Advertisement
E-Paper

হারাচ্ছে ঘেঁটু পুজো, সঙ্গে তার গানও

বুধবার ফাল্গুনের সংক্রান্তির দিনটাকে ঘেঁটু সংক্রান্তিও বলে। এই সময় রাস্তার ধারে দেখা যায় ঘেঁটু ফুলের। রাঢ় বাংলায় কয়েক বছর আগেও এই দিনে সন্ধ্যায় ঘেঁটু গান গাওয়ার রেওয়াজ ছিল।

ঘেঁটু ফুল নিয়ে পাড়ায় খুদেরা। বর্ধমানে। নিজস্ব চিত্র

ঘেঁটু ফুল নিয়ে পাড়ায় খুদেরা। বর্ধমানে। নিজস্ব চিত্র

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৩ ০৮:১১
Share
Save

‘‘ঘেঁটু গাই, ঘেঁটু গাই, গৃহস্থ বাড়ি। খোস পাঁচড়া করে দৌড়াদৌড়ি।’’

‘‘আয়রে ঘেঁটু নড়ে হাতির পিঠে চড়ে/ হাতির পিঠে গুরগুড়ি বাজে/ তা সইতে ভোঁদড় নাচে।’’

কয়েক বছর আগেই গ্রামবাংলায় এমন গান শোনা যেত। তবে এখন আর কদর নেই। কালের স্রোতে হারিয়ে যেতে বসেছে ঘেঁটু গান।

বুধবার ফাল্গুনের সংক্রান্তির দিনটাকে ঘেঁটু সংক্রান্তিও বলে। এই সময় রাস্তার ধারে দেখা যায় ঘেঁটু ফুলের। রাঢ় বাংলায় কয়েক বছর আগেও এই দিনে সন্ধ্যায় ঘেঁটু গান গাওয়ার রেওয়াজ ছিল। দু-তিন আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু করত পাড়ার ছেলেমেয়েরা। দাদু, ঠাকুমারা মুখে মুখে যে গান গাইতেন, কাগজে লিখেও রাখা হত তার কথা। ছড়া শেষে দুমদাম করে পেটানো হত খড়ের কাঠামো। বিশ্বাস ছিল, ঋতু বদলের সময়ের চর্মরোগ ঘেঁটুর সঙ্গেই বিদায় নেবে।

‘‘যে দেবে মুঠো মুঠো, তার হবে হাত ঠুঁটো/যে দেবে বাটি বাটি, তাঁর হবে সাত বেটি। যে দেবে কড়াই কড়াই, তার হবে ধুমসো মড়াই।’’

ছোট বেলায় শোনা ঘেঁটু গানের কথা শোনাচ্ছিলেন খণ্ডঘোষের বাসিন্দা, বিশ্বভারতী ও বেলুড় মঠের প্রাক্তনী সুকমল দালাল। তিনি বলেন, ‘‘ছোটবেলায় এই গান খুব গেয়েছি। একপাল ছেলেমেয়ের দল পাড়ায় পাড়ায় দাপিয়ে বেড়াতাম। প্রত্যেকের সঙ্গে থাকত বস্তা, থলি ও খড়ের ছোট ছোট কাঠামো। বাড়ির গৃহস্থেরা আমাদের অপেক্ষায় থাকতেন। পাওনা চাল, ডাল দিয়ে পরে আমরা এক দিন সকলে মিলে জমিয়ে পিকনিক করতাম।’’ মাঝেমধ্যে নিজেদের মতো করে বাক্য পরিবর্তন করে নিয়ে ছড়াও বানাতেন, দাবি তাঁর। তিনি শোনান, ‘‘ঘেঁটু এল, ঘেঁটু এল গৃহস্ত বাড়ি/ চাল দাও গো তাড়াতাড়ি।’’

লোকসংস্কৃতি গবেষকেরা জানান, ঘন্টাকর্ণ পুজো থেকেই এই গানের সৃষ্টি। ঘেঁটুর ভাল নাম ঘন্টাকর্ণ বা ঘন্টাকক্ষ। তিনি শিবের অনুচর। ঋতু পরিবর্তনের সময়ে নানা ধরনের চর্মরোগের হাত থেকে মুক্তির প্রার্থনা এই পুজোর মূল উদ্দেশ্য ছিল। এখনও গ্রামাঞ্চলে অনেক জায়গায় ঘেঁটুকে ‘চর্মরোগের দেবতা’ বলা হয়। ঘেঁটু পুজো বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভাবে হয়। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন কিউরেটর রঙ্গনকান্তি জানা জানান, ঘেঁটু দেবতার কোনও নির্দিষ্ট মূর্তিতে পুজো হয় না। গৃহস্থের গোবর লেপা খামারে পুজো হয়। একটি মাটির হাঁড়িকে ঘেঁটুর প্রতীক হিসেবে কল্পনা করা হয়।

দক্ষিণ দামোদর এলাকার লোকশিল্পী কার্তিক সাঁতরা, বাসুদেব মণ্ডল, জ্যোতি ঘোষেরা বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগেও রাঢ় বাংলার অনেক গ্রামে বয়স্কদের ঘেঁটুর দল ছিল। হারমোনিয়াম, খোল, করতাল, বাঁশি নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরতাম। গ্রামেগঞ্জের নানা সমস্যা, রসাত্মক, ব্যাঙ্গাত্মক নানা বিষয় নিয়ে গানও তৈরি হত মুখে মুখে। ফাল্গুনের শেষ সন্ধ্যায় সারা গ্রাম মেতে উঠত।’’ কিন্তু চর্চা এবং পরবর্তী প্রজন্মের আগ্রহের অভাবে ক্রমেই হারাচ্ছে এই গান। শিল্পীদেরপ আক্ষেপ, এখনকার ছেলেমেয়েরা তাও ঘেঁটুর নাম শুনছে। এক দিন হয়তো ঘণ্টাকর্ণের নামই ভুলে যাবে সবাই।

Traditional Rituals Bardhaman

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}