সালানপুরে জমিতে কাজে ব্যস্ত চাষি। ছবি: পাপন চৌধুরী
টানা শুষ্ক আবহাওয়া শেষে পরপর কয়েক দিনের বৃষ্টি। স্বস্তি ফিরেছে শিল্পাঞ্চলবাসীর। সেই সঙ্গে এই বৃষ্টি হাসি ফুটিয়েছে চাষিদের মুখেও। আমন ধান থেকে নানা আনাজ মাঠেই না শুকিয়ে যায়, আশঙ্কায় ছিলেন তাঁরা। এই বৃষ্টি ফসল বাঁচাবে বলে মনে করছেন চাষিরা। তবে কৃষি দফতরের কর্তারা এখনও পুরোপুরি সন্তুষ্ট হচ্ছেন না। জেলা জুড়ে সার্বিক ভাবে ভাল বৃষ্টিপাত প্রয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরা।
পশ্চিম বর্ধমান কৃষি দফতরের উপ-কৃষি অধিকর্তা সাগর বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এই জেলায় প্রায় ৪৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়। সাধারণত জুলাই-অগস্টে ধান চাষের জন্য জেলায় ৩২৭ মিলিমিটার বৃষ্টির প্রয়োজন। এ বছর এখনও পর্যন্ত ১৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। জেলায় এই সময়ে আনাজ চাষ হয় প্রায় দু’হাজার হেক্টর জমিতে। সে জন্য প্রায় চারশো মিলিলিটার বৃষ্টি দরকার। সাগরবাবু বলেন, ‘‘গত কয়েক দিন ধরে যে টানা বৃষ্টি হয়েছে তাতে খুব সুবিধা হচ্ছে না। কারণ, এই বৃষ্টি জেলার সর্বত্র এক রকম ভাবে হচ্ছে না। আসানসোলে বৃষ্টি ভাল হয়েছে, কিন্তু দুর্গাপুরে কম হয়েছে। আবার কাঁকসায় আরও কম হয়েছে। ফলে, উঁচু জমিগুলিতে জলধারণ ঠিকমতো হচ্ছে না।’’
দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকার পরে বৃষ্টি নামতেই চাষিরা অবশ্য মাঠে নেমে পড়েছেন। সালানপুরের চাষি পরেশ গোপ বলেন, ‘‘বৃষ্টির অভাবে খুব চিন্তায় পড়েছিলাম। এখন তা দূর হয়েছে। ধানের বীজ বপনের জন্য এটা ভাল সময়। আনাজ চাষেও এই বৃষ্টি কাজে লাগবে।’’ খেতে জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় ব্লক কৃষি দফতরের কর্মীরা গ্রামে-গ্রামে ঘুরে কোন জমিতে কী ফসল বুনলে উপকার হবে, সেই পরামর্শ দিতে শুরু করেছেন বলে জানান সালানপুর ও বারাবনির ব্লক সহ-কৃষি আধিকারিক অবনীন্দ্রনাথ হেমব্রম।
অবনীন্দ্রনাথবাবু আরও জানান, এই বৃষ্টিতে জমি ধান গাছ বপনের জন্য উপকারী। ১৫ অগস্ট পর্যন্ত চাষিদের ধান বপন করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া অপেক্ষাকৃত উঁচু জমি বা জলধারণ ক্ষমতা কম এমন জমিতে এখনই আনাজ চাষ শুরু করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকোলি, লাউ, টমেটোর বীজ বপন করতে বলা হচ্ছে। যাঁরা ডাল চাষ করতে চান তাঁদের অড়হ ও কলাইয়ের বীজ লাগাতে বলা হচ্ছে। তাঁর মতে, জেলায় সালানপুর, বারাবনি-সহ নানা এলাকার মাটি ভুট্টা চাষের সহায়ক। ভুট্টা এখন বিভিন্ন অঞ্চলে রফতানি করা হয়। এর বাজারও বেশ ভাল। তাই এখানকার কৃষকদের ভুট্টা চাষ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। অবনীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘এমনিতেই এই এলাকা শুষ্ক, কৃষিকাজ তেমন হয় না। তাই এই বৃষ্টিতে যতটা সম্ভব ফসল বোনার কাজ সেরে নিতে বলছি চাষিদের।’’
তিন দিনের বৃষ্টিতে পুকুর ও কুয়োগুলিও ভরে উঠেছে। এই জল পরে সেচের কাজেও ব্যবহার করা যেতে পারে বলে আশা করছেন চাষিরা। বারাবনির লক্ষ্মণ বাউড়ির কথায়, ‘‘এই এলাকায় অধিকাংশ জমির জলধারণ ক্ষমতা প্রায় নেই বললেই চলে। তাই ধানের চেয়ে আনাজ চাষ করতেই আমরা বেশি আগ্রহী।’’ আনাজ চাষে উৎসাহ দিচ্ছে কৃষি দফতরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy