বর্ধমানের বিসি রোডে খাঁ-খাঁ হকার্স কর্নার। শুক্রবার সকালে। ছবি: উদিত সিংহ
গোলাপবাগ মোড়ে রাস্তার ধারে বাদাম নিয়ে বসেছিলেন নিরঞ্জন বিশ্বাস। তাঁর দাবি, এমনিতে বিক্রি ভালই হয়। কিন্তু গত কয়েকদিনে ভাটা পড়েছে রোজগারে। তার পরেও পেটের টানে বসে রয়েছেন তিনি।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে যেখানে বাড়ির বাইরে বার হতে নিষেধ করছে সরকার। এড়াতে বলছে মানুষের সংস্পর্শ। সেখানে পসরা নিয়ে রাস্তায় বসে থাকা মানে তো প্রাণের ঝুঁকি? নিরঞ্জনবাবুর অবশ্য জবাব, ‘‘সব শুনছি। সবাই ভয় পাচ্ছে। কিন্তু এক দিন না বার হলে বাড়ির লোকগুলোকে খাওয়াব কী?’’
শুধু গোলাপবাগ নয়, সারা শহর জুড়ে লোকজন কম নেমেছেন রাস্তায়। উধাও পাড়ার মোড়ের ঠেক, চায়ের দোকানের জটলা। যাঁরা বেরিয়েছেন তাঁদের বেশির ভাগেরও মুখে ‘মাস্ক’। বাবুরবাগ মোড়ে শহরের বিখ্যাত চায়ের ঠেকে হাজার হাজার কাপ উড়ে যায় রোজই। সেখানকার ব্যবসায়ী শেখ ময়না বলেন, “গত কয়েকদিন ধরে ৬০ শতাংশ খরিদ্দার কমে গিয়েছে। ব্যবসা চালানোই মুশকিল।’’ একই অবস্থা পান বিক্রেতাদেরও। কাঞ্চননগরের বাসিন্দা বৈদ্যনাথ সেন বলেন, “রাস্তায় ঘুরে পান, বিড়ি বিক্রি করি। ৩০-৩৫ জন বাঁধা পানের খরিদ্দার ছিলেন। গত কয়েদিন ধরে দু’জন ছাড়া কেউ আসছেন না।’’
বেশিরভাগ হকার, ফেরিওয়ালা জানাচ্ছেন, স্কুল, কলেজ, আদালত বন্ধ। রাস্তায় লোকজন নেই। তাঁদেরও খরিদ্দার নেই। তবু কিছুটা যদি বিক্রি হয়, সে আশা নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন তাঁরা। বর্ধমান স্টেশনে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন নমন ভগত। তাঁর কথায়, “স্টেশনে প্রায় লোকই নেই। কী খাব সেই চিন্তা মাথায় ঘুরছে।’’ আনাজ বিক্রেতা মোহন দত্ত ভ্যান নিয়ে বাড়ি বাড়ি ফেরি করেন। তাঁর কথায়, “মহিলারা বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে আনাজ কিনতেন। দু’দিন ধরে সব দরজা বন্ধ। ডাকলেও সাড়া পাচ্ছি না। আনাজ নষ্ট হচ্ছে।’’
বিসি রোডের দু’পাশে ফি বছর চৈত্র সেলের বড় বাজার বসে। কেনাবেচার মাঝে ঘুগনি, ফুচকারও বিক্রি চলে রমরমিয়ে। কিন্তু দু’দিন ধরে রাস্তায় লোকজনের দেখা পাওয়াটাই বিরল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক ফুচকা বিক্রেতার কথায়, “বুঝছি, বিপদ। কিন্তু কী খাব সেটাই চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মহাজনের কাছে ধার বেড়েই চলেছে।’’ একই কথা শোনালেন আলমবাজারের শঙ্কর সিংহ, উত্তর ফটকের হকার্স কর্ণারের শ্যামল পালেরা। তাঁরা বলেন, “এখন বিক্রি হচ্ছে না বলে মহাজনের কাছে ধার বাকি থেকে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের আতঙ্ক কাটিয়ে লোকজন যখন রাস্তায় নামবে তখন আমাদের কাছে মাল কেনার টাকা থাকবে না। দু’দিক থেকেই বিপদ আমাদের।’’
প্রতি শুক্রবার বর্ধমানের পারবীরহাটায় তাঁতের হাট বসে। সেটাও বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। ওই হাটকে ঘিরে থাকা একাধিক ফেরিওয়ালা বলেন, “তিন-চারদিন ধরে বিক্রি নেই। বলতে গেলে আধপেটা খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। হাটে বিক্রির আশা ছিল। কিন্তু হাটই বন্ধ। কে আর কিনবে!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy