স্কুলে ভর্তির আবেদনপত্র পূরণ করা চলছে। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।
কারও বাবা অসুস্থ, কারও আবার বাবা-মা দু’জনেই মারা দিয়েছেন। দারিদ্র্যের কারণে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে তারা এখন অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করছে। পূর্ব বর্ধমানের গুসকরার এমনই কয়েকটি মেয়ে স্থানীয় কয়েক জন যুবকের উদ্যোগে ফের স্কুলে ফিরতে চলেছে। মঙ্গলবার তাদের মধ্যে সাত জন গুসকরা বালিকা বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আবেদনপত্র জমা দিল।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সবিতা ঘোষ বলেন, ‘‘বিভিন্ন কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়া সাত জন মেয়ে এ দিন পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদনপত্র জমা দিয়েছে। শুনেছি, আরও কয়েকটি মেয়ে ভর্তি হতে আগ্রহী। আবেদনপত্র জমা নেওয়ার তারিখ পেরিয়ে গেলেও তাদেরগুলো জমা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।” ওই সমস্ত মেয়েদের শিক্ষার মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য সব রকম ভাবে পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি।
ফের স্কুলে ফিরতে পারার আশায় খুশি পল্লবী টুডু, রুবি মুর্মু, সোমা তুরি, পূর্ণিমা মণ্ডল, শিখা দাস, বর্ষা রবিদাস, বর্ষা মির্ধা। বছর বারোর পল্লবীর বাড়ি বীরভূমের ইলামবাজারে। বাবা-মা মারা যাওয়ায়, সে গুসকরায় মামাবাড়িতে চলে আসে। তৃতীয় শ্রেণির পরে, আর পড়া হয়নি। অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে। গুসকরা খয়রাপাড়ার পূর্ণিমার বাবা অসুস্থ। মা ট্রেনে ভিক্ষা করেন। পড়া ছেড়ে সে-ও পরিচারিকার কাজ নিয়েছে। গুসকরা লাইনপাড়ের বছর বারোর রুবির বাবা নেই। মা-মেয়ে দু’জনেই পরিচারিকার কাজ করেন। গুসকরা ধারাপাড়ার বছর এগারোর সোমার বাবা শ্রমিকের কাজ করেন। মা-মেয়ে দু’জনেই আগে পরিচারিকার কাজ করতেন। জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে সোমা কাজ বন্ধ রেখেছে। বাকিরাও পেট চালাতে পরিচারিকার কাজ করে। তাদের মধ্যে পল্লবী ও পূর্ণিমা বলে, ‘‘সংসার চালাতেই পড়া বন্ধ করতে হয়েছিল। আবার স্কুলে যাব, বন্ধুদের পাব, ভেবেই আনন্দ হচ্ছে।’’
গুসকরার বাসিন্দা সুবীর রানা ও তাঁর সঙ্গীরা কয়েক বছর ধরে গুসকরা স্টেশনে রবিবার দুপুরে দুঃস্থদের খাওয়ানোর আয়োজন করছেন। সেখানে আসা মেয়েগুলির পড়া বন্ধ শুনে তাঁরা স্কুলে ফেরাতে উদ্যোগী হন।
সুবীরের কথায়, ‘‘স্কুলে ভর্তি হতে বলায় প্রথমে মেয়েরা রাজি হয়নি। পরিবারের লোকেদের বুঝিয়ে রাজি করিয়েছি।’’ এ দিন তিনিই ওই মেয়েদের স্কুলে নিয়ে গিয়ে আবেদনপত্র পূরণ করান। তার আগে, তাদের জন্মের শংসাপত্র, পুরসভার শংসাপত্র, ব্যাঙ্কের পাসবই ইত্যাদি নথি জোগাড় করতে হয়েছে। তাদের জন্য বিনামূল্যে কোচিং এবং টিফিনের ব্যবস্থা করা হবে। সুবীরের সংযোজন, আরও আট জন মেয়ে স্কুলে ভর্তি
হয়ে চেয়েছে।
মেয়েদের সঙ্গে এ দিন স্কুলে গিয়েছিলেন অভিভাবকেরাও। সোমার মা রুমা তুরি, বর্ষার বাবা রাজু রবিদাস, রুবির মা রত্নি মুর্মুরা বলেন, ‘‘পাড়ার মেয়েরা স্কুলে গেলে, ভাবতাম, আমাদের মেয়েরা যদি যেতে পারত! খাবার, পোশাক, সাইকেল— সব পেত। কিন্তু পেট চালাতে পড়া বন্ধ রেখে ওদের কাজে ঢোকাতে হয়েছিল। সুবীরদা বুঝিয়েছেন, স্কুলে গেলেই মেয়েরা ভাল থাকবে। ওরা আবার স্কুলে যাবে, এটা স্বপ্ন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy