কাটোয়ায় রাস্তার পাশে পড়ে নির্মাণ সামগ্রী। —নিজস্ব চিত্র।
নিয়ম বলে, বহুতলের উচ্চতা নির্ধারণে সামনের রাস্তার মাপ খুব জরুরি। দুইয়ের মাপে সাযুয্য না থাকলে বিশেষ অনুমতিও নিতে হয়। কিন্তু পুরনো অনেক শহরেই সরু গলির পাশে গজিয়ে উঠছে বহুতল।
ভাগীরথীর পাড়ের কাটোয়া শহরে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জমির দাম। প্রায় ১৫ বছর আগে ঘুটকিয়া পাড়ায় প্রথম একটি আবাসন গড়ে ওঠে। ওই আবাসন নির্মাণ শেষ হতে না হতেই সব ফ্ল্যাট বিক্রি হয়ে যায়। যৌথ পরিবার ভেঙে ছোট পরিবার, বড় বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, অনেক সময় বাইরে থেকে চাকরি সূত্রে এসে শহরে বাস করার তাগিদা বাড়ায় ফ্ল্যাটের চাহিদা বাড়ে। একের পর এক নির্মাণ গড়ে ওঠে সুবোধস্মৃতি রোড, স্টেশন রোড, মণ্ডলপাড়া, ঘুটকিয়া পাড়া, সার্কাস ময়দান, টেলিফোন ময়দান, কলেজ হস্টেল পাড়া, ঘোষহাটের মতো নানা জায়গায়। স্টেশন বাজার এলাকায় আধ কাঠারও কম জায়গায় বাড়ি নির্মাণ হয়। এর বেশির ভাগই নিয়ম মানেনি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। পুরসভার কাছে অভিযোগও হয়েছে নানা সময়ে। পুরসভা অনেক বহুতলকেই ‘কমপ্লিশন সার্টিফিকেটও (সিসি)’ দেয়নি। তার ফলও ভুগছেন বাসিন্দারা।
ওই সব বহুতলে বাস করা অনেকেরই দাবি, সিসি না থাকায় রেজিস্ট্রেশন, মিউটেশন কিছুই করা যাচ্ছে না। ব্যাঙ্ক ঋণের ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে। এককথায়, ফ্ল্যাট কিনলেও কাগজে-কলমে তা হাতে আসছে না।
এ ছাড়াও পাকা রাস্তার উপরে জায়গা না ছেড়ে বহুতল নির্মাণ। পাশে গাড়ি ঢুকেত না পারা চার ফুটের গলি, রাস্তার উপরে বালি, পাথর দীর্ঘ দিন পড়ে থাকা নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। জলাজমি ভরাট করে বা জমির চরিত্র বদলে বহুতল নির্মাণ হয়েছে বলে অভিযোগ। অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থাও নেই বেশির ভাগ বহুতলে।
অথচ পুর আইন অনুযায়ী, বহুতলের তিন দিকে রাস্তা থেকে কমপক্ষে ছ’ফুট জায়গা ছাড়তে হয়। পিছন দিকেও ১০ ফুট ফাঁকা জায়গা রাখতে হয়। গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা জরুরি। মাটি পরীক্ষা, দমকল, জিওটেকনিক্যাল শংসাপত্র ও ফিটনেস সার্টিফিকেটও নিতে হয়। শেষে পুরসভা সব খতিয়ে দেখে সিসি দেয়। তারপরে ফ্ল্যাট বিক্রি করা যায়। যদিও কার্যক্ষেত্রে বহুতল তৈরি শুরু হতেই প্রোমোটারের আশ্বাসে ভর করে বিক্রি শুরু হয়ে যায়। পরে বাড়ে সমস্যা।
কাটোয়ার কংগ্রেস নেতা রণজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের শহরে প্রায় প্রতিটি বহুতলই কোনও জায়গা না ছেড়ে তৈরি হয়েছে। পুরসভার শুধু উন্নয়ন তহবিলে পাহাড় প্রমাণ টাকা ঘুরপথে আদায় করে চোখ বন্ধ করে থাকে। অনেক ফ্ল্যাটে ১০ থেকে ১২ বছর ধরে মানুষজন বসবাস করলেও মিউটেশন হয়নি। পুরবোর্ডের মিটিংয়ে বহু বার বলেও সদুত্তর পাইনি।’’ বিজেপির পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি (কাটোয়া সাংগঠনিক) গোপাল চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “তৃণমূলের জমানায় সবেতেই কাটমানি। কাটোয়াতেও বেআইনি নির্মাণে লক্ষ লক্ষ টাকা কাটমানি নিয়ে ছাড় দেওয়া হয়েছে।’’ সিপিএম নেতা অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, পুরসভা প্রোমোটারদের সঙ্গে মিলে টাকা রোজগার করছে। বহুতলের সুরক্ষা কিছুই নেই।
যদিও পুরপ্রধান সমীরকুমার সাহা বলেন, “অভিযোগ পেলে আইনি পদক্ষেপ করা হয়। বেশ কয়েকটি আবাসন কর্তৃপক্ষকে আমরা সিসি দিইনি। সার্কাস ময়দানে একটি বহুতলের মালিককে আইনি নোটিশ দেওয়া আছে। তবে, আবাসনগুলি যথেষ্ট মজবুত করেই তৈরি হয়েছে বলে শুনেছি। দুর্ঘটনার আশঙ্কা নেই”।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy