Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Artisans of Purbasthali

সুদিন কি আদৌ ফিরবে, ‘জিআই’ তকমা পাওয়ার পরে প্রশ্ন তাঁতশিল্পীদের

তাঁত অধ্যুষিত সমুদ্রগড়, নসরৎপুর, ধাত্রীগ্রাম, শ্রীরামপুরের মতো এলাকাগুলি ঘুরে দেখা গিয়েছে, তাঁতিদের বেশির ভাগই ধারণা নেই জিআই তকমা পেলে কী সুবিধা হতে পারে।

কাজে ব্য়স্ত তাঁত শিল্পী।

কাজে ব্য়স্ত তাঁত শিল্পী। —নিজস্ব চিত্র।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:২২
Share: Save:

দেশভাগের সময়ে বাংলাদেশ ছেড়ে এসেছিলেন বহু মানুষ। তাঁদের সঙ্গেই এসেছিল টাঙ্গাইল। শিল্পীর হাতের বুননে, যত্নে সেই শাড়ি মহিলাদের জীবনের অংশ হয়ে ওঠে। এখন অবশ্য পলিয়েস্টার সুতো, যন্ত্রের বুননে রকমারি শাড়ির ভিড়ে কদর হারাচ্ছে টাঙ্গাইল। শিল্পীদের দাবি, দেড় দিন ধরে একটা শাড়ি বুনে লাভ হয় ২০ টাকা। তবে এ বার জিআই তকমা পেয়েছে নদিয়া ও পূর্ব বর্ধমান জেলার ওই শাড়ি। তাঁত শিল্পী এবং ব্যবসায়ীদের আশা, এতে শাড়ির প্রচার হবে দেশ, বিদেশে। বাড়বে ব্যবসাও।

যদিও শিল্পীদেরই অন্য অংশের দাবি, কোনও তকমায় জৌলুস ফিরবে না টাঙ্গাইলের কঙ্কালসার দশায়। পূর্ব বর্ধমান জেলায় কৃষির পরেই বেশির ভাগ মানুষ তাঁত শিল্পের উপরে নির্ভরশীল। বেশির ভাগ তাঁতশিল্পীর বাস কালনা, কাটোয়া মহকুমায়। কালনার ধাত্রীগ্রাম, সমুদ্রগড়ের তাঁতের শাড়ির সুনাম রয়েছে দেশের নানা প্রান্তে।

এক সময় জেলায় ৬০ হাজারের বেশি তাঁতশিল্পী ছিলেন। প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ ভাবে জড়িত ছিলেন আরও কয়েক লক্ষ মানুষ। তবে গত এক দশক ধরে ভাটার টান তাঁতে। তাঁতিদের দাবি, শাড়ি তৈরি করে লাভের অঙ্ক কমছে। হস্তচালিত তাঁত ছেড়ে ঋণ নিয়ে অনেকে পাওয়ারলুম কিনছেন। তার পরেও সুরাট, বেনারসের কম দামি শাড়ির সঙ্গে টক্কর দিতে পারছেন না তাঁরা। করোনার সময়েও বহু শিল্পী পুরনো পেশা ছেড়ে রাজমিস্ত্রী, ট্রেনে হকারি, ভিন্‌ রাজ্যে হোটেলের কাজে চলে যান। তার পরেও চলছে টিকে থাকার লড়াই।

বৃহস্পতিবার সামাজিক মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী টাঙ্গাইল শিল্পীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাঁত অধ্যুষিত সমুদ্রগড়, নসরৎপুর, ধাত্রীগ্রাম, শ্রীরামপুরের মতো এলাকাগুলি ঘুরে দেখা গিয়েছে, তাঁতিদের বেশির ভাগই ধারণা নেই জিআই তকমা পেলে কী সুবিধা হতে পারে।

বয়স্ক তাঁতিরা জানান, ১৯৭১ সালের পরে টাঙ্গাইল থেকে প্রচুর তাঁতশিল্পী এ দেশে আসেন। নবদ্বীপ, ফুলিয়া, সমুদ্রগড়, শ্রীরামপুর, নসরৎপুরে বাস শুরু করেন তাঁরা। এ পার বাংলার অনেকেও তাঁদের কাছে শাড়ি বোনা শেখেন। মধ্য শ্রীরামপুরের বাসিন্দা, ৭৬ বছরের তাঁতশিল্পী মহাদেব বসাক বলেন, ‘‘বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার পাতরাইল এলাকায় বাড়ি ছিল আমাদের। বাংলাদেশ-পাকিস্থান যুদ্ধের সময়ে অনেকের মৃত্যু হয়। চালের দাম বেড়ে যায়। পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাংলায় চলে আসি। টাঙ্গাইল বুনেই বাড়ি তৈরি করি। ব্যবসা বাড়ে। এখন তাঁতশিল্প ধুঁকছে। দেড় দিন ধরে একটি শাড়ি বুনিয়ে লাভ হয় মাত্র কুড়ি টাকা।’’ তাঁর দাবি, ‘‘জিআই তকমা বুঝি না। জানি না আর কোনও দিন টাঙ্গাইল শাড়ির সুদিন আসবে কি না।’’

তিনি জানান, এক সময়ে কাঁচা সুতো হাতে ডলে নরম করে নিয়ে সারা রাত জলে ভিজিয়ে রাখা হত। ভোরে ওই সুতোয় লাগানো হত বাসি ভাত, চুন এবং খইয়ের মিশ্রনে তৈরি করা আঠালো মাড়। তার পরে লাটাইয়ে জড়িয়ে তৈরি হত একশো কাউন্টের সুতো। মহাদেববাবুর ছেলে অজিত বসাক তাঁত শাড়ির নকশা করেন। তিনি বলেন, ‘‘এখন মাড় দেওয়া সুতো, যন্ত্রের নকশা দিয়ে শাড়ি হয়। পলিয়েস্টার সুতোর ব্যবহার হয় বেশি।’’ তাঁর দাবি, সাবেক পদ্ধতিতে টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি করতে পারেন এমন শিল্পীর সংখ্যা এখন হাতেগোনা। যে ক’জন বেঁচে রয়েছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো উচিত। তাহলে এই শাড়ি আরও জনপ্রিয়হতে পারে।

কালনা মহকুমা হ্যান্ডলুম অফিসার রণজিৎ মাইতি জানান, ও দেশ থেকে আসার পরবর্তী সময়ে টাঙ্গাইল জেলার শাড়ির নকশায় আরও বদল করেছেন এ পারের শিল্পীরা। সেই কারণেই এসেছেন জিআই তকমা। তিনি বলেন, ‘‘জিআই পাওয়ায় টাঙ্গাইল শাড়ির ব্র্যান্ড তৈরি হল। এতে শাড়ির বিক্রি বাড়বে।’’ পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিকের দাবি, সরকার নানা ভাবে তাঁতিদের পাশে দাঁড়িয়েছে। হ্যান্ডলুমে জিআই-এর তকমা মেলায় শিল্পীরা উপকৃত হবেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Purbasthali
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy