—ফাইল চিত্র
করোনা-অতিমারির প্রভাবে পশ্চিম বর্ধমানের মাঝারি এবং ক্ষুদ্রশিল্পে মন্দার ছায়া ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে বলে দাবি শিল্পোদ্যোগীদের একাংশের। এই আবহে এ বারের কেন্দ্রীয় বাজেটের দিকে তাকিয়েছিলেন তাঁরা। বাজেট দেখার পরে, কার্যত হতাশ শিল্পপতিদের বড় অংশ। তাঁদের দাবি, শিল্পাঞ্চলের অর্থনৈতিক বিকাশ ও শিল্পোন্নয়নে কোনও স্পষ্ট দিশা দেখাতে পারেনি কেন্দ্রীয় বাজেট।
পশ্চিম বর্ধমানের অর্থনীতির মূল ভিত্তিই হল ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। গত কয়েক দশকে জেলায় নতুন কোনও ভারী শিল্প গড়ে ওঠেনি। তবে বেসরকারি উদ্যোগে মাঝারি এবং ক্ষুদ্র শিল্পের প্রসার কিছুটা হলেও হয়েছে। অতিমারির ধাক্কায় এখন ধুঁকছে সেই শিল্প।
দক্ষিণবঙ্গের ১১টি জেলার শিল্পোদ্যোগীদের সংগঠন ‘ফেডারেশন অব সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়’-এর কার্যকরী সভাপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতানের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই বাজেট খুবই হতাশাজনক। মাঝারি, ক্ষুদ্র এবং অতি ক্ষুদ্র উদ্যোগপতিরা সম্পূর্ণ বঞ্চিত।’’ তিনি জানান, কুনস্তরিয়া শিল্পতালুকে বহু শিল্পোদ্যোগী ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র শিল্পস্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বাজেটে মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগীদের উৎসাহিত করার তেমন কোনও প্রস্তাব নেই। ফলে, ভবিষ্যতে এই শিল্পতালুকের কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল। রাজেন্দ্রবাবুর মতে, ‘‘আয়কর ছাড় বা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টি বাজেটে স্পষ্ট নয়। এতে পরোক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। কারণ, সাধারণ ক্রেতাদের উপরেই তাঁরা নির্ভরশীল।’’
সিমেন্ট প্রস্তুতকারী একটি সংস্থার কর্ণধার তথা পশ্চিম বর্ধমান জেলা ‘চেম্বার অফ কমার্স’-এর সভাপতি পবন গুটগুটিয়া জানান, অনুসারী শিল্পের উন্নতির জন্য সংশ্লিষ্ট শিল্পসংস্থাগুলির থেকে উপকরণ কেনার কথা জানিয়েছিল ইস্কো, রেল এবং ইসিএল। এতে শিল্পপ্রসারের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। এ বারের বাজেট দেখে তাঁর আক্ষেপ, ‘‘অতিমারির প্রভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শিল্পোদ্যোগীদের জন্য তেমন কোনও প্রকল্পের ঘোষণা নেই।’’
তবে ভিন্ন মতও রয়েছে। এ বারের কেন্দ্রীয় বাজেটে অতিমারির সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার দিশা রয়েছে বলে মনে করছেন মাঝারি ইস্পাত সংস্থার কর্ণধার সুভাষ আগরওয়াল। তিনি বলেন, ‘‘পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে। মোটের উপরে বাজেট ভালই।’’ তবে আমদানি শুল্ক প্রায় সাড়ে সাত শতাংশ কমায় লোহার আমদানি বাড়বে বলে তাঁর আশঙ্কা। তাতে দেশীয় ইস্পাত শিল্পের ক্ষতি হতে পারে বলে মনে করছেন সুভাষ। তাঁর মতে, ‘‘লৌহ আকরিকের দাম নিয়ন্ত্রণ করা উচিত ছিল। তাতে ইস্পাত শিল্প উপকৃত হত।’’ ‘দুর্গাপুর চেম্বার অব কমার্স-’এর সভাপতি কবি দত্তের খেদ, ‘‘পর্যটন শিল্পের উফরে হোটেল ব্যবসা ও স্থানীয় অর্থনীতি নির্ভরশীল। বাজেটে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের তেমন কোনও দিশা মেলেনি। আত্মনির্ভর হওয়ার যে স্বপ্ন দেখানো হয়েছে, তার বাস্তবায়নের রূপরেখা দেখা গেল না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy