ক্লাবঘরেই চলছে অঙ্গনওয়াড়ি। নিজস্ব চিত্র।
কোথাও গোয়াল ঘরের স্যঁতসেঁতে পরিবেশ, আবার কোথাও খোলা আকাশই মাথার ছাদ অঙ্গনওয়াড়িগুলির। আবার যেগুলির মাথায় সত্যি ছাদ জোটে সেখানেও তা নিজের নয়, বরং কোনও ক্লাবঘরের। ফলে রোজই কখনও পোকামাকড়ের আশঙ্কায়, কখনও বৃষ্টি মাথায় দিন কাটে প্রসূতী ও খুদেদের।
বর্ধমান জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩৯টি প্রকল্পের আওতায় ৯২৭৮টি সুসংহত শিশু বিকাশ কেন্দ্র চালু রয়েছে এ জেলায়। তার মধ্যে চার হাজারের উপর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নিজস্ব কোনও ভবনই নেই। জেলা আইসিডিএস দফতরের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ৪৭৫২টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কোনও নিজস্ব ঘর নেই। এর মধ্যে ভাড়া ঘরে চলছে ৫৮২টি, প্রাথমিক স্কুলে রয়েছে ১৭৭৫টি, সরকারি জায়গায় রয়েছে ৫৮২টি এবং ব্যক্তিগত জায়গায় চলছে ১৯৪৫টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। অথচ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ভবন নির্মানের জন্য প্রয়োজনীয় দেড় কাঠা জমি স্থানীয় বাসিন্দাদের দান করতে হবে অথবা ওই কেন্দ্রের কাছাকাছি খাস জমি থাকলে সরকারের কাছে সেখানে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র গড়ার অনুমোদন নিতে হবে। তারপরে ওই খাস জমি বা দান করা জমির উপরেই তৈরি হবে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ভবন। ওই রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ৩৫০০টি কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় জমি মেলেনি। সে জন্য ওই সব অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে নতুন ভবন করার প্রস্তাবও পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। আইসিডিএস প্রকল্পের জেলা আধিকারিক অনুপম দত্ত বলেন, “ব্যক্তিগত জায়গায় যে সব অঙ্গনওয়াড়ি চলছে, সেখানে যাতে দ্রুত নতুন ভবন তৈরি হয়, সে দিকে আমরা জোর দিয়েছি।” তবে গ্রামেগঞ্জে যদিও বা জমি মিলছে, শহর এলাকায় জমি মেলার সম্ভাবনা নেই বলেই দাবি প্রশাসনের কর্তাদের। ফলে প্রাথমিক স্কুলের উপর নির্ভর করেই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চালাতে হচ্ছে। তাতে নানা রকম সমস্যার মুখোমুখিও হচ্ছেন ওই সব কেন্দ্রের সহায়িকা বা কর্মীরা। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, আসানসোল পুর এলাকায় ২৭৭টি, আসানসোলের গ্রামীণ এলাকায় ১৫৮টি ও কুলটি পুরসভা এলাকার ১৯৩টি অঙ্গনওয়াড়ির মধ্যে একটিরও নিজস্ব ঘর নেই। তাছাড়া আসানসোলের ওই দুই এলাকায় ৩৪৯টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চলে ভাড়া বাড়িতে। বর্ধমান শহরের ১৯০টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র তিনটির নিজস্ব জায়গা রয়েছে। বাকি ১৭৭টি চলে ভাড়া বাড়িতে। জায়গার অভাবে আরও ১৩টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চলছে রাস্তার ধারেই।
সরকারি আধিকারিকদের একাংশ জানান, শিশু ও প্রসূতিদের জন্য অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে পরিপূরক পুষ্টিকর খাবার তৈরি ও বিলি করাই এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। এখানে প্রসূতি ও শিশুরা পুষ্টিকর খাবার হিসাবে খিচুড়ি ও ডিম পায়। কিন্তু বেশির ভাগ অঙ্গনওয়াড়ি খোলা আকাশের নীচে কিংবা ব্যক্তিগত জায়গায় হওয়ায় প্রসূতিরা বা শিশুরা কতটা পরিপূরক পুষ্টিকর খাবার পায় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, যে খোলা জায়গায় রান্না হয়, তার পাশেই থাকে গোয়াল ঘর। কোনও কোনও জায়গায় রান্নার পাশ দিয়েই মুরগি ঘোরে, কুকুরের দল ঘুরে বেড়ায়। বর্ধমানের এক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “ভাঙা ক্লাব ঘরে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চালাতে হয়। ঘরের ফাটল দিয়ে নানা রকম পোকামাকড় বের হয়, বর্ষাকালে সাপের উপদ্রব হয়। শিশুদের দেখব না রান্না করব!” কেতুগ্রাম ১ ব্লকের একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা সান্ত্বনা দাসেরও অভিযোগ, ‘‘রান্না করার সময় গাছের পাতা থেকে মুরগির পালক উড়ে আসে। তাহলে বুঝতেই পারছেন কী রকম পরিপূরক পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়!” কাটোয়া ও কালনা শহরের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীরা একজোট হয়ে কিছু দিন আগে অভিযোগও করেছেন যে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকরা তাঁদের আলো ও পাখা জ্বালাতে ‘নিষেধ’ করেছেন। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল আসার জন্যই এ রকম ‘নিষেধ’ বলে প্রাথমিক শিক্ষকরা তাঁদের জানিয়েছিলেন। তবে বেশ কয়েকদিন গরমের মধ্যে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চলার পরে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিষয়টি মিটে গিয়েছে।
বর্ধমান জেলা পরিষদের নারী ও সমাজকল্যাণ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ পিঙ্কি সাহা বলেন, “নিজস্ব ঘর না থাকলে একটি পরিবারের যা যা সমস্যা হয়, ঠিক সেই সমস্যাগুলিই দেখা যাচ্ছে ভবনহীন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে। আমরা নির্দিষ্ট একটা পরিকল্পনা নিয়ে নতুন নতুন ভবন তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছি।”
আশ্বাস শুনে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীর মন্তব্য, ‘‘মাথায় ছাদ জোটার আগে খুদেরা বড় না হয়ে যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy