স্কুলে অশান্তির এমনই ছবি ছড়িয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।
সপ্তম, অষ্টম শ্রেণির একদল পড়ুয়া প্রধান শিক্ষককে ঘিরে ‘চোর, চোর’ বলে চিৎকার করছে। সঙ্গ দিচ্ছেন কয়েকজন সহকারী শিক্ষক, শিক্ষিকাও। একটা সময় তাঁরাও ‘চোর, চোর’ বলে পড়ুয়াদের সঙ্গে চিৎকার শুরু করেন। নিজের ঘরে চেয়ারে বসতে গেলেও প্রধান শিক্ষককে তেড়ে যান অন্য শিক্ষক।
কাটোয়ার আউরিয়া চারুচন্দ্র দত্ত বিদ্যানিকেতনের (উচ্চ মাধ্যমিক) এমনই একটি ভিডিয়ো (যা সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার মিড-ডে মিল নিয়ে প্রধান শিক্ষক তাপসকুমার ঘোষ দুর্নীতি করেছেন অভিযোগ করে লিখিত অভিযোগও করেছেন ওই স্কুলের ১৬ জন শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী। শনিবারের ওই ভিডিয়ো চাউর হতেই সরকারি স্কুলে লেখাপড়ার পরিবেশ তলানিতে ঠেকেছে দাবি করে সরব হয়েছেন শিক্ষাবিদ থেকে অভিভাবকদের একাংশ। কটাক্ষও করতে ছাড়েনি বিরোধী দলগুলি।
স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়া আউরিয়া চারুচন্দ্র দত্ত বিদ্যানিকেতনে ১৭ জন কর্মী রয়েছেন। বেশ কয়েক মাস ধরেই প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের নানা বিষয়ে বিবাদ চলছে। মূলত স্কুলে আসা যাওয়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না তাঁদের। দিন কয়েক আগে সপ্তম শ্রেণির ‘ডি’ সেকশনের ক্লাস নিতে এক শিক্ষিকা দেরি করেন। অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক ওই ক্লাসের পড়ুয়াদের না কি বলে আসেন, যে ক্লাসে শিক্ষিকা দেরি করে এলে ভিতর দিক থেকে টেবিল দিয়ে দরজা আটকে রাখতে। ওই শিক্ষিকা ক্লাসে ঢুকতে না পেরে চরম অপমানিত হয়ে অন্য শিক্ষকদের ঘটনাটি জানান। অভিযোগ, এর প্রতিশোধ নিতেই নাকি অন্য শিক্ষকেরা মিড-ডে মিলের বরাদ্দ প্রধান শিক্ষক চুরি করে নিচ্ছেন বলে পড়ুয়াদের তাতিয়ে তোলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আউরিয়া গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, “স্কুলে শিক্ষকেরা নিজেদের অশান্তির জন্য ছোট ছোট পড়ুয়াদের ব্যবহার করছেন। পড়ুয়ারা যদি অন্য শিক্ষকদের প্রশ্রয়ে প্রধান শিক্ষককে চোর বলে ডাকে তাহলে শ্রদ্ধার জায়গা নষ্ট হয়ে যায়। শিক্ষকেরা একে অপরের দিকে তেড়ে যাচ্ছেন বলেও দেখা গিয়েছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি।’’
প্রধান শিক্ষক তাপসকুমার ঘোষের দাবি, “শিক্ষকেরা নিজের খেয়াল খুশি মতো স্কুলে আসেন। আমি তা নিয়ে প্রতিবাদ করেছিলাম। এতেই সহকারী শিক্ষকেরা একজোট হয়ে আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে পড়ু্য়াদের ব্যবহার করেছেন। মিড-ডে মিল নিয়ে কোনও দুর্নীতি হয়নি।’’ তাঁর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের বিষয়ে কিছু জানা নেই বলেও দাবি তাঁর। পাল্টা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিযোগকারী শিক্ষকদের দাবি, ‘‘প্রধান শিক্ষক দুর্নীতিগ্রস্ত, মিড-ডে মিলের হিসাব দেন না। অর্ধেক করে ডিম দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদ করায় ক্ষোভে এ সব বলছেন তিনি।’’ দেরি করে আসার অভিযোগও মানেননি তাঁরা।
পূর্ব বর্ধমান জেলা (কাটোয়া সাংগঠনিক) বিজেপি সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “নিন্দনীয় ঘটনাটি সমাজমাধ্যমে দেখেছি। এর তদন্ত হওয়া দরকার। তৃণমূলের জমানায় প্রতিটি স্কুলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। শিক্ষকদের কোনও সম্মান নেই।’’ কাটোয়ার প্রবীণ সিপিএম নেতা অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “শিক্ষাক্ষেত্রে এমন নৈরাজ্য সব জায়গাতেই চলছে। এটা তৃণমূলের জমানাতেই সম্ভব।” যদিও জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনাটি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। স্কুলের অভ্যন্তরীন বিষয় নিয়ে বিরোধীদের রাজনীতি করা ঠিক নয়।”
কাটোয়া মহকুমা সহকারী স্কুল পরিদর্শক (উচ্চ মাধ্যমিক) অনুপ চক্রবর্তী বলেন, “স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও অন্য সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ করা হবে।’’ এ দিন ব্লক অফিস, স্কুল পরিদর্শকের অফিস থেকে স্কুলে গিয়ে ঘটনার তদন্ত করা হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy