়বেন বলে জমি কিনেছিলেন। দুর্গাপুরের বিধাননগরে রয়েছে রাজুর বিশাল বাড়ি। সেখানে থাকেন এক ছেলে। এ ছাড়া, বিহারের বাড়িতে থাকেন স্ত্রী ও আরেক ছেলে। কলকাতার বাগুইআটি এবং ইএম বাইপাসের ধারেও ফ্ল্যাট আছে রাজুর, দাবি ঘনিষ্ঠ মহলের।

তবে শুধু কয়লা নয়, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়ার বিভিন্ন থানায় গাঁজা পাচার, বেআইনি অস্ত্র রাখা, টাকা পাচার-সহ নানা অভিযোগ ওঠে রাজুর বিরুদ্ধে। বেআইনি কয়লা কারবারে যুক্ত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েক বার জেলও খেটেছেন রাজু। প্রথমে ২০০৬-এ। তার পরে, ২০১১-য় রানিগঞ্জ, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬-তে কাঁকসা থানা তাঁকে গ্রেফতার করে। ২০১৬-তেই বাগুইআটিতে টাকা পাচারের অভিযোগে রাজুকে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশের এসটিএফ। তবে তার পরে থেকে রাজুকে খুব একটা ‘খবরে’ থাকতে দেখা যায়নি বলেই দাবি। তবে সিবিআই কয়লা-তদন্ত শুরু করতেই ফের সামনে আসে রাজুর নাম। ইতিমধ্যে রাজুকে প্রকাশ্য রাজনৈতিক মঞ্চেও দেখা যায়। ২০২০-তে যোগ দেন বিজেপিতে। বিজেপির হয়ে বিধানসভা ভোটের প্রচারেও নামতে দেখা যায় তাঁকে। তবে ২০০৫-এ বাঁকুড়ার মেজিয়া থানায় কয়লা পাচারের একটি মামলায় বাঁকুড়া আদালতে অন্যকে হাজিরা দিতে পাঠান রাজু। এ জন্য ২০২১-এ রাজুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। রাজু আত্মসমর্পণ করতে এলে, তাঁকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন বিচারক। এই বছরেই অন্য একটি মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করে সিআইডি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Raju Jha Durgapur coal mafia

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}