Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

নগদে টান, বাজারে ‘খরা’ ধনতেরসেও

ধনতেরসে ধাতুজাতীয় জিনিস কেনা শুভ বলে মনে করেন অবাঙালিরা। গত কয়েক বছরে বাঙালিরাও ঝুঁকেছেন এই রীতিতে। ফল, ধনতেরসের তিথি মেনে ভিড় হয় সোনার দোকানে।

বর্ধমান শহরের একটি দোকানে শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

বর্ধমান শহরের একটি দোকানে শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৯ ০০:৪০
Share: Save:

বিশ্বজোড়া মন্দা, সোনার চড়া দাম এবং বৃষ্টি— তিনের জাঁতাকলে ম্লান ধনতেরসের বাজার। পূর্ব বর্ধমানের স্বর্ণ শিল্পী এবং ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশের মত এমনটাই। তাঁদের দাবি, দৈনন্দিন খরচ সামলে সাধারণ মানুষের হাতে সোনা কেনার মতো উদ্বৃত্ত টাকা নেই। চাহিদা না থাকায় বাজারও নিম্নগামী।

ধনতেরসে ধাতুজাতীয় জিনিস কেনা শুভ বলে মনে করেন অবাঙালিরা। গত কয়েক বছরে বাঙালিরাও ঝুঁকেছেন এই রীতিতে। ফল, ধনতেরসের তিথি মেনে ভিড় হয় সোনার দোকানে। সোনা-রুপোর গয়না এমনকি, নতুন বাসনপত্রও কেনেন অনেকে। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা, বলছেন তাঁরা। ব্যবসায়ীদের দাবি, গত বারের চেয়ে ৩৫ শতাংশ কম সোনা বিক্রি হয়েছে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির প্রবীণ শিক্ষক অরূপকুমার চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “অর্থনীতিতে ঝিমুনি চলছে। টালমাটাল অবস্থা। সোনা কেনার চাহিদা নেই সাধারণ মানুষের মধ্যে।’’

বর্ধমান শহরে প্রায় বারোশো সোনার দোকান রয়েছে। বেশ কয়েকটি বহুজাতিক সংস্থার ‘শো-রুম’ও আছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর ধনতেরসের দিনে ২৫ কিলোগ্রামের বেশি সোনা বিক্রি হয়েছিল। এ বছর ব্যবসা মার খেয়েছে অনেকটাই। বর্ধমান সদর স্বর্ণশিল্পী ওয়েলফেয়ার সমিতির সম্পাদক স্বরূপ কোনারের দাবি, “নোটবন্দির চেয়েও বাজে অবস্থা। নোটবন্দির বছরেও সোনা কেনার চাহিদা ছিল, এ বার সেটা নেই। গত বছরের চেয়ে ৪০ শতাংশ ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।’’

বিসি রোডের এক দোকানের ম্যানেজারের কথায়, “২৫ বছর ধরে সোনার দোকান সামলাচ্ছি। এত বাজে অবস্থা আগে দেখিনি।’’ ব্যবসায়ীদের দাবি, ধনতেরসের আগে বাজারের খরা কাটার একটা সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু নিম্নচাপের জেরে টানা বৃষ্টিতে তা-ও মাঠে মারা গেল। তাঁরা জানাচ্ছে, ৭০ হাজার টাকার উপরে সোনার গয়না বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু তার নীচে গয়নার কাটতি নেই। চাহিদা নেই সোনার কয়েনেরও। কার্জন গেটের কাছে একটি বহুজাতিক সংস্থার শো-রুমের কর্ণধার সঞ্জীব চৌধুরীর কথায়, “ধনতেরসের মুখে বৃষ্টিতে অনেকেই বাড়ির বাইরে বার হচ্ছেন না। আমাদের দোকানও যতটা ভরার কথা, ততটা হচ্ছে না।’’

একই দাবি করছেন কাটোয়া, মেমারির সোনা ব্যবসায়ীদেরও। কাটোয়া শহরে তিনশোর বেশি সোনার দোকান রয়েছে। শহরের এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাধন দাস বলেন, “এ বার আশা করেছিলাম ২৫ শতাংশ ব্যবসা বাড়বে। সে জায়গায় গতবারের ব্যবসার ধারে কাছেও পৌঁছনো যায়নি।’’ জানা গিয়েছে, গত বছর কাটোয়া শহরে ধনতেরসের রাতে ৮-১০ কিলোগ্রাম সোনা বিক্রি হয়েছিল। আর এক ব্যবসায়ী সুখেন দত্তেরও দাবি, “ব্যবসা আশানুরূপ নয়।’’ কালনা শহরেও দোকান ফাঁকা। এক ব্যবসায়ী রবীন্দ্রনাথ দত্তের দাবি, “চাষির হাতে টাকা নেই। সোনার দোকানও মাছি তাড়াচ্ছে।’’

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক ভাস্কর গোস্বামীও বলেন, “দৈনন্দিন খরচ চালিয়ে মানুষের হাতে অতিরিক্ত টাকা নেই। সে জন্য সোনার দোকানেও ভিড় হালকা।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Dhanteras Gold
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy