Advertisement
E-Paper

কুম্ভে মৃত্যু, নগদে ক্ষতিপূরণে বিতর্ক

ফোনে এক ব্যক্তি নিজেকে উত্তরপ্রদেশ সরকারের প্রতিনিধি বলে দাবি করেন। তিনি জানান, তাঁরা সুলজাদের বাড়ি যাচ্ছেন। কিছু ক্ষণ পরে সুলজার বাড়ির সামনে একটি গাড়ি এসে দাঁড়ায়।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫ ০৮:৫৬
Share
Save

কুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মৃত এক ব্যক্তির পরিবারকে উত্তরপ্রদেশ সরকারের তরফে ‘ক্ষতিপূরণ’ দেওয়া হয়েছে নগদে। তা-ও আবার কোনও সরকারি নথি ছাড়াই! নগদ-প্রাপ্তির স্বীকারোক্তি স্বরূপ কাগজে সই করিয়ে নিয়েছেন উত্তরপ্রদেশ সরকারের ‘প্রতিনিধি’। মৃতের পরিবারের এই দাবি ঘিরে শোরগোল পড়েছে জামুড়িয়ায়।

সরকারি ক্ষতিপূরণের টাকা চেকের মাধ্যমে দেওয়াই দস্তুর। এ ক্ষেত্রে অন্যথা হল কেন, টাকার উৎস কী, কেনই বা গোপনে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হল, প্রশ্ন উঠেছে।

কুম্ভমেলায় পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছিল কেন্দা রুইদাসপাড়ার বাসিন্দা বিনোদ রুইদাসের। তাঁর স্ত্রী সুলজা শুক্রবার দাবি করেন, গত ১৯ মার্চ সকালে তাঁর পরিবারের এক সদস্যের কাছে একটি ফোন আসে। ফোনে এক ব্যক্তি নিজেকে উত্তরপ্রদেশ সরকারের প্রতিনিধি বলে দাবি করেন। তিনি জানান, তাঁরা সুলজাদের বাড়ি যাচ্ছেন। কিছু ক্ষণ পরে সুলজার বাড়ির সামনে একটি গাড়ি এসে দাঁড়ায়। গাড়িটির নম্বর প্লেট উত্তরপ্রদেশের। গাড়ি থেকে তিন জন নেমেছিলেন। তাঁদের দু’জন ছিলেন পুলিশের পোশাকে। অন্য জন সাদা পোশাকে। সাদা পোশাকে থাকা ব্যক্তি সুলজাকে জানান, তাঁরা উত্তরপ্রদেশ সরকারের তরফে ‘ক্ষতিপূরণের’ অর্থ দিতে এসেছেন। এর পরে সুলজার হাতে নগদ পাঁচ লক্ষ টাকা দেন তিনি।‌ একটি কাগজে তাঁরাই লেখেন‌, ‘৫ লক্ষ টাকা পেলাম’।‌ সেই কাগজে সুলজাকে সই করিয়ে নেন তাঁরা। বিনোদের বাবা ও মা কাগজে আঙুলের ছাপ দেন।

সুলজার দাবি, ‘‘যিনি টাকা দিয়েছেন, তিনি বলেছেন, এটা প্রথম কিস্তি।‌ এ ভাবে ২৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে।‌ আমরা এই টাকার সরকারি নথি চেয়েছিলাম। ওরা দিতে চায়নি। আমরা জানিয়ে দিয়েছি, আমাদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের জন্য ওদের বাবার (বিনোদের) ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার ব্যবস্থা করুক উত্তরপ্রদেশ সরকার।‌ ওটা জরুরি।‌ এ ভাবে নগদ টাকা আমরা নেব না।‌’’ তিনি জানান, ওই টাকা ব্যাঙ্কে জমা দিতে গিয়ে‌ টাকার উৎস সম্পর্কে ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের বিস্তর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁদের।‌ টাকার উৎস তাঁদের জানা নেই।‌ চেকের মাধ্যমে অথবা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর অনুরোধ করেছেন তিনি।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর প্রশ্ন, ‘‘কোনও সরকারি নথি ছাড়া এ ভাবে চোরের মতো নগদ টাকা গোপনে কেউ দিয়ে যেতে পারে! কারা এসেছিলেন তা জানতে তদন্ত প্রয়োজন।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক ‌গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘বিজেপি আর অস্বচ্ছতা মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। সরকার না মাফিয়া, কার টাকা দেওয়া হল, কোনও প্রমাণ নেই।‌ আদতে মৃতের পরিবারকে অপমান করা হল।‌ ডেথ সার্টিফিকেট দিলে স্বচ্ছতা প্রমাণিত হবে।‌’’ বিজেপির রাজ্য কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য জিতেন্দ্র তিওয়ারির দাবি, বিনোদের দেহ আসার পরে তিনি তাঁদের বাড়িতে গিয়েছিলেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বিনোদের স্ত্রীর কথা বলিয়ে দিয়েছিলেন। পরে শুভেন্দু উত্তরপ্রদেশের মুখ্যসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।‌ তাঁর কথায়, ‘‘এতে প্রমাণ হল বিজেপি পরিচালিত উত্তরপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে কুম্ভে মৃতদের পরিবারগুলিকে বঞ্চনা করার অভিযোগ মিথ্যা।‌’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jamuria Uttar Pradesh

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}