হাসপাতালে কর্তারা। নিজস্ব চিত্র
অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা না করে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া রোগীর মৃত্যু নিয়ে নড়াচড়া শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে শুক্রবার ভাতার স্টেট জেনারেল হাসপাতালে যান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) জয়রাম হেমব্রম ও ডেপুটি সিএমওএইচ (২) সুবর্ণ গোস্বামী। তাঁরা জানান, তদন্ত রিপোর্ট স্বাস্থ্যভবনে জমা দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য ভবনের দাবি, ওই রিপোর্ট পাওয়ার পরে দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা (ডিএইচএস) সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, “ঘটনার কথা শুনেছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সিএমওএইচ তদন্তে গিয়েছেন।’’ এ দিনই বিএমওএইচ (ভাতার)-সহ হাসপাতালের কর্মীদের ব্যবহার নিয়ে জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে তীব্র ক্ষোভ জানান স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য পার্থসারথী মণ্ডল ও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। বিএমওএইচ সঙ্ঘমিত্রা ভৌমিক অবশ্য কোনও প্রসঙ্গেই মন্তব্য করতে চাননি।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ ভাতার স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন মনিকা কোঁড়া। বর্ধমানের পারবীরহাটা থেকে সপরিবার ভাতারের একটি গ্রামে বোরো ধান কাটতে গিয়েছিলেন তিনি। পরিজনেদের দাবি, তাঁকে ভর্তি করার দু’ঘণ্টার মধ্যে ছেড়ে দিয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অভিযোগ, হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করার জন্য আর্জি জানান তাঁরা। কিন্তু হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, তাঁদের পক্ষে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। বাইরে থেকে নিতে বলা হয়। মৃতের ভাই রাজু কোঁড়ার দাবি, “হাত জোড় করে ওঁদের বলি, আমাদের কাছে অত টাকা নেই। আপনারাই ব্যবস্থা করে দিন। তখন ওঁরা বলেন, ‘ট্রেনে করে বর্ধমানে নিয়ে যান’। সেই মতো ভাতার স্টেশনে নিয়ে আসার কিছুক্ষণ পরেই দিদি মারা যান।’’ মৃতার স্বামী অসিত কোঁড়ারও দাবি, “অ্যাম্বুল্যান্স পেলে হঠাৎ করে মেনকা মারা যেত না।’’
তদন্তের শেষে জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা মনে করছেন, মেনকা মুমূর্ষু রোগী ছিলেন না। তাহলে হেঁটে হেঁটে ভাতার হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে টোটো ধরে স্টেশন পর্যন্ত যেতে পারতেন না। হাসপাতালের নথি অনুযায়ী, রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার জন্য তাঁকে ভর্তি নেওয়া হয়। শর্করা ও রক্তচাপ ঠিক হয়ে যাওয়ার পরে পরিজনেদের সম্মতিতেই তাঁকে ছাড়া হয়। তদন্তকারীদের ধারণা, অত্যন্ত গরমের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওই মহিলা মারা গিয়েছেন। তবে ময়না-তদন্তের আগে শেষকৃত্য হয়ে যাওয়ায় প্রকৃত কারণ বিশ্লেষণ করা যাচ্ছে না।
ভাতার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘রেফার’ হওয়া রোগীকে অন্য হাসপাতালে পাঠানোর জন্য সরকারের তরফে অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়া হয় না। মাতৃযান বা নিশ্চয়যান ব্যবহার করা হয় গর্ভবতী, প্রসূতি ও এক বছরের শিশুদের জন্য। তবে যে কোনও হাসপাতালই মুমূর্ষু রোগীদের ক্ষেত্রে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে দেয়, সে জন্য রোগীর পরিবারকেই তেলের দাম দিতে হয়। ভাতার হাসপাতালও গত কয়েক মাসে পাঁচ-ছ’জন রোগীকে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। ডেপুটি সিএমওএইচ (২) সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, “ওই রোগী মুমূর্ষু ছিলেন না। সে কারণে কারও মনে হয়নি, তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। ঘটনাচক্রে হঠাৎ করে মারা গিয়েছেন।’’
অভিযোগ উঠছে, ভাতার হাসপাতাল চত্বরে থাকা একটি মাত্র অ্যাম্বুল্যান্স রোগীর পরিবর্তে বর্ধমান থেকে ওষুধ, চিকিৎসার সরঞ্জাম নিয়ে আসাযাওয়া করে। বিএমওএইচকেও যাতায়াত করতে দেখা গিয়েছে তাতে। ভাতার পঞ্চায়েতের সদস্য পার্থসারথী মণ্ডলের অভিযোগ, “বিএমওএইচ নিজের ইচ্ছামতো হাসপাতাল চালান। রোগী ও তাঁর পরিজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।’’ এলাকার বাসিন্দারাও হাসপাতাল কর্মীদের দুর্ব্যবহার নিয়ে জেলার স্বাস্থ্য কর্তাদের কাছে অভিযোগ জানান। স্বাস্থ্য কর্তাদের দাবি, হাসপাতালে সবেধন নীলমনি একটিই গাড়ি—ওই অ্যাম্বুল্যান্স। সে জন্য সব কিছু বহন ওই অ্যাম্বুল্যান্সকেই করতে হয়। ডেপুটি সিএমওএইচের অবশ্য দাবি, “ওই অ্যাম্বুল্যান্স খারাপ হয়ে গিয়েছে। শীঘ্রই সারাতে দেওয়া হবে।’’
এ সব নিয়ে মুখ খোলেননি বিএমওএইচ সঙ্ঘমিত্রা ভৌমিক। তিনি বলেন, “যা জবাব দেওয়ার সিএমওএইচকে দেব।’’ সিএমওএইচ জানান, সবটাই স্বাস্থ্যভবনে রিপোর্ট করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy