দাঁইহাটের বাসিন্দা রাহুল বণিক জানেনই না যে তাঁর ‘বিয়ে’ হয়ে গিয়েছে! শুধু তা-ই নয়। সরকারি নথি এ-ও বলছে, তাঁর একটি ‘মেয়েও’ রয়েছেন। তিনি আবার রাহুলের থেকে বয়সে এক বছরের বড়! সরকারি সেই নথি হল ভোটার তালিকা।
গত বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরে দলীয় কর্মিসভায় তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, ভোটার তালিকায় ভুয়ো নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে সব নাম খুঁজে বার করতে একটি কমিটিও গড়েছে তৃণমূল। তার পরেই ভোটার তালিকা নিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছেন দলের নেতা, মন্ত্রী, বিধায়কেরা। দাঁইহাটের একটি বুথের ভোটার তালিকায় দেখে চোখ কার্যত কপালে উঠেছে কাটোয়ার তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের।
দাঁইহাট শহর কাটোয়া বিধানসভার অন্তর্গত। শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বাস রাহুল বণিকের। বছর তেত্রিশের রাহুল এখনও অবিবাহিত। ওই ওয়ার্ডে ১৬৮ নম্বর পার্টের ভোটার তালিকার ৪৪৬ নম্বরে নাম রয়েছে পায়েল ভাটিয়া নামে জনৈক এক মহিলার। তালিকায় তাঁর বয়স লেখা হয়েছে ৩৪। আর বাবার নামের জায়গায় রয়েছে রাহুলের নাম। শুক্রবার দলীয় কার্যালয়ে ভোটার তালিকা খতিয়ে দেখার সময়ে বিষয়টি নজরে আসতেই সন্দেহ হয় বিধায়কের। দলীয় কর্মীদের খোঁজ নিতে বলেন তিনি। তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, রাহুল এখনও বিয়েই করেননি। তাঁর পরিবারে পায়েল ভাটিয়া নামে কোনও সদস্য নেই। তবে কী করে ওই নাম এল ভোটার তালিকায়? খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, বছর ছয়েক আগে রাহুলের বোনের কাছে এসেছিলেন পায়েল ভাটিয়া নামে চণ্ডীগড়ের বাসিন্দা তাঁর এক বান্ধবী। তার পরেই বছর চৌত্রিশের পায়েলের নাম উঠে গিয়েছে ভোটার তালিকায়।
এত দিন বিষয়টি জানতেন না রাহুলও। জানতে পেরে আকাশ থেকে পড়েন তিনি। রবিবার বিস্মিত রাহুল বলেন, ‘‘আমি এখনও বিয়েই করলাম না। অথচ, আমার মেয়ে রয়েছে! সে-ও আবার আমার থেকে এক বছরের বড়! তালিকা দেখে আমি হতবাক হয়ে গিয়েছি।” তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এত দিন বিষয়টি প্রশাসনের নজরে পড়ল না কেন।’’
তালিকায় ভুয়ো নাম দেখেই সুর চড়িয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর দাবি, “ওই এলাকার বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) বিজেপি পরিবারের সদস্য। তাই, ভোটে জিততে ভুয়ো ভোটারের নাম তালিকায় ঢুকিয়ে বিজেপি এই চক্রান্ত করছে। প্রশাসনকে জানিয়েছি।”
যদিও সংশ্লিষ্ট বিএলও সুজাতা ঘোষালের দাবি, “কী করে ভোটার তালিকায় ওই নাম উঠল তা বলতে পারব না। ব্লক প্রশাসন দেখুক।” বিজেপির কাটোয়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “প্রশাসন তৃণমূলের। আর ভুয়ো ঢোকাচ্ছে বিজেপি! তৃণমূলের এই মিথ্যা অভিযোগ শুনে ঘোড়াও হাসবে।” বিডিও (কাটোয়া ২) আসিফ আনসারি বলেন, “বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)