শেষ মুহূর্তে বরাত মেলার আশায় কাজ। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়
টুকটাক কাজ তাঁদের হাতে সারা বছরই থাকে। কিন্তু দুর্গাপুজো যত এগিয়ে আসে, ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। হাতে আসে পারিশ্রমিক বাবদ মোটা টাকাও। গ্রামের ছেলে থেকে বুড়ো, সবার হাসি চওড়া হয়। মহিলারাও হেঁসেল সামলে কাজে নেমে পড়েন। পুজো মরসুম মানে, পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের বনকাপাশি গ্রামে শোলা-শিল্পীদের পরিবারে এমন ছবিই দেখা যায়।
এ বার ছবিটা অনেকটা আলাদা। করোনা-কালে অন্য অনেক কিছুর মতোই তাঁদের কারবারও প্রায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে, জানাচ্ছেন শোলা-শিল্পীরা। তাঁদের দাবি, পুজোর কাজের বরাত কার্যত নেই। কয়েকহাজার শোলা-শিল্পী হতাশ হয়ে দিন কাটাচ্ছেন। প্রায় তিন কোটি টাকার কাজ এ বার মেলেনি, দাবি শিল্পীদের। তাঁরা জানান, দীর্ঘদিন এই পেশায় জড়িত থেকে এই প্রথম পুজো মরসুমে কাজের এমন অভাব হল।
কাটোয়া-বর্ধমান রোড থেকে বাঁ দিকে কিছুটা গেলেই পড়বে প্রাচীন জনপদ বনকাপাশি। গ্রামে প্রায় হাজার চারেক মানুষের বাস। তাঁদের অধিকাংশই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে শোলা-শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। নামী শিল্পী রয়েছেন অনেকেই। শিল্পকর্মের জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পাওয়া শিল্পীও রয়েছেন। বাসিন্দারা জানান, ফি বছর এই সময়ে গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ নাওয়া-খাওয়া ভুলে শোলা দিয়ে প্রতিমার নানা সাজ তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন। প্রায় ৫০-৬০টি কারখানায় দিন-রাত কাজ হয়। দিনের শেষে কাজের মান অনুযায়ী, শিল্পীরা ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন। তাঁদের দাবি, পুজোর মরসুমেই যা রোজগার হয়, তাতে সারা বছরের সংসার খরচের অনেকটা উঠে আসে।এখানকার শিল্পকর্ম শুধু রাজ্য নয়, দেশের নানা প্রান্তেও ছড়িয়ে পড়ে। চোখ জুড়নো মণ্ডপসজ্জা থেকে শুরু করে প্রতিমার অলঙ্করণ, পরতে-পরতে জড়িয়ে থাকে বনকাপাশির নাম।
সম্প্রতি গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, অন্য বারের সেই ব্যস্ততার ছিটেফোঁটা এ বার নেই। কারখানার মালিকেরা কার্যত হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন। তাঁদের দাবি, পুজো আর মাসখানেকও দূরে নেই, কিন্তু তেমন বরাত এখনও মেলেনি। তবে কোনও কোনও কারখানায় মাসিক বেতনে শিল্পীদের দিয়ে কিছু কাজ করিয়ে রাখা হচ্ছে, শেষ মুহূর্তে বরাত এসে যেতে পারে, সেই আশায়। বনকাপাশি দক্ষিণপাড়ার শোলা-শিল্পী সুমন্ত ঘোষ বলেন, ‘‘গত বছরও পুজোর সময়ে আমার কারখানা থেকে ২৫ লক্ষ টাকার কাজ হয়েছিল। ১২-১৫ জন কারিগর সকাল থেকে টানা কাজ করেও শেষ করে উঠতে পারতেন না। রাজ্যের নানা জায়গা তো বটেই, ভিন্ রাজ্যে থেকেও প্রতি বছর বরাত পাই। কিন্তু এ বার করোনার জন্য এখনও পর্যন্ত কোনও বরাত পাইনি। কী করে চলব বুঝতে পারছি না! আনাজ বিক্রি করে দিন কাটাচ্ছি।’’
শোলা-শিল্পী আশিস ঘোষ, পার্থ পাল, রতন পণ্ডিতদের দাবি, ‘‘করোনার জন্য এ বার মোট প্রায় ৩ কোটি টাকার ব্যবসা থেকে বঞ্চিত হল গ্রাম। প্রত্যেক গ্রামবাসীই এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। বরাত না থাকায় রীতিমতো আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে আমাদের।’’ কাজ না থাকায় নামী শিল্পীরাও এখন জমিতে কাজ করছেন, দাবি করেন তাঁরা।
কাটোয়ার ন’নগরের একটি বড় বাজেটের পুজোর উদ্যোক্তাদের তরফে বিকাশ সাহা জানান, তাঁরা প্রতি বছরই মণ্ডপ ও প্রতিমায় শোলার কাজ করান। তাঁর কথায়, ‘‘কিন্তু এ বার পরিস্থিতি আলাদা। বাজেটে কাটছাঁট করতে গিয়ে অনেক কিছুই বাদ দিতে হচ্ছে।’’ মঙ্গলকোটের বিধায়ক সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলেন, ‘‘করোনার জন্য নানা শিল্পেই সঙ্কট তৈরি হয়েছে। বনকাপাশির শিল্পীরাও বরাত তেমন পাচ্ছেন না বলে শুনেছি। সরকারের তরফে এই পরিস্থিতিতে রেশন-সহ নানা ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে, হাল ফেরা মুশকিল।’’ (চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy