স্থায়ী উপাচার্য আসার পরেও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ে বিভ্রান্তি কাটছে না। স্নাতক স্তরের পঞ্চম সিমেস্টারের পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। শনিবারের পরীক্ষা নেওয়া হবে ৪ মার্চ, সোমবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক দফতর। বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ, কলেজ-শিক্ষকদের সংগঠন ‘ওয়েবকুটা’, ছাত্র সংগঠনগুলির অভিযোগ, শনিবার যাদবপুরে তৃণমূল সমর্থিত কলেজ শিক্ষকদের সংগঠন ‘ওয়েবকুপা’র বার্ষিক সভা রয়েছে। সেই কারণেই ওই পরীক্ষার দিন বদলে ফেলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওয়েবসাইটের বিজ্ঞপ্তিতে ‘অনিবার্য কারণে’ পরীক্ষা বদলের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব (রেজিস্ট্রার) অরিজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “একাধিক কলেজের পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যার জন্য পরীক্ষার সময়সূচি বদলাতে হয়েছে।”
বিভিন্ন কারণে স্নাতকস্তরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা-সূচি বদলানোর ইতিহাস রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা না নেওয়া, সময়ে ফল বার না করার অভিযোগও হামেশাই ওঠে। এসএফআইয়ের অভিযোগ, আগেও বেশ কয়েকবার টিএমসিপির কর্মসূচির জন্য পরীক্ষা পিছিয়ে গিয়েছে। টিএমসিপির প্রতিষ্ঠা দিবস, ২৮ অগস্ট পরীক্ষা থাকলে তা পিছিয়ে দেওয়াটাও ছিল অনিবার্য।
এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক ঊষসী রায়চৌধুরী বলেন, “বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা নিতে পারে না, ফল ঘোষণা করতে পারে না। অথচ শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের কর্মসূচির জন্য পরীক্ষা পিছিয়ে যায়। এখন শোনা যাচ্ছে, তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠনের সভার জন্যও নাকি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে বার বার একই ঘটনা ঘটছে।”
পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কলেজ শিক্ষকদের সংগঠন ‘ওয়েবকুটা’ও। ওই সংগঠনের নেতা আজিম্বর রহমানের দাবি, “তৃণমূল আমলেই এ সব সম্ভব। পরীক্ষার জন্য সংগঠনের সভা পিছিয়ে যেত। এখন উল্টো ঘটনা ঘটছে। দুর্ভাগ্যের বিষয়।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশের দাবি, ওয়েবকুপার চাপেই পরীক্ষার দিনক্ষণ বদলাতে বাধ্য হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। যাদবপুরে সংগঠনের সভার জন্য পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়া বিষয়টি সামনে এলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরেই সমালোচনা হত। সেই কারণেই কয়েকটি কলেজের অধ্যক্ষদের দিয়ে পরিকাঠামোগত ‘অসুবিধা’র কথা জানিয়ে কর্মসচিবের কাছে চিঠি করা হয়। ওই চিঠি পরীক্ষা নিয়ামক দফতরে পাঠান কর্মসচিব। যদিও পরীক্ষা নিয়ামক অনিন্দ্যজ্যোতি পাল ওয়েবসাইটের বিজ্ঞপ্তিতে ‘অনিবার্য কারণে’ পরীক্ষা বাতিলের কথা জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ-অধ্যক্ষদের সংগঠনের এক সদস্যের কটাক্ষ, “১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে পঞ্চম সিমেস্টারের পরীক্ষা চলছে। এত দিন পরিকাঠামোগত সমস্যা হল না। ওয়েবকুপার সমাবেশের দিনই কলেজের পরিকাঠামোগত সমস্যা! সবাই কী আর জেগে ঘুমাচ্ছে?” ওই সংগঠনের সদস্যরা জানান, স্থায়ী উপাচার্য এলে এ ধরনের পরিস্থিতি কেটে যাবে ভাবা হয়েছিল, কিন্তু তা আর হল কোথায়?
‘ওয়েবকুপার’ জেলা সভাপতি দিবজ্যোতি হাজরা বলেন, “যাদবপুরের সভায় বর্ধমানের অনেক কলেজ থেকে প্রতিনিধি হিসেবে শিক্ষকেরা যাবেন। তবে পরীক্ষা কেন পিছোল, তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই বলতে পারবেন।” টিএমসিপির জেলা সভাপতি স্বরাজ ঘোষও প্রায় এক সুরে বলেন, “এটা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের অভ্যন্তরীণ বিষয়।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)