পোষ্যদের সঙ্গে লক্ষ্মী চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র।
সাত বছর আগে কৃষিমেলায় স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে হাতে পেয়েছিলেন একটি ছাগল ছানা। এখন তাঁর বাড়ির সর্বত্রই ছাগলের দল। দেশি ছাগল পালন করে অভাবের চাকা ঘোরানো পূর্বস্থলীর শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের চৌরঙ্গির বাসিন্দা লক্ষ্মী চক্রবর্তীর লড়াইয়ের কাহিনি জানিয়ে গ্রামীণ এলাকার মানুষকে উৎসাহিত করছে রাজ্যের প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতর।
কী সেই কাহিনি? স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২৫ বছর আগে মৃত্যু হয় লক্ষ্মীর স্বামীর। একমাত্র সন্তান সঞ্জীব তখন খুবই ছোট। মাঠের কাজ-সহ ছোট-ছোট নানা কাজ করে কোনও রকমে সংসার চালাতেন লক্ষ্মী। ২০১৫ সালে এলাকার কৃষিমেলায় স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে অনেকের সঙ্গে তিনিও পান একটি ছাগল ছানা। সেটি পালন করেই সংসারে অভাব ঘোচানো শুরু করেন।
লক্ষ্মীর কথায়, ‘‘প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী আমার হাতে ২০১৫ সালে একটি ছাগল তুলে দিয়েছিলেন। যত্ন করে ওই ছাগল পালন করি। ক্রমে বাড়তে থাকে ছাগলের সংখ্যা। এক সময়ে তা দেড়শোটিতে পৌঁছে গিয়েছিল। তবে সম্প্রতি রোগে বেশ কিছু ছাগল মারা যায়। কিছু বিক্রিও করা হয়।’’ তিনি জানান, সব মিলিয়ে এখন রয়েছে গোটা ষাটেক ছাগল। মাঝেমধ্যেই কয়েকটি বিক্রি করেন। এখন আর সংসার চালানো নিয়ে ভাবতে হয় না। তবে ছাগলের সংখ্যা বাড়ায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে পরিকাঠামো নিয়ে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ছাগলের জন্য আলাদা কোনও ঘর নেই আমার। তাই শোওয়ার ঘর, রান্নাঘর-সহ বিভিন্ন জায়গায় ওদের থাকতে দিতে হয়। শক্তপোক্ত ঘর না থাকায় রাতে ভামবিড়াল, শেয়াল মাঝেমধ্যে ছাগলছানা নিয়ে চলে যায়। বর্ষায় বৃষ্টির জল ঘরে ঢুকলেও সমস্যা হয়। সরকারি ভাবে একটি ঘর পেলে সুবিধা হবে।’’ ছাগল পালনে লক্ষ্মীকে সাহায্য করেন তাঁর ছেলে। স্থানীয় বাসিন্দা সোমশ্রী সাহা বলেন, ‘‘ছাগল পালন করতে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন উনি। ওঁকে দেখে এলাকার অনেকেই দিশা পান।’’ সম্প্রতি পূর্ব বর্ধমানে ছাগল পালনের জন্য প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতর ব্লকে-ব্লকে শিবির আয়োজন করে। সেখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় অনেককে। শিবিরগুলিতে পঞ্চাশোর্ধ্ব লক্ষ্মীর গল্প শুনিয়ে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে প্রশিক্ষণ নিতে আসা বাসিন্দাদের।
কালনা ২ ব্লকের একটি শিবিরে প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘ছাগল পালন করে শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের বিধবা লক্ষ্মী সংসারে অভাব ঘুচিয়েছে। এমন উদাহরণ সচরাচর পাওয়া যায় না। ওঁর কথা শুনিয়ে আমরা অন্যদের উদ্বুদ্ধ করছি।’’ পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিক জানান, গ্রামীণ অর্থনীতিতে পশুপালন বড় ভূমিকা নিতে পারে, তার উদাহরণ লক্ষ্মী। তাঁর ঘর তৈরির বিষয়ে স্থানীয় শ্রীরামপুর পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি সচেষ্টা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy