ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। অথচ তা জানতেই পারেননি গ্রাহকেরা! এ ভাবেই প্রতারণা জাল বিস্তার করেছিলেন ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। অভিযোগ পাওয়ার পর সেই ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে গ্রেফতার করল পূর্ব বর্ধমানের ভাতার থানার পুলিশ।
জানা গিয়েছে, ভাতার থানার সুকান্তপল্লির বাসিন্দা অয়ন ঘোষের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে। অয়নের মায়ের ক্যানসার। চিকিৎসার জন্য টাকা চাই। তাই ব্যাঙ্কে লোনের জন্য গিয়েছিলেন পূর্ব বর্ধমানের ওই যুবক। অভিযোগপত্রে অয়ন জানান, তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। মায়ের চিকিৎসার জন্য টাকা ছিল না তাঁর কাছে। তাই অগত্যাই ঋণ নেবেন বলে ঠিক করেছিলেন। সেই সময় ভাতার থানার নতুনগ্রামের এক জনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তিনি অয়নকে জানান, একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের বর্ধমান শাখা থেকে ঋণের ব্যবস্থা করিয়ে দেবেন।
ঋণের জন্য অয়নকে জানানো হয়, তিনি যদি আরও কয়েক ঋণগ্রাহক জোগাড় করে দেন তবে, ‘প্রসেসিং ফি’ দিতে হবে না তাঁকে। আলাপ করানো হয় ব্যাঙ্কের ম্যানেজার সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। অভিযোগ, সেই সময় তাঁকে এবং আরও কয়েক জন ঋণপ্রার্থীদের থেকে কয়েকটি কাগজে সই করিয়ে নেওয়া হয়। এমনকি, ওই ব্যাঙ্কে তাঁদের নামে ‘কারেন্ট অ্যাকাউন্ট’ও খোলা হয়। তবে তাঁদের নামের এটিএম কার্ড, চেক বই ব্যাঙ্কের এক জনের কাছেই জমা রাখতে হয়। তার পর ঋণ বাবদ ওই ব্যাঙ্ক থেকে ৫০ হাজার টাকা তোলেন অয়ন। তখনও তিনি বোঝেননি প্রতারণার জালে ফেঁসে গিয়েছেন।
মাস খানেক পর অয়ন জানতে পারেন, তাঁদের অ্যাকাউন্ট অন্য এক জন ব্যবহার করছেন। সেই অ্যাকাউন্টগুলিতে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। তার পরই অয়ন এবং অন্যান্য ঋণগ্রহীতারা তাঁদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার জন্য সোমনাথকে বলেন। অভিযোগ, তাঁদের কথা কানেই তোলেননি ম্যানেজার। এমনকি, তাঁদের ব্যাঙ্কের লেনদেন সংক্রান্ত নথি দিতেও অস্বীকার করেন সোমনাথ। তার পরই অয়ন গত বছরের মে মাসে আদালতে মামলা করেন।
বর্ধমান আদালতের সিজেএম অয়নের মামলায় অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত শুরুর নির্দেশ দেন ভাতার থানার ওসিকে। তদন্তে নেমে আট মাস পর শনিবার অভিযুক্ত ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে ঝাড়খণ্ডের রাঁচী থেকে গ্রেফতার করে ভাতার থানার পুলিশ। ট্রানজিট রিমান্ডে তাঁকে বর্ধমানে আনা হয়। বর্ধমান আদালতে হাজির করানো হলে ভারপ্রাপ্ত সিজেএম অভিযুক্তের চার দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেছেন।