Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
AIIMS

এমসে প্রবেশ সরস্বতীর

ইন্টারনেট দূর অস্ত্, বাড়িতে নেই স্মার্টফোনই। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ঝাঁ চকচকে ক্লাসঘর দেখা হয়নি মাহির। কিন্তু সব খামতি ঢেকে, বাড়িতে ১৯ ঘণ্টা পড়াশোনা করে ‘নিট’ পরীক্ষায় সফল হয়েছেন তিনি।

মেয়ে মাহি রজককে মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন মা মিনা। নিজস্ব চিত্র

মেয়ে মাহি রজককে মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন মা মিনা। নিজস্ব চিত্র

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:১৪
Share: Save:

অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দেওয়া এক চিলতে ঘর, দুর্গাপুরের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের দেশবন্ধুনগরে। সেখানেই বাবা, মা, দাদার সঙ্গে থাকেন মাহি রজক ওরফে সরস্বতী। বাবা নিত্যানন্দ বন্ধ বেসরকারি কারখানার শ্রমিক। বর্তমানে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে গ্যাসের আভেন মেরামতির কাজ করেন। তবে নিজের বাড়িতে রান্না হয় কাঠের উনুনেই। কঠোর দারিদ্রের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করে এই বাড়ির মেয়ে সরস্বতী চললেন দিল্লি এমসে ডাক্তারি পড়তে। তা উপলক্ষে শনিবার প়়ড়শি ও অন্যরা ভিড় জমিয়েছেন সরস্বতীকে শুভেচ্ছা জানাতে।

ইন্টারনেট দূর অস্ত্, বাড়িতে নেই স্মার্টফোনই। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ঝাঁ চকচকে ক্লাসঘর দেখা হয়নি মাহির। কিন্তু সব খামতি ঢেকে, বাড়িতে ১৯ ঘণ্টা পড়াশোনা করে ‘নিট’ পরীক্ষায় সফল হয়েছেন তিনি। দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির অন্যতম দিল্লির এমসের কাউন্সেলিংয়ের তিন রাউন্ড পরীক্ষাতেও সেরা ফল করেছেন তিনি।

বাড়িতে অভাব। তবু ছেলেমেয়েকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন নিত্যানন্দ আর তাঁর স্ত্রী মিনা। দাদা মিঠুনও স্নাতক পড়ার পরে, মাহির স্বপ্ন সফল করতে নিজে পড়াশোনাছেড়ে দিয়েছেন।

সরস্বতীর পড়াশোনা পাড়ার শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে। সগড়ভাঙা হাইস্কুল, ডিপিএল ওল্ড গার্লস হাইস্কুল থেকে পরবর্তী পড়াশোনা। রানিগঞ্জ টিডিবি কলেজে উদ্ভিদবিদ্যা নিয়ে স্নাতক হন। কিন্তু চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নটা যে পিছু ছাড়েনি। এই স্বপ্ন দেখাটা শুরু হয়েছিল ছোট থেকেই। মাহি জানান, তিনি তখন একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। কার্যত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয় দিদার। মাহি বলেন, “তখনই সিদ্ধান্ত নিই, চিকিৎসক আমাকে হতেই হবে। গরিব মানুষ যাতে কোনও ভাবেই টাকার অভাবে মারা না যান, এটাইআমার লক্ষ্য।”

স্নাতক হওয়ার পরে ২০২১-এ নিটে বসেন তিনি। র‌্যাঙ্ক হয় প্রায় এক লক্ষের কাছাকাছি। কাউন্সেলিংয়ে রায়পুর মেডিক্যাল কলেজে সুযোগ মেলে। কিন্তু ১২ লক্ষ টাকা খরচ শুনে পিছিয়ে আসেন মাহি। শুরু হয় ফের জোর প্রস্তুতি।তিনি জানান, প্রথাগত কোনও প্রশিক্ষণ না থাকায় সেবার ওএমআর শিটে বহু উত্তর নির্দিষ্ট বৃত্তের বাইরে পড়ে গিয়েছিল। নম্বর কাটা যায়। ২০২২-এর নিটে তফসিলি জাতির সংরক্ষিত তালিকায় ছ’হাজারের মধ্যে র‌্যাঙ্ক হয়।

এই সাফল্যের জন্য পরিবারের সবার পাশাপাশি, স্কুলের শিক্ষকদের বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মাহি। শিক্ষকদের কেউ ‘ফি’ দিয়েছেন, কেউ বিনা পয়সায় টিউশন পড়িয়েছেন।

বাবা নিত্যানন্দ বলেন, “আমাদের টাকা ছিল না। কিন্তু মেয়ের লড়াই ছিল অকল্পনীয়। ও সফল হল।” মিনাও বলছেন, “অনেকে অনেক কটাক্ষ করেছেন। চাঁদ যেন আমার ঘরে এসেছে।” তবে নিত্যানন্দ ও মিনা দু’জনেই মেয়েকে জানিয়েছেন, তাঁরা গরিব। চিকিৎসক হয়ে মেয়ে যেন গরিবদের পাশেই থাকে।

এ দিন সকালে মাহিকে সংবর্ধনা জানাতে যান সিপিএম নেতা পঙ্কজ রায় সরকার। তিনিও বলেন, “সরস্বতীর লড়াইকে ‘স্যালুট’! আমরা ওঁকে সম্মান জানানো ছাড়া, আর কি-ই বা করতে পারি।”

অন্য বিষয়গুলি:

AIIMS Durgapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy