প্রতীকী ছবি।
দুই ওঝার বাড়ি ঘুরিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হল সাপের ছোবল খাওয়া এক প্রৌঢ়ের। সোমবার সকালে পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের ঘটনা। প্রশাসনের আধিকারিক ও সমাজকর্মীদের একাংশ বলছেন, সাপের ছোবল খাওয়া রোগীদের ওঝাদের পরিবর্তে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বারবার বলা হলেও, তাতে কাজ যে বিশেষ হয়নি, ওই ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মঙ্গলকোটের গোতিষ্ঠা পঞ্চায়েতের দীর্ঘসোঁয়া গ্রামের বাসিন্দা, পেশায় দিনমজুর সুবল মাজিকে (৫৫) সোমবার ভোরে কোনও বিষধর সাপ ছোবল দেয়। তাঁকে স্থানীয় এক ওঝার কাছে নিয়ে যান পরিবারের লোকজন। ওই ব্যক্তি সুবলকে ১৫ কিলোমিটার দূরে আর এক ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সুবলকে নিয়ে যাওয়া হয় দ্বিতীয় ওঝার কাছে।
মৃতের পুত্রবধূ সোনালি মাজি জানান, সুবলকে সাপে ছোবল দিয়েছিল ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ। প্রথম ওঝা তাঁকে সুস্থ করতে পারেননি। পরে, গাড়ি জোগাড় করে দ্বিতীয় ওঝার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় সকাল ৭টা নাগাদ। তখন সুবলের অবস্থা ভালই ছিল। সোনালির দাবি, ‘‘ওখানে বাবাকে কিছু একটা খেতে এবং মুখ দিয়ে টানতে দেন ওঝা। বাবা তা টানতে না পারায় ওঝা বর্ধমান হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। সেখান থেকে ৮টা নাগাদ বর্ধমান মেডিক্যালের উদ্দেশে রওনা দিই। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই বাবা মারা যান।”
স্থানীয় সূত্রে খবর, বছর দু’য়েক আগে ওই এলাকার দ্বারসিনী গ্রামের একই পরিবারের দু’জনকে সাপে ছোবল দেয়। তাঁদেরও হাসপাতালের পরিবর্তে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় ওঝার কাছে। হাসপাতালে আনতে সময় বেশি লাগায় মৃত্যু হয়েছিল তাঁদের। স্থানীয় কয়েক জন জানান, সুবলের বাড়ি থেকে গুসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং মঙ্গলকোট ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। যে ওঝার কাছে তাঁকে গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাঁর বাড়ি ১৫ কিলোমিটার দূরে। তবু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি সুবলকে।
ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (মঙ্গলকোট) জুলফিকার আলি বলেন, ‘‘বিষধর সাপ ছোবল দেওয়ার পরের এক ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওই সময়ের মধ্যে রোগীকে অ্যান্টিভেনম দিতে পারলে বিপদের সম্ভাবনা থাকে না। এখন প্রত্যেক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অ্যান্টিভেনম পাওয়া যায়। মানুষকে সচেতন হতে হবে।’’ পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক আশুতোষ পাল বলেন, ‘‘আমরা নিরন্তর প্রচার করছি। অথচ, কেন মানুষ সাপে কামড়ানো রোগীদের ওঝার কাছে নিয়ে যাচ্ছেন, তা বুঝতে পারছি না। সরকার ওঝাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে এই প্রবণতা কমবে।’’ গোতিষ্ঠা পঞ্চায়েত প্রধান নবকুমার ঘোষ বলেন, “মানুষ যাতে সাপের ছোবল খাওয়া রোগীদের ওঝার কাছে না নিয়ে যান, সে লক্ষ্যে প্রচার হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy