দাঁড়িয়ে নিশ্চয়যান। নিজস্ব চিত্র
হাসপাতালে প্রসব নিশ্চিত করার জন্য বা সদ্যোজাতদের সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে আসা-যাওয়ার জন্য চালু হয়েছিল ‘নিশ্চয়যান’। ডাক পেলেই রোগীর বাড়িতে যেতে বাধ্য ছিলেন চালকেরা। সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতরের কাছে প্রচুর বকেয়া রয়েছে অভিযোগ তুলেছেন এই যানের চালকেরা। মঙ্গলবার জেলার বিভিন্ন ব্লক বা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিশ্চয়যানের চাকা গড়ায়নি।
ওই যানের মালিকদের সংগঠন ‘অল বেঙ্গল নিশ্চয়যান অ্যাম্বুল্যান্স অপারেটর ইউনিয়ন’-এর দাবি, স্বাস্থ্য দফতর থেকে প্রচুর টাকা বাকি পড়ে রয়েছে। সে কারণে জেলায় ৩০০টির মতো নিশ্চয়যানের একটা বড় অংশ মঙ্গলবার চলেনি। ধীরে ধীরে সমস্ত যানগুলিই মালিকেরা বন্ধ রাখতে বাধ্য হবেন, দাবি তাঁদের। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ৩৭টির মতো নিশ্চয়যান রয়েছে। সেগুলি অবশ্য সবক’টিই চলেছে এ দিন। ওই সব গাড়ির মালিকদের দাবি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ও রোগীদের স্বার্থে পরিষেবা চালু রাখা হয়েছে। কিন্তু তেল কেনার টাকা জোগাড় করতে না পারলে কী ভাবে গাড়ি চলবে, সেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
ওই সংগঠনের পূর্ব বর্ধমান শাখার সভাপতি মাসুদ জাহাঙ্গিরের দাবি, “তিন মাস থেকে শুরু করে ১১ মাস পর্যন্ত টাকা বকেয়া রয়েছে। হিসেব করে দেখা গিয়েছে, স্বাস্থ্য দফতরের কাছে এই প্রকল্পে পূর্ব বর্ধমান জেলা কয়েক কোটি টাকা পাবে।’’
জেলায় নিশ্চয়যান ডাকার কেন্দ্রটিও বন্ধ রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে আশা কর্মী বা রোগী সহায়তা কেন্দ্রের মাধ্যমে ‘ভাউচার’ নিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে চালক, মালিকদের। এ দিন পাহাড়হাটিতে মেমারি ২ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র কিংবা মন্তেশ্বর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গিয়েছে, সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে গাড়িগুলি। গাড়ির গায়ে সাদা কাগজে লেখা রয়েছে, ‘৯ মাস ধরে টাকা বকেয়া রয়েছে, তেল কিনতে পারছি না’। আবার একটি গাড়িতে লেখা আছে, ‘রোগীদের অসুবিধা হচ্ছে। তেল কেনার টাকা জোগাড় হলে গাড়ি চলবে’। পাহাড়হাটির একটি নিশ্চয়যানের মালিক দীনবন্ধু ঘোষের দাবি, “ন’মাস ধরে টাকা পাচ্ছি না। স্বাস্থ্য দফতরে হত্যে দিয়ে পড়ে থেকেও টাকা আদায় করতে পারিনি। গাড়ি সারানো বা তেল কেনার পর্যন্ত পয়সা নেই।’’ মন্তেশ্বরের একটি নিশ্চয়যানের মালিক সন্দীপ গড়াইয়েরও দাবি, খরচ দ্বিগুণ হয়েছে, কিন্তু টাকা বকেয়া।
পাহাড়হাটি হাসপাতালে এক প্রসূতি সুনন্দা সরকার বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। নিশ্চয়যানে করে হাসপাতালে আসতে পারতাম। সেখানে কষ্ট করে টাকা খরচ করে আসতে হল।’’ আর এক হাসপাতালের রোগী গোলাম হোসেন শেখের দাবি, “অ্যাম্বুল্যান্সের জন্যে মাথা কুটে মরে গেলাম। কেউ বর্ধমান যেতে চাইছে না। অথচ, আমার দুধের শিশুর অবস্থা গুরুতর বলে রেফার করে দিয়েছে।’’ মন্তেশ্বরের এক আশা কর্মী কাকলি মণ্ডলেরও দাবি, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসবের একটা বড় ভূমিকা নিশ্চয়যানের। স্থানীয় মানুষজন নিশ্চয়যানকে ভরসাও করেন। সেখানে নিশ্চয়যান না চলায় এলাকার মানুষের সমস্যা হয়েছে।’’
নিশ্চয়যান প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি সিএমওইএচ ৩ জয়ব্রত দেব বলেন, “টাকা বাকি আছে এটা ঘটনা। স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়েছে। যে রকম ভাবে টাকা আসে, সে ভাবেই মিটিয়ে দেওয়া হয়।’’ রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, নিশ্চয়যানের বকেয়া নিয়ে সমস্যা থাকে। আবার মিটেও যায়। এ বারও মিটে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy