বর্ধমানের বেলারানি হাইস্কুলে। —নিজস্ব চিত্র।
উদাহরণ ১: বর্ধমান শহরের বেলারানি প্রাথমিক স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়ার সংখ্যা ২৯। তাদেরকে ক্লাস করতে হয় স্কুলের ছাদে!
উদাহরণ ২: বর্ধমান শহরেরই আঞ্জিরবাগান প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে ৩৩ জন। তাদের জন্য বরাদ্দ হয়েছে দ্বিতীয় শ্রেণির ঘরটি। আর দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়াদের ঠাঁই হয়েছে বারান্দায়।
এমন অজস্র উদাহরণ ছড়িয়ে রয়েছে পূর্ব বর্ধমানে। জেলায় যে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির পড়াশোনা চালু হয়েছে, তার অধিকাংশই পরিকাঠামো সমস্যায় ভুগছে বলে দাবি শিক্ষক সংগঠনগুলির। রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে পড়ুয়াদের বারান্দায় বা ফাঁকা জায়গায় ক্লাস করাতে হচ্ছে শিক্ষকদের। ফলে পঞ্চম শ্রেণির আসন সংখ্যা অনুযায়ী ভর্তি করানোর ‘সাহস’ পাচ্ছেন না শিক্ষকেরা।
শিক্ষক সংগঠনগুলির দাবি, তাড়াহুড়ো করে প্রাথমিকে পঞ্চম শ্রেণির অন্তর্ভুক্তি নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছিল। এ বার জেলা শিক্ষা দফতরের এক রিপোর্টে পরোক্ষে তাকেই মান্যতা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি। সেখানে বলা হয়েছে, জেলার ২৮০টি প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি চালু হলেও, অনেক স্কুলেই ন্যূনতম পরিকাঠামো নেই।
এ নিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান মধুসূদন ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘ওই রিপোর্ট সর্বশিক্ষা অভিযানের রাজ্যের অধিকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, অনেক স্কুলই পঞ্চম শ্রেণির জন্য নতুন ঘর পাবে।’’
খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, পঞ্চম শ্রেণি চালু হয়েছে এমন অনেক প্রাথমিক স্কুলেই অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ নেই। অভাব রয়েছে প্রয়োজনীয় শিক্ষকেরও। রাজ্যের প্রাথমিক নির্দেশ আসার পরে, পরিস্থিতি বুঝতে অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকদের (এসআই) কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছিল জেলা শিক্ষা দফতর। সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলিতে শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা কত, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আলাদা শৌচালয় রয়েছে কি না, এ সব জানাতে বলা হয়েছিল। সেই রিপোর্ট জমা পড়েছে জেলায়, খবর শিক্ষা দফতরের।
রায়না ২ ব্লকের একটি প্রাথমিক স্কুল পঞ্চম শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে। টিনের চালের ওই স্কুল ছেড়ে ফি বছর প্রায় ৫০ জন পড়ুয়া লাগোয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। আর ওই প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে থেকে যায় হাতে গোনা কয়েক জন। স্কুলের এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘শ্রেণিকক্ষ-সহ অন্য পরিকাঠামোর অভাবে পড়ুয়াদের ধরে রাখতে পারি না।’’
শিক্ষক সংগঠন ‘উস্তি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর নেতা রাজীব দত্তের দাবি, ‘‘প্রয়োজনীয় শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষের অভাবে অনেক স্কুল পঞ্চম শ্রেণিতে ছাত্র ভর্তি করাচ্ছে না।’’ এবিপিটিএ-র জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব নন্দী বলেন, ‘‘পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য বারবার শিক্ষা দফতরকে বলা হয়েছে।’’ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সহ-সভাপতি উজ্জ্বল মণ্ডলের দাবি, ‘‘অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষের জন্য বারবার পরিকল্পনা ও নকশা করে জমা দেওয়া হয়েছে। সেই কাজের জন্য বারবার বাড়তি টাকা যাচ্ছে প্রধান শিক্ষকদের পকেট থেকে। কিন্তু অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ আর হচ্ছে না!’’
জেলা প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শক (ডিআই) স্বপন দত্ত বলেন, ‘‘প্রায় ১৪০০টি স্কুলের পরিকাঠামো উন্নতির কথা বলা হয়েছে। অনেকগুলি স্কুলে অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy