চিকিৎসায় ব্যস্ত। নিজস্ব চিত্র
অবস্থানে অনড়। তবু হাসপাতালে আসা রোগীদের ফেরালেন না তাঁরা।
শুক্রবার আন্দোলনের পাশেই বেশ কিছু রোগীর চিকিৎসা করেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারেরা। ছিল পোস্টার, ‘রোগীরা আমাদের পাশে আসুন, আমরা আপনার পাশে আছি’। অন্য দিকে, দিনভর জরুরি বিভাগে পরিষেবা দিয়ে গেলেন হাসপাতাল সুপার ও অন্য সিনিয়র ডাক্তারেরা।
গত দু’দিনের মতো বহির্বিভাগের তালা খোলেনি এ দিনও। সকাল ১০টা থেকে অবস্থানে বসেন জুনিয়র ডাক্তারেরাও। তবে আগের দিন তালা ভেঙে জরুরি বিভাগ খোলা হয়েছে খবর পেয়ে এ দিন সকাল থেকেই ভিড় বাড়ে রোগীদের। পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরি বিভাগের একতলায় পাঁচ সিনিয়র চিকিৎসক সারি দিয়ে বসে রোগী দেখতে শুরু করেন। হাসপাতাল সুপার উৎপল দাঁকে সকাল ১০টা থেকে ঘণ্টা দুয়েক জরুরি বিভাগে চিকিৎসা করা, পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের খোঁজখবর নিতে দেখা যায়। তিনি বলেন, “রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। বহির্বিভাগে পুরনো টিকিট রয়েছে, এমন রোগীদেরও চিকিৎসা করা হয়েছে।’’ যদিও বিকেলে পরিস্থিতি পুনর্মূল্যায়নের বৈঠকে একাধিক বিভাগীয় প্রধানদের দাবি, সিনিয়র চিকিৎসকদের দিয়ে এ ভাবে বেশি দিন চালানো সম্ভব নয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন সিনিয়র চিকিৎসক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আন্দোলন চলায় কলেজের বেশ কিছু পরীক্ষা বাতিলও হয়েছে।
এ দিন ধর্না মঞ্চ থেকে শিশু, মেডিসিন, শল্য বিভাগের জুনিয়র ডাক্তারেরা রোগীদের সাহায্য করেন। প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন। সকালে বহির্বিভাগে জটিল রোগ নিয়ে আসা রোগীদের জরুরি বিভাগে পরিষেবা নেওয়ার কথা বলতেও দেখা যায় কয়েকজনকে। আন্দোলনকারীদের এক জন শুভ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “অনেক রোগী বা তাঁদের পরিবার আমাদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে ধর্নায় বসেছিলেন। অনেক সাধারণ মানুষও আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।’’ কলেজের অধ্যক্ষ ও হাসপাতাল সুপারের সহযোগিতাকেও পোস্টার দিয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাঁরা। ব্যক্তিগত ভাবে প্র্যাক্টিস করেন এমন অনেক চিকিৎসককেও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে জুনিয়রদের অবস্থানে দেখা গিয়েছে। কেউ কেউ গণ-ইস্তফা দেওয়া সমর্থন করেছেন। কেউ আবার প্রশাসন, সরকারের ব্যর্থতাকে দুষেছেন। আন্দোলনকারীদের সব দিকে নজর রাখার কথাও বলেছেন অনেকে। অবস্থানে দেখা যায় নার্সদেরও।
তবে হাসপাতাল কিছুটা ‘সচল’ হলেও পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ ছিল এ দিনও। কেমো না পেয়ে ক্যানসার রোগীদের ফিরে যেতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রোগীদের অভিযোগ, চিকিৎসকরা ছিলেন তবুও তাঁরা কেমো পাননি। উল্টে জানানো হয়েছে, কর্মবিরতি শেষ না হলে কেমো দেওয়া যাবে না। ঝাড়খণ্ডের দুমকা থেকে রাত তিনটের সময় বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ক্যানসার-আক্রান্ত মঞ্জুষা মণ্ডল। তিনি বলেন, “ট্রেনে করে সকালে বর্ধমান স্টেশনে এসেছি। তারপর বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসে কেমো বিভাগের সামনে বসেছিলাম। দুপুরে জানানো হল, ডাক্তারদের আন্দোলনের জন্যে কেমো দেওয়া হবে না।’’ মঞ্জুষাদেবীর মেয়ে আশীর্বাদি মণ্ডলের ক্ষোভ, “আমরা গরীব মানুষ, এ ভাবে হয়রানি করার কোনও মানে হয়! আবার দু’সপ্তাহ পরে আসতে হবে।’’ সিউড়ির কাছে সদাইপুর থেকে গাড়ি ভাড়া করে কেমো নেওয়ার জন্যে এসেছিলেন ধীরেন কর্মকার। অভিযোগ, তাঁকেও ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর সঙ্গে থাকা আশা কর্মকারের কথায়, “ডাক্তারকে মারধর সমর্থন করি না। যাঁরা দোষী তাঁদের শাস্তির দাবি করছি। কিন্তু আমাদের মতো রোগীকে বিপদে ফেলা কি ঠিক হচ্ছে?”
আবার এ দিনই দু’জন মরণাপন্ন রোগীর অস্ত্রোপচার করে সুস্থ করে তুলেছেন হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের চিকিৎসকেরা। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহা বলেন, “হাসপাতালে পরিষেবা সবাই মিলে ঠিক রেখেছি, এই ঘটনা তারই প্রমাণ। কেমো কেন দেওয়া যায়নি, খোঁজ নিয়ে বলতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy