দেওয়াল লিখনেও উঠছে জ্বালানির দামের প্রসঙ্গ। ছবি: উদিত সিংহ
চিত্র ১: বুথ সভাপতিদের নিয়ে ভোটের কৌশল ঠিক করতে সভা চলছে। আলোচনার মধ্যেই এক বুথ সভাপতি জেলা নেতৃত্বের কাছে অনুযোগ করলেন, ‘‘আমাদের দলের প্রতি অনেক মানুষের সহানুভূতি রয়েছে। কিন্তু গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ার পর থেকে সাধারণ মানুষ সে নিয়ে জানতে চাইছেন। আমারও প্রশ্ন, গ্যাসের দাম কি কমবে না?’’
চিত্র ২: সাংগঠনিক সভা চলছে বিজেপির বর্ধমানের জেলা দফতরে। সই সভাতেও উঠল জ্বালানির দাম নিয়ে প্রশ্ন। অনেক নেতা-কর্মীই অভিযোগ তুললেন, জ্বালানির দাম নিয়ে প্রশ্নের জেরে প্রচারে যাওয়াই মুশকিল হচ্ছে। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে এক সাংসদ আশ্বাস দেন, শীঘ্রই জ্বালানির দাম কমবে।
জ্বালানির দাম নিয়ে দলের অন্দরে এমনই নানা ‘অস্বস্তিকর’ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে পূর্ব বর্ধমান জেলা বিজেপি সূত্রের দাবি। শুধু দলের অন্দরে নয়, প্রচারের সময়েও দেখা যাচ্ছে তেমন চিত্র। সম্প্রতি মেমারি শহরে প্রচারে বেরিয়েছিলেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা। এক বর্ষীয়ান নেতাকে ধরে এক ব্যবসায়ী দাবি করেন, ‘‘পেট্রল-ডিজ়েলের দামটা কমানোর চেষ্টা করুন। মূল্যবৃদ্ধি তো রুখতেই পারছে না কেন্দ্রে আপনাদের সরকার।’’ রবিবার বর্ধমান শহরে বিজেপি কয়েকটি পথসভা করে। সেখানেও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
বিজেপি সূত্রের দাবি, ‘ড্রপ বক্স’ নিয়ে পাড়ায়-পাড়ায় ঘুরছেন দলের নেতা-কর্মীরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ‘বাংলা গড়তে’ পরামর্শ চাওয়া হচ্ছে। সেখানেও ঘুরেফিরে জ্বালানির প্রশ্ন আসছে। তাতে অস্বস্তিতে পড়ছেন দলের নিচুতলার কর্মী-সমর্থকেরা। এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘বুথ থেকে মণ্ডল, বিধানসভা থেকে জেলা— প্রতিটি সাংগঠনিক সভাতেই জ্বালানি বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। বর্ধমান সদর কার্যালয়ে সভা তো এ নিয়ে তেতে উঠেছিল। সাংসদ-নেতা দিন পনেরোর মধ্যে দাম কমার আশার কথা শুনিয়েছিলেন। সে সময়ও তো পেরিয়ে যাচ্ছে।’’ বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, রবিবার সন্ধ্যায় বুথ সভাপতিদের নিয়ে জেলা নেতৃত্বের বৈঠকেও একই প্রশ্ন উঠে আসে। বিষয়টি এড়িয়েই বৈঠক সারেন নেতারা। বিজেপির বেশ কয়েকজন বুথ সভাপতির দাবি, ‘‘ভোটের আগে জ্বালানির দাম না কমলে, প্রচারে বড় প্রশ্নের মুখে দাঁড়াতে হবে, বুঝতে পারছি।’’
রবিবারই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগে তৃণমূল মিছিল করে। বর্ধমান শহরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডে সাইকেল মিছিল করে তৃণমূল। বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল প্রার্থী খোকন দাসের অভিযোগ, ‘‘জ্বালানির দাম বাড়ায় সাধারণ হেঁশেলে আগুন লেগেছে। মানুষ সেটা ভালই টের পাচ্ছেন।’’ সিপিএম জ্বালানির দাম নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য, দুই সরকারকে বিঁধছে। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘দুই সরকারই মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে, উৎপাদন শুল্ক ও করের বোঝা চাপিয়েছে। তাতেই মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা।’’ কাটোয়ার তৃণমূল প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের যদিও দাবি, “জ্বালানির দাম কমাতে মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগী হয়েছেন। এক টাকা সেস ছাড় দিয়েছেন। বিজেপি সাধারণ মানুষের কথা ভাবছে না।’’
জেলা বিজেপির কার্যকরী সমিতির সদস্য কল্লোল নন্দনের আবার দাবি, “রাজ্য সরকারের অনিচ্ছার জন্যই পেট্রল-ডিজ়েলকে জিএসটি-র আওতায় আনা যাচ্ছে না। তা আনা গেলে, দাম কমবে।’’ বিজেপির জেলা (বর্ধমান সদর) সভাপতি অভিজিৎ তায়ের দাবি, ‘‘রাজ্য সরকার অনেক বেশি সেস আদায় করছে। জ্বালানি জিএসটি-র আওতায় আনতে তৃণমূলের সরকারকে সরাতে হবে।’’ বিজেপি নেতাদের অনেকের আশা, ভোটের আগে জ্বালানির দাম কমবে। দলের কর্মীদের একাংশের দাবি, তা না হলে জ্বালানির আগুনের আঁচ ভোটে পড়ার আশঙ্কায় থাকতে হচ্ছে তাঁদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy