প্রতীকী ছবি
‘এগিয়ে যান’, শুনে অনেক পরে এসেও একেবারে লাইনের শুরুতে পৌঁছে গেলেন এক রোগী। আর সঙ্গে সঙ্গে দাবি, ‘দিন পাঁচশো টাকা’। কাটোয়া শহরে বিভিন্ন চিকিৎসকদের চেম্বারে ডাক্তার দেখাতে এসে এমনই ‘দালাল-রাজের’ সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ রোগী এবং তাঁদের পরিজনদের। বিষয়টি স্বীকার করেছে ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর (আইএমএ) কাটোয়া শাখাও।
কাটোয়ার কাছারি রোড, স্টেশনবাজার ও সার্কাস ময়দানের রাস্তা লাগোয়া এলাকায় রয়েছে বহু ডাক্তারদের চেম্বার। ওই সব চেম্বারে ভিড় জমান আশপাশের নানা গ্রাম, মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম, পূর্বস্থলী ও মুর্শিদাবাদের সালারের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা। ‘দালাল-দৌরাত্ম্য’ প্রসঙ্গে আইএমএ-র কাটোয়া শাখার সভাপতি পরেশনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কাটোয়ায় ৭০-৮০ জন চিকিৎসকের চেম্বার রয়েছে। সেখানে রোগীদের আনতে বা লাইনের জায়গা বিক্রি করছেন কয়েকজন, এমন মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। লিখিত অভিযোগ পেলে পদক্ষেপ করা হবে।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডাক্তারেরা অবশ্য বলেন, ‘‘দালাল-রাজের কথা জানা নেই। তেমন হলে প্রশাসন পদক্ষেপ করুক।’’
একটু দূর থেকে যাঁরা চিকিৎসা করাতে আসছেন, তাঁরা সকাল ৭টার আগে কাটোয়া পৌঁছতে পারেন না। অথচ, বেশ কয়েকজন ডাক্তার আছেন, যাঁদের চেম্বারে রাত ৩টে থেকে লাইন পড়ে। বিভিন্ন রোগীর পরিবারের অভিযোগ, এই পরিস্থিতিরই ‘সুযোগ’ নেয় দালালেরা। তারা লাইন দিয়ে জায়গা ধরে রাখে। রোগী দেখলেই তাঁদের কাছে ‘জায়গা বিক্রি’র প্রস্তাব দেওয়া হয়।
সালার থেকে ছেলেকে কাটোয়ার কাছারি রোডের এক শিশু বিশেষজ্ঞকে দেখাতে এসেছিলেন রাকেশ শেখ, আঙুর শেখ নামে দু’জন। তাঁদের কথায়, ‘‘শহরে পৌঁছে চেম্বারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছি। আচমকা, এক জন এসে বললেন, ‘এগোন’। এগিয়ে যেতেই ওই ব্যক্তি পাঁচশো টাকা চাইলেন।’’ ওই এলাকারই অন্য এক শিশু বিশেষজ্ঞ এবং অস্থি চিকিৎসকের চেম্বারকে কেন্দ্র করেও এমন দালাল-চক্র বাড়ছে বলে অভিযোগ রোগীর পরিবারের একাংশের। দাঁইহাট থেকে মেয়েকে ডাক্তার দেখাতে আসা আলপনা ঘোষের কথায়, ‘‘লাইনের বদলে আমার কাছ থেকে চারশো টাকা চাওয়া হয়েছে।’’ চারশো টাকার বিনিময়ে ওই অস্থি চিকিৎসকের চেম্বারের লাইনে কার্যত দাঁড়াতেই হয়নি বলে জানান সালারের মহাজনপট্টির পরিমল সাহা ও নদিয়ার কালিকাপুরের কিশোর দত্তেরা। একই ছবি এক মেডিসিন-বিশেষজ্ঞ এক ডাক্তারের চেম্বারকে কেন্দ্র করেও।
তবে এ তো গেল চিকিৎসকদের চেম্বারকে কেন্দ্র করে অভিযোগ। স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড ও ভাগীরথীর ঘাটে নামা রোগী ও তাঁদের পরিজনদের একাংশের আবার অভিযোগ, ভুল বুঝিয়ে কিছু ‘হাতুড়ের’ কাছে নিয়ে যান ওই দালালেরা। বদলে, ওই সব হাতুড়েদের থেকে দালালেরা ‘কমিশন’-ও নেন বলে দাবি তাঁদের।
শহরবাসীর একাংশের অভিযোগ, স্থানীয় অটো এবং টোটোচালকদের একাংশ দালালের ভূমিকা পালন করছেন। তবে কাটোয়ার রিকশা চালক ইউনিয়নের সম্পাদক রায়হান শেখ বলেন, ‘‘এমন কোনও অভিযোগ মেলেনি।’’ টোটো ইউনিয়নের কাটোয়া শাখার সভাপতি রণজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘দীর্ঘদিন ধরেই এমন দালাল-চক্র চলছে। কিন্তু কোনও টোটো চালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেনি। তেমন কোনও অভিযোগ ও প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্ট টোটো চালকের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ভাবে পদক্ষেপ করা হবে।’’ ভারপ্রাপ্ত মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক রতন শাসমলের দাবি, ‘‘রোগীরাও সচেতন হয়ে উঠুন। তা হলে এই দালাল-দৌরাত্ম্য কমবে। এই চক্র এড়াতে হাসপাতালে আসুন।’’ পাশাপাশি, কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের আশ্বাস, ‘‘লিখিত অভিযোগ পেলে স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যৌথ ভাবে অভিযান চালানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy