Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
পালিতপুরে স্পঞ্জ আয়রন কারখানা নিয়ে চিন্তায় পুলিশ
Sponge Iron Factory

দু’মাসে চার কারখানায় চুরি

পালিতপুরে আরও একটি কারখানায় চুরি চিন্তা বাড়িয়েছে পুলিশের।

চুরির পরে, পালিতপুরের ওই কারখানার ভিতরে। নিজস্ব চিত্র

চুরির পরে, পালিতপুরের ওই কারখানার ভিতরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৫৬
Share: Save:

তিনটি স্পঞ্জ আয়রন কারখানায় চুরির অভিযোগে আট জন জেলে। তার পরেও পালিতপুরে আরও একটি কারখানায় চুরি চিন্তা বাড়িয়েছে পুলিশের।

পুলিশের দাবি, রবিবার শ্রমিক সেজে নিরাপত্তা রক্ষীকে ফাঁকি দিয়ে পালিতপুরের ওই স্পঞ্জ আয়রন কারখানার ভিতরে ঢুকেছিল কয়েকজন দুষ্কৃতী। রাত হতেই কর্মী, রক্ষীকে আটকে লুটপাট চলে। শ্রমিকদের অভিযোগ, দূরে ম্যাটাডর রাখা ছিল। মাঠ পার করে ম্যাটাডরে উঠে তামার জিনিস নিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। পুলিশ জানিয়েছে, প্রথমে টোটো করে বর্ধমানের গুদামে চোরাই মাল দেওয়া হয়েছিল, তার সন্ধান মিলেছিল। বাকি জিনিস কাটোয়া হয়ে ভাগীরথী পার করে নদিয়া অথবা বাঁকুড়ার দিকে চলে যেতে পারে, অনুমান পুলিশের।

গত দু’মাসে পালিতপুর ও লাগোয়া এলাকায় এই নিয়ে চারটি চুরির ঘটনা ঘটেছে। যদিও একটি কারখানায় দুষ্কৃতীরা ঢুকলেও কিছু নিয়ে পালাতে পারেনি বলে দাবি পুলিশের। পাঁচ বছর আগেও এক শীতের রাতে পালিতপুরের একটি গ্যাস উৎপাদন কারখানায় লুটপাট হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল দু’জনের। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘আমরা ভেবেছিলাম, আর বোধ হয় ওই এলাকায় একই ভাবে চুরি হবে না। কিন্তু রবিবার রাতের ঘটনা চিন্তা বাড়িয়েছে। ওই এলাকায় টহল বাড়ানো হয়েছে।’’

পুলিশ জানিয়েছে, ২২ নভেম্বর পালিতপুরের কাছে হাটুদেওয়ানে একটি কারখানায় থেকে অ্যালুমিনিয়াম, লোহা, ব্যাটারি, তামা-সহ একাধিক জিনিস চুরি যায়। সপ্তাহখানেক পরে, বর্ধমান শহরের কাঁটাপুকুরের একটি গুদাম থেকে পুলিশ সেগুলি উদ্ধারও করে। ২৩ নভেম্বর আর একটি কারখানায় চুরির ঘটনা ঘটে। ১৮ ডিসেম্বর ফের পালিতপুরের শালগ্রামে একটি কারখানার গুদামের দেওয়াল কেটে ভিতরে ঢুকে কয়েক লক্ষ টাকার জিনিস নিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। এর পরে আরও একটি কারখানায় ‘হামলা’ চলে। সব ক’টি ঘটনা মিলিয়ে বর্ধমান থানা আট দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে। তারা এখন বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধানাগারে রয়েছে।

পুলিশের দাবি, আগের তিনটে ঘটনায় কারখানার কর্মীদের উপরে হামলা হয়নি। কিন্তু রবিবার নিরাপত্তারক্ষী ও কর্মীদের আটকে রেখে লুটপাট চালায় দুষ্কৃতীরা। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, কয়েকজন দুষ্কৃতী তামার তৈরি বড় বড় জিনিস (কপার মোল্ড টিউব) নিয়ে বাইরে ছুটে যাচ্ছে। প্রত্যেকের মুখ ঢাকা রয়েছে। কারখানার কর্মীদের একাংশের দাবি, তামার ওই সব জিনিসের ওজন কমপক্ষে ২২ কেজি। বাজারে এক-একটির দাম প্রায় ৩১ হাজার টাকা। ওগুলি ছাড়া, কারখানার ভাটি জ্বলবে না। কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই সব জিনিস তৈরির কাঁচামালের কিছু উপাদান বিদেশ থেকে আনতে হয়। চল্লিশটিরও বেশি তামার তৈরি জিনিস চুরি গিয়েছে বলে দাবি তাঁদের।

তদন্তে নেমে জেলা পুলিশের দাবি, কারখানায় বড় বড় পাঁচিল থাকায় টহলরত পুলিশকর্মী ভিতরে কী হচ্ছে বুঝতে পারেন না। চারটে ঘটনাতেই দেখা গিয়েছে, কয়েকজন দুষ্কৃতী শ্রমিকদের সঙ্গে মিশে থাকছে। কারখানার রক্ষীদের দাবি, এক-একটি শিফটে দু’শো-আড়াইশো জন কর্মী কাজ করেন। সবাইকে চেনা সম্ভব হয় না। আবার রাতভর বয়লার চলায় কারখার শেষ প্রান্তে গুদামে কী ঘটছে, অনেক সময়েই বুঝতে পারেন না শ্রমিকেরা। পুলিশের দাবি, এই জোড়া সুযোগই কাজে লাগিয়েছে দুষ্কৃতীরা। সঙ্গে শীতের রাতে মাফলার, টুপিতে মুখ ঢাকার সুবিধাও রয়েছে।

ওই এলাকার বাসিন্দা, তৃণমূলের জেলা পরিষদের সদস্য নুরুল হাসানের দাবি, “কারখানাগুলির কেউ ঘটনায় জড়িয়ে আছে কি না, সেটা বড় প্রশ্ন। তা না হলে শুধু তামার তৈরি জিনিস কোথায় রয়েছে বাইরের দুষ্কৃতীরা কী ভাবে খোঁজ পাবে? আশা করি, পুলিশ এই সব চুরির দ্রুত কিনারা করবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bardhaman Palitpur Theft Sponge Iron Factory
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy