Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

‘মণ্ডপের দিকে আর যাই না’

বছরখানেক আগে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বার্নপুরের বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কারখানা। সেই সময়ে স্থায়ী শ্রমিকেরা ক্ষতিপূরণ এবং অন্য বকেয়া পেয়েছিলেন। কিন্তু এক পয়সাও পাননি প্রায় আড়াইশো ঠিকা শ্রমিক।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৯ ০০:১০
Share: Save:

বছর কয়েক আগে কারখানা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু বন্ধ হয়নি পাড়ার পুজো। ঝলমলে মণ্ডপ, আলোকসজ্জা, আনন্দ আবহ সবই আছে আগের মতো। কিন্তু এ সবের মধ্যে থেকেও অনেক দূরে কোথাও যেন ওঁরা। ওঁরা আসানসোল শিল্পাঞ্চলের বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানার প্রাক্তন ঠিকা শ্রমিক। তাঁরা জানান, উৎসবের আলো আর তাঁদের জীবনে পড়ে না।

বছরখানেক আগে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বার্নপুরের বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কারখানা। সেই সময়ে স্থায়ী শ্রমিকেরা ক্ষতিপূরণ এবং অন্য বকেয়া পেয়েছিলেন। কিন্তু এক পয়সাও পাননি প্রায় আড়াইশো ঠিকা শ্রমিক। তেমনই এক জন গঙ্গা সেনগুপ্ত। কর্মী আবাসনে বসে তিনি বলছিলেন, ‘‘২৮ বছর কাজ করেছি কারখানায়। কারখানার ধুলো, ধোঁয়া, যন্ত্রের প্রতি টান কারও চেয়ে কম নয় আমাদের। অথচ, এক দিনের একটা নোটিস। কার্যত ঘাড়ধাক্কা খেয়ে বেরিয়ে যেতে হল।’’

গঙ্গাবাবু যখন কথাগুলো বলছিলেন, সেই সময়ে অদূরের আবাসন কলোনির মণ্ডপ থেকে ভেসে আসছিল ঢাকের বোল। ঠিকাকর্মীরা জানান, একসময়ে কারখানার শ্রমিকেরাই পুজো করতেন। এখন তা একটি বাইরের ক্লাব করে। ‘পুজো মানে রোজগারেও টান!’, বলছিলেন গঙ্গাবাবু, বিভু দাশগুপ্তের মতো ঠিকাকর্মীরা। তাঁদের কথায়, ‘‘পুজোয় তো সব ছুটি থাকে। আমরা এখন শ্রমিক থেকে দিনমজুর। ছুটির জন্য প্রতিদিনের ভাত-ডাল জোগাড় করতেই নাভিশ্বাস ওঠে।’’ আর জামাকাপড়? পাশ থেকে এক ঠিকাকর্মীর স্ত্রী বলেন, ‘‘বহু দিন ছেলেমেয়েরা নতুন জামাকাপড় কী, তা চোখেই দেখেনি।’’

বার্ন স্ট্যান্ডার্ডে ‘প্রাক্তন’ ঠিকাশ্রমিকদের কথাগুলোরই যেন প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছিল হিন্দুস্তান কেব্‌লস চত্বরেও। সেখানের শ্রমিক কল্যাণ ঘোষের আক্ষেপ, ‘‘২০১৭-য় কারখানা বন্ধের সময় প্রায় ২৪২ জন ঠিকা শ্রমিকের প্রায় ৩১ মাসের বেতন বাকি ছিল। বকেয়া চেয়ে আদালতের কড়া নাড়ছেন সবাই। আমাদের হাল দিনমজুরের থেকেও খারাপ। পুজোর আনন্দ অনেক দূরে চলে গিয়েছে।’’

প্রাক্তন ঠিকাকর্মী শুকদেব মির্ধা ওই চত্বরে দাঁড়িয়েই তিনি যেন ছুঁতে চান অতীত: ‘‘বছর কয়েক আগে পুজোর চার দিন সারাক্ষণ কেটে যেত পুজোর মাঠে। বাড়ি ফেরার যেন সময়ই থাকত না।’’ আর এখন? শুকদেববাবুর আক্ষেপ, ‘‘মণ্ডপের দিকে আর যাই না। সবাই আমাদের কথা জানেন, আশ্বাসও দেন। কিন্তু উৎসবের মুখেও আশার কথা তো কিছুই শুনিনি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy