Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪

বিজেপি ভোট নিয়েই হিসেব দু’দলে

লোকসভা ভোটে প্রায় ২০ শতাংশ পদ্মফুল ফুটেছিল এ আসনে। রাজ্যের শাসক-বিরোধী সব পক্ষই দাবি করেছিলেন, পুরোটাই ক্ষণিকের মোদী ম্যাজিক। তবে বিধানসভা ভোটের আগে পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রে ওই কুড়ি শতাংশ নিয়েই টানাটানি পড়ে গিয়েছে দু’তরফে।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৬ ০১:১২
Share: Save:

লোকসভা ভোটে প্রায় ২০ শতাংশ পদ্মফুল ফুটেছিল এ আসনে। রাজ্যের শাসক-বিরোধী সব পক্ষই দাবি করেছিলেন, পুরোটাই ক্ষণিকের মোদী ম্যাজিক। তবে বিধানসভা ভোটের আগে পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রে ওই কুড়ি শতাংশ নিয়েই টানাটানি পড়ে গিয়েছে দু’তরফে।

জোট ও তৃণমূল দুই শিবিরেরই দাবি, গত পাঁচ বছরে বহু নেতা-কর্মী বিজেপি ছেড়ে অন্য দলে যোগ দিয়েছেন। পদ্মে কাঁটা হয়ে দেখা গিয়েছে গোষ্ঠী কোন্দলও। ফলে এ বারের বিধানসভা সভা ওই কুড়ি শতাংশ নিয়ে অঙ্ক কষছে দু’পক্ষ।

২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী প্রদীপ সাহাকে ২১৯৩ ভোটে হারিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী তপন চট্টোপাধ্যায়। বিজেপি প্রার্থী স্বপন ভট্টাচার্য ভোট পেয়েছিলেন ১৭২২২টি। শতাংশের হিসেবে তৃণমূল ও কংগ্রেস জোট ৪২.৬৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। সেখানে বামেদের পকেটে এসেছিল ৪১.৩৫ শতাংশ। বিজেপি প্রার্থী দশ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পেয়েছিলেন। সিপিএমের দাবি, এ বার কংগ্রেসের ভোট তাদের দিকে আসবে। সঙ্গে জুড়বে বিজেপির ভোটের কিছুটা। সবমিলিয়ে তৃণমূলের হার নিশ্চিত বলেই তাদের দাবি। তৃণমূল আবার উল্টো যুক্তি দিয়েছে। দলের নেতাদের কথায়, উপরে জোট হলেও কংগ্রেসের নিচুতলার কর্মীরা তা মানতে পারেননি। ফলে সেই ভোট তৃণমূলের ঘরে আসবে। সঙ্গে উন্নয়নের সঙ্গী হতে আসবে বিজেপি ভোট। বলা যায়, বিজেপি ভোট ঘরে তুলতে পারলেই জয়ের আশা দেখছেন দু’পক্ষ।

এই কেন্দ্রে অবশ্য বরাবরই বিজেপির ভাল ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটেও ১৯.৪৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপি। সেখানে বামফ্রন্টের ভোট ছিল ৩৩.১৬ শতাংশ ও তৃণমূলের ভোট ছিল প্রায় ৪২ শতাংশ। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও কালেখাঁতলা ১ পঞ্চায়েতে একক ভাবে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। নিমদহ পঞ্চায়েতে বামাদের সঙ্গে জোট গড়ে তারা বোর্ড দখল করে। লোকসভা ভোটেও ৩৫ হাজারের বেশি ভোট মিলেছিল বলে বিজেপি নেতাদের দাবি। তবে সবথেকে বেশি ভোট তারা পেয়েছিলেন ১৯৯১ সালে। সে বার প্রায় ৩০ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন তারা। যদিও তারপর থেকে ভোট ব্যাঙ্ক কমতে থাকে। গত লোকসভা ভোটে সিপিএমের থেকে প্রায় ১৫৮৪২ ভোটে এগিয়ে যায় তৃণমূল।

তবে বিধানসভার তুলনায় লোকসভা ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে ব্যবধান প্রায় আট গুন বেড়ে যাওয়াকে বাড়তি সুবিধা বলে মানতে নারাজ সিপিএম। তাদের দাবি, লোকসভায় ভোটারদের সন্ত্রস্ত করে রেখে ভোট লুঠ করেছিল তৃণমূল। এ বারে পরিস্থিতি পৃথক বলেও তাদের দাবি। এ ছাড়া সিপিএম প্রার্থী প্রদীপ সাহা গত বার ভোটে হারার পরে মিথ্যে মামলায় দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন। পরে আদালতে বেকসুর খালাস পেয়ে এ বারেরও প্রার্থী তিনি। বিনা অপরাধে এত দিন জেল খাটার জন্য ভোটারদের সহানুভূতি তাঁর দিতে থাকবে বলেও সিপিএমের দাবি। প্রসঙ্গত, জেলা থাকাকালীনও পঞ্চায়েত ভোটে প্রদীপবাবুর পঞ্চায়েত এলাকার সবক’টি আসন পেয়েছিল বামেরা। ফলে জেলে থাকার কোনও বিরূপ প্রভাব তাঁর জনসমর্থনে পড়েনি বলেও সিপিএমের দাবি। পূর্বস্থলী জোনাল কমিটির সম্পাদক সুব্রত ভাওয়ালের দাবি, ‘‘গত দু’বছরে বিজেপির মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে। ভোটারদের একাংশ তা নিয়ে বীতশ্রদ্ধ। ধরে নেওয়া যায়, ওই ভোট আমরাই পাব।’’ এ ছাড়া শাসকদলের একাংশের ভোটও সিপিএমের দিকে আসবে বলেও তাঁদের দাবি।

তৃণমূল নেতারা অবশ্য অন্য দলের ভোট কাটার থেকে উন্নয়নকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। তাঁদের দাবি, গত পাঁচ বছরে এলাকায় দুটি আইটিআই কলেজ, কিসান মান্ডি হয়েছে। পাখিরালয়কে ঢেলে সাজানো হয়েছে। কর্মতীর্থ, ফ্লাড সেন্টার, বিএলআরও কার্যালয় তৈরিও হয়েছে। বিজেপি থেকে গত পাঁচ বছরে বহু নেতা-কর্মী তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বলেও তাদের দাবি। তৃণমূল প্রার্থী তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছর ধরে অনেকে বিজেপি ছেড়ে এসেছেন। যাঁরা আছেন তাঁদের একাংশও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। ফলে বিজেপির ভোট ব্যাঙ্ক এখন তৃণমূলের।’’ পাশাপাশি মেড়তলা, পাটুলি, কালেখাঁতলা এলাকার বাম নেতা কর্মীরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বলেও তাঁর দাবি।

আর যাদের নিয়ে টানাটানি সেই বিজেপি নেতারা অবশ্য ভোট ব্যাঙ্ক হারানোর কথা হেলায় উড়িয়ে দিয়েছেন। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তথা এই কেন্দ্রের প্রার্থী স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কয়েকজন নেতা কর্মী দলত্যাগ করতে পারেন। তবে ভোটারেরা দলেই রয়ে গিয়েছেন। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’

এখন জবাব দেবে ভোটবাক্স।

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy